180662

আলোচনায় নতুন প্রধান বিচারপতি

নিউজ ডেস্ক : সুরেন্দ্র কুমার সিনহার (এস কে সিনহা) পদত্যাগপত্র গ্রহণ করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। রাষ্ট্রপতির প্রেস সচিব মো. জয়নাল আবেদীন গতকাল এ তথ্য জানিয়েছেন।

গতকাল সন্ধ্যায় এস কে সিনহার পদত্যাগসংক্রান্ত কাগজপত্র আইন মন্ত্রণালয়ে পৌঁছেছে বলে জানিয়েছে মন্ত্রণালয়সূত্র। পদত্যাগের গেজেট প্রকাশের সব ধরনের প্রস্তুতি প্রায় সম্পন্ন হয়েছে। যে কোনো সময় গেজেট প্রকাশ হতে পারে বলে আইন মন্ত্রণালয়সূত্রে জানা গেছে।

সংবিধান অনুসারে প্রধান বিচারপতি নিয়োগ রাষ্ট্রপতির একক এখতিয়ার। নতুন প্রধান বিচারপতি নিয়োগ নিয়ে এখন পর্যন্ত বঙ্গভবনের কোনো তৎপরতা নেই। এ ব্যাপারে রাষ্ট্র ও সরকারের শীর্ষ পর্যায় কোনো তাড়াহুড়ায় যেতে চায় না বলে দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে।

তবে সে পর্যন্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি মো. আবদুল ওয়াহ্হাব মিঞা দায়িত্ব পালন করে যাবেন। উচ্চ পর্যায়ের সূত্রমতে, শেষ পর্যন্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতির প্রতিই আস্থা রাখতে পারেন রাষ্ট্রপতি।

সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় নিয়ে ক্ষমতাসীন দলের সঙ্গে সম্পর্কের টানাপড়েনের মধ্যে এক মাসের ছুটি নেন এস কে সিনহা। পরে তিনি অস্ট্রেলিয়ায় মেয়ের কাছে চলে যান। ১১ নভেম্বর তিনি প্রধান বিচারপতির পদ থেকে পদত্যাগ করেন।

দেশের ২২তম প্রধান বিচারপতি কে হবেন— তা নিয়ে জল্পনা-কল্পনা শুরু হয়ে গেছে। সংবিধান অনুযায়ী প্রধান বিচারপতি নিযুক্ত করার ক্ষমতা কেবল রাষ্ট্রপতির। আইনমন্ত্রী আনিসুল হক ও অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলমও একই কথা বলেছেন।

বিচারক নিয়োগসংক্রান্ত সংবিধানের ৯৫ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে : ‘(১) প্রধান বিচারপতি রাষ্ট্রপতি কর্তৃক নিযুক্ত হইবেন। সংবিধানের ৪৮ (৩) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, ‘এই সংবিধানের ৫৬ অনুচ্ছেদের (৩) দফা অনুসারে কেবল প্রধানমন্ত্রী ও ৯৫ অনুচ্ছেদের (১) দফা অনুসারে প্রধান বিচারপতি নিয়োগের ক্ষেত্র ব্যতীত রাষ্ট্রপতি তাহার অন্য সকল দায়িত্ব পালনে প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ অনুযায়ী কার্য করিবেন।’

এ ছাড়া সংবিধানের ৯৬ (১) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘এই অনুচ্ছেদের অন্যান্য বিধানাবলীসাপেক্ষে কোনো বিচারক সাতষট্টি বৎসর বয়স পূর্ণ হওয়া পর্যন্ত স্বীয় পদে বহাল থাকিবেন। ’

সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে বিচারপতি ছিলেন মোট নয়জন। এর মধ্যে গত ১ জানুয়ারি বিচারপতি মোহাম্মদ বজলুর রহমান চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। বাকি আটজনের মধ্যে বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা ৭ জুলাই ও বিচারপতি মো. নিজামুল হক ১৪ মার্চ অবসরে যান। আর এস কে সিনহা পদত্যাগ করেছেন।

এখন আপিল বিভাগে রয়েছেন পাঁচজন বিচারপতি। এর মধ্যে আপিল বিভাগে জ্যেষ্ঠতার ক্রমানুসারে বিচারপতি মো. আবদুল ওয়াহ্হাব মিঞা ২০১৮ সালের ১০ নভেম্বর পর্যন্ত অবসরে যাওয়ার বয়সসীমা রয়েছে। এ ছাড়া জ্যেষ্ঠতার ক্রমানুসারে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছেন বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন। তিনি ২০২১ সালের ৩০ ডিসেম্বর অবসরে যাবেন।

প্রধান বিচারপতির পদত্যাগ অশনি সংকেত —ড. মোশাররফ : প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার পদত্যাগপত্র গ্রহণকে ‘অশনিসংকেত’ হিসেবে অভিহিত করে এর তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে বিএনপি।

দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেছেন, ‘প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহাকে নজিরবিহীনভাবে, ন্যক্কারজনকভাবে জোর করে পদত্যাগ করানো হয়েছে। রাষ্ট্রপতি নাকি পদত্যাগপত্র গ্রহণও করেছেন।’

তিনি বলেন, ‘এটা অশনিসংকেত, জাতির জন্য কলঙ্কজনক। সর্বোচ্চ উচ্চ আদালতে যে নজিরবিহীন খারাপ একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করা হলো তা বাংলাদেশের মানুষ কখনো গ্রহণ করেনি, করবেও না। আমরা এর তীব্র প্রতিবাদ জানাই। ’

গতকাল জাতীয় প্রেস ক্লাবে জাতীয়তাবাদী কৃষক দলের উদ্যোগে ‘জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস’ উপলক্ষে এক আলোচনা সভায় তিনি এ মন্তব্য করেন। এ সময় তিনি কৃষক দলকে সাংগঠনিকভাবে আরও শক্তিশালী হওয়ার আহ্বান জানান।

পদত্যাগে বাধ্য করেছে সরকার —রিজভী : গতকাল দুপুরে কুড়িগ্রামে নিজ বাসভবনে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী আহমেদ বলেছেন, প্রধান বিচারপতিকে জোর করে পদত্যাগে বাধ্য করেছে সরকার।

তিনি বলেন, সরকার নিজেদের ইচ্ছা পূরণে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে দমন করার জন্য এখন আদালতকে ব্যবহার করছে। সরকার দেশকে কসাই খানায় পরিণত করছে। বিডি প্রতিদিন

ad

পাঠকের মতামত