180822

ব্যবসায়ী হত্যা: বনানীতে দুই মিনিট ৪৫ সেকেন্ডের কিলিং মিশন (ভিডিও)

 

মাত্র দুই মিনিট ৪৫ সেকেন্ডের কিলিং মিশন। সন্ধ্যা ৭টা ৪৯ মিনিট ২২ সেকেন্ডে প্রথমে মাথায় হ্যাট, ফুলহাতা শার্ট এবং টিশার্ট ও চশমা পরিহিত দুই যুবক প্রথমে বনানী ৪ নম্বর সড়কের ১১৩ নম্বর বাড়িতে প্রবেশ করে।

৭টা ৪৯ মিনিট ৫০ সেকেন্ডে চারতলা ওই ভবনের প্রধান ফটক দিয়ে প্রবেশ করে চোখে চশমা ও মাস্ক পরা আরও দুই যুবক। মাত্র দুই মিনিট ৪৫ সেকেন্ড, অর্থাৎ ঘড়িতে যখন ৭টা ৫২ মিনিট ৭ সেকেন্ড তখন পুনরায় প্রধান ফটক দিয়ে একে একে বের হয়ে যায় ওই চার যুবক। এরই মধ্যে নিচতলার মেসার্স এস মুন্সী ওভারসিজে ঘটে গেছে ভয়ংকর সব ঘটনা। খুনিরা রিক্রুটিং এজেন্সির মালিক মো. সিদ্দিক হোসেনের মৃত্যু নিশ্চিত করে আরও তিনজনকে খুব কাছে থেকে গুলি করে চলে যায়। ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীরা ভিডিও ফুটেজের ওই যুবককে হত্যাকারী হিসেবে চিহ্নিত করেছেন বলে নিশ্চিত করেছে পুলিশ ও একাধিক সূত্র। এরই মধ্যে সম্ভাব্য চার খুনির ছবি দেশের সব কটি বিমানবন্দর, স্থলবন্দর ও সমুদ্রবন্দরে সরবরাহ করেছে পুলিশ।

এরা যাতে কোনোভাবে দেশ ছেড়ে পালাতে না পারে এ জন্যই এ উদ্যোগ বলে জানিয়েছেন গুলশান বিভাগের সহকারী কমিশনার (এসি) রফিকুল ইসলাম। অনুসন্ধানে জানা গেছে, হত্যাকাণ্ডটি এতটাই নিখুঁত ছিল যে, ১১৩ নম্বর বাড়ির বাইরে দায়িত্বরত দারোয়ান বায়েজিদ বাজী কোনো কিছু বুঝতেই পারেননি যে ওই ভবনের নিচতলায় রক্তের হোলি খেলেছে দুর্বৃত্তরা। একজনের মৃত্যু নিশ্চিত করে এবং তিনজনকে গুলি করে বীরদর্পে বেরিয়ে যায় তারা। খুনি চারজনের মধ্যে তিনজন নিহত সিদ্দিকের অফিসে প্রবেশ করে। একজন দাঁড়িয়ে ছিল অফিসের মূল দরজার সামনে। ভয়ংকর ওই ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীদের একজন আলী হোসেন। তিনি এস মুন্সী ওভারসিজের স্টাফ। এ প্রতিবেদককে তিনি বলেন, ‘ঘটনার আগে আমি বসকে পেয়ারা এবং পানি দিই।

এ সময় তিনি তার কক্ষে একাই ছিলেন। পাশের কক্ষে ছিলাম আমরা ৮-৯ জন। হঠাৎ এক যুবক অফিসে ঢুকে বস কে জানতে চায়। কক্ষ দেখিয়ে দিলে আগন্তুক কোনো অনুমতি ছাড়াই বসের কক্ষে ঢুকে যায়। তার পেছনে ছিল আরও দুই যুবক। তারা আমাদের কক্ষে ঢোকে। কোনো কিছু বুঝে ওঠার আগেই তারা গুলি করতে থাকে। মিশন শেষ করে অল্প সময়ের মধ্যেই তারা চলে যায়। ’ তিনি বলেন, ‘বসের কক্ষে ঢুকে দেখি তিনি চেয়ার থেকে পড়ে গেছেন। ’ একপর্যায়ে হাউমাউ করে কাঁদতে শুরু করেন আলী হোসেন। নৃশংস এ ঘটনায় নিহতের স্ত্রী জ্যোত্স্না বেগম বাদী হয়ে বনানী থানায় মামলা করেছেন।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বনানী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আবদুল মতিন। তিনি বলছেন, ঘটনাস্থল থেকে সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়েছে। ফুটেজ যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। ফুটেজে চারজন মুখোশধারীকে ওই প্রতিষ্ঠানে ঢুকে এলোপাতাড়ি গুলি করতে দেখা গেছে। মঙ্গলবার রাতের ঘটনার পরপরই স্থানীয়রা গুলিবিদ্ধ চারজনকে নিয়ে যান গুলশানের ইউনাইটেড হাসপাতালে। সেখানে চিকিৎসকরা সিদ্দিককে মৃত ঘোষণা করেন। প্রতিষ্ঠানের আহত তিন কর্মচারী মুখলেস, মোস্তাক ও পারভেজ ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। হত্যাকাণ্ডটিকে ‘পরিকল্পিত’ উল্লেখ করে এসি রফিকুল বলেন, নেপথ্য কোনো কারণ এখনো জানা যায়নি। তবে পারিবারিক, ব্যবসায়িক সব দিকই তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।

প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছে এটি একটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। সিসিটিভির ঘড়ির সময় ছয় মিনিট স্লো ছিল। গতকাল বিকেলে সিদ্দিকের মরদেহের ময়নাতদন্ত হয়েছে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান সোহেল মাহমুদ বলেন, একটি গুলি সিদ্দিকের বুকের বাঁ দিক দিয়ে ঢুকে ডান অংশে আটকে ছিল। আরেকটি গুলি তার হাত ফুঁড়ে বেরিয়ে গেছে। ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গে উপস্থিত ছিলেন সিদ্দিকের ভাই আবদুল লতিফ, ছিলেন হোসাইন আহমেদ ও জাফর নামে সিদ্দিকের প্রতিষ্ঠানের দুই কর্মচারী। হামলার সময় হোসাইন ও জাফর সেখানেই ছিলেন। আবদুল লতিফের কাছে ভাইয়ের হত্যার কারণ জানতে চাইলে তিনি কিছু বলতে পারেননি। হামলার বর্ণনা দিয়ে জাফর বলেন, ‘চারজন মুখোশধারী ঢুকেই ক্যাশ কোথায় জানতে চায়।

আমাদের মধ্যে কেউ একজন বলেন, টাকা ব্যাংকে জমা থাকে। এ কথা শুনে দুর্বৃত্তরা বকাবকি শুরু করে এবং একটি গুলি করে। কিন্তু (পিস্তল বা রিভলবার থেকে) গুলি বের হয়নি। পরে আবার তারা এলোপাতাড়ি গুলি ছুড়ে চলে যায়। ’ নিহত সিদ্দিক টাঙ্গাইল কালিহাতীর পাড়ক্ষি মধ্যপাড়ার আনছার আলীর ছেলে। স্ত্রী জ্যোত্স্না বেগম, দুই মেয়ে সাবরিনা সুলতানা ও সাবিহা সিদ্দিক এবং ছেলে মেহেদী হাসানকে নিয়ে উত্তরা পূর্ব থানা এলাকায় থাকতেন সিদ্দিক।

 

https://www.youtube.com/watch?v=aujDn0rxoAg

ad

পাঠকের মতামত