বাবা-মা হাসপাতালে, অসুস্থ তরুণীকে নিয়ে নাটক
বাবা-মা হাসপাতালে। মেয়েও ভুগছেন জ্বরে। গতকাল বুধবার শহরের একটি হোটেল থেকে ওই তরুণীকে চলে যেতে বলার অভিযোগ নিয়ে নাটক চলল প্রায় ৮ ঘণ্টা। যার সমাপ্তি হল রাত ৮টার পরে। বাবা-মাকে নিয়ে এসে ওই হোটেলেই পরিবারটির থাকার ব্যবস্থা করলেন কলকাতা পৌরসভার চেয়ারপারসন মালা রায়।
অভিনয়শিক্ষার একটি প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হওয়ার অডিশন দিতে বাবা-মাকে নিয়ে শহরে এসেছিলেন হুগলির হরিপালের তরুণী চন্দ্রিনী চট্টোপাধ্যায়। গত ৪ নভেম্বর তাঁরা টালিগঞ্জের প্রতাপাদিত্য রোডের ওই হোটেলে ওঠেন। পর দিন অসুস্থ পড়েন চন্দ্রিনীর মা শিপ্রা। তাঁকে ভর্তি করানো হয় কে পি সি মেডিকেল কলেজে।
১০ নভেম্বর মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ হওয়ায় বাঘাযতীন এলাকার একটি নার্সিংহোমে ভর্তি করানো হয় চন্দ্রিনীর বাবা জ্যোতির্ময়কে। তিনি পেশায় ডাকঘরের এজেন্ট। বাবা-মায়ের চিকিৎসা করাতে গিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন চন্দ্রিনীও। বাবা-মায়ের চিকিৎসার খরচ, হোটেলের বিল মেটাতে খরচ হয়ে যায় প্রায় সব টাকা। এদিনই হোটেল ছেড়ে দেওয়ার কথা ছিল চন্দ্রিনীর। কিন্তু এই পরিস্থিতিতে তিনি কোথায় যাবেন! দিশাহারা তরুণী বন্ধুদের ফোন করলেও সাহায্য মেলেনি। আত্মীয় বলতে মাসি। তাঁর সঙ্গেও সম্পর্ক খারাপ।
চন্দ্রিনী বলেন, ‘টাকা নেই। হোটেল ছেড়ে চলে যাওয়ার জন্য চাপ দিচ্ছেন কর্তৃপক্ষ। আমি আরো তিনদিন থাকতে চাই। আরও কিছু অডিশন রয়েছে। তার মধ্যে কিছুটা সামলে নিতে পারব।’ ওইদিন দুপুরে বেশ কয়েকঘণ্টা ঘরে ঢুকে দরজা আটকে দেন চন্দ্রিনী। হোটেল কর্তৃপক্ষ খবর দেন টালিগঞ্জ থানায়। পুলিশ এসে কথা বলে তরুণীর সঙ্গে। এরপর বিকেলে শুরু হয় হোটেলত্যাগের তোড়জোড়।
পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়, স্বেচ্ছায় ওই হোটেল ছাড়তে চাইছেন চন্দ্রিনী। তিনি নাকি স্বেচ্ছায় বাঘাযতীনে একটি গেস্ট হাউসে উঠে যেতে চাইছেন। যদিও তরুণী বলেন, ‘আমাকে হোটেল ছাড়তে জোর করা হচ্ছে। আমি কোথায় যাব?’ এ বিষয়ে জানতে চাইলে হোটেলের ব্যবস্থাপক অমিতাভ বসুর বলেন, ‘আমরা কোনো চাপ দেয়নি। বরং ওই তরুণীর চিকিৎসার ব্যবস্থা আমরাই করেছিলাম।’
চন্দ্রিনী-হোটেল কর্তৃপক্ষ ও পুলিশের এই টানাপড়েন বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা পর্যন্ত চলতে থাকে। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছান স্থানীয় কাউন্সিলর মালা। চন্দ্রিনীর সঙ্গে কথা বলেন তিনি। ততক্ষণে খবর পেয়ে হুগলির ভাণ্ডারহাটি থেকে সেখানে পৌঁছেছেন তরুণীর দুই প্রতিবেশীও। মালা কথা বলেন হাসপাতাল ও নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষের সঙ্গে। জানা যায়, চন্দ্রিনীর বাবা-মা দু’জনেই কিছুটা সুস্থ। কিন্তু বাড়ি নিয়ে যাওয়ার কেউ নেই। মালা উদ্যোগী হয়ে জ্যোতির্ময় ও শিপ্রাকে হোটেলে আনার ব্যবস্থা করেন।
তিনি বলেন, ‘শহরে অনেক ঘটনাই ঘটে। শুনলাম, একলা মেয়েকে ট্যাক্সিতে তুলে দেওয়া হচ্ছিল। এটা হতে পারে না। নিরাপত্তার প্রশ্নে হস্তক্ষেপ করেছি। বাবা-মাকে ডিসচার্জ করিয়ে আনার ব্যবস্থা করেছি। এখানে দু-একদিন একসঙ্গে সকলে থাকবেন। তারপর বাড়ি ফেরানোর ব্যবস্থা হবে।’