ভালোবাসার সম্পর্কটি ভেঙে যাবার পর কখনোই করবেন না যে কাজগুলো!
সকল অনুভূতির মাঝে প্রিয় মানুষটাকে ভালোবাসার অনুভূতিটা সবচাইতে চমৎকার। প্রেম-ভালোবাসা চলাকালীন সময়ে মনে হতে থাকে আনন্দ যেন সপ্ত আকাশ ছুঁয়ে দিচ্ছে। কিন্তু একদম অনাকাঙ্ক্ষিতভাবেই কোথা থেকে কারো কারো জীবনে সমস্যার ঘনঘটা এসে ভিড় করে। ভালোবাসার আকাশে এসে জড়ো হতে থাকে রাগ, অভিমান, অবিশ্বাস, সন্দেহ, মনোমালিন্যের কালো মেঘ। দীর্ঘ সময় ধরে এই সমস্যার মেঘগুলোকে সরানোর চেষ্টা করতে করতেই, একটা সময় পরে আর সম্ভব হয় না যেন। হুট করেই চলে আসে সম্পর্কের ইতি।
সম্পর্ক শেষ হয়ে গেলেও তার রেশ রয়ে যায় নিজের মাঝে খুব বেশী পরিমাণে। যার কারণে সম্পর্ক না থাকলেও মনের মাঝে থেকে যায় পুরনো স্মৃতি, ভালোবাসা ও মায়া। বাস্তবতা এক্ষেত্রে বড় নিষ্ঠুর। সম্পর্ক ভেঙে যাবার পর আবেগের বশে অনেকেই এমন কিছু তুচ্ছ কাজ করে ফেলেন যেটা করা কখনোই উচিৎ নয়। নিজের সুখের জন্য, ভবিষ্যৎ এর জন্য ও আত্মসম্মান বোধের জন্য এমন সকল কাজ থেকে নিজেদের বিরত রাখা উচিৎ যেগুলো নিজের ব্যক্তিত্বের জন্য ক্ষতির কারণ হয়ে দেখা দিতে পারে।
ভালোবাসা পাবার জন্য আকুতি প্রদর্শন
সম্পর্ক ভেঙে যাবার পরেও অনেকেই তার পূর্বের সঙ্গীর কাছ থেকে ভালোবাসা কিংবা তার কাছ থেকে মনোযোগ পাবার জন্য চেষ্টা করে থাকেন। যেটা খুবই বাজে একটি কাজ। আবেগের আতিশয্যে অনেক সময় বোঝা যায় না, যে কাজটি করা হচ্ছে সেটা কী ভুল না ঠিক! একটা সময় পরে কষ্টভাব এবং আবেগ কমে গেলে এই কাজের জন্য নিজের মাঝেই অনুশোচনা দেখা দেবে প্রবলভাবে। তাই সম্পর্ক ভেঙ্গে যাবার ব্যাপারটিকে বোঝার চেষ্টা করতে হবে, সেটা মেনে নিতে হবে। একজন মানুষ জীবন থেকে চলে যাওয়া মানেই জীবন ভালোবাসা শূন্য হয়ে যাওয়া নয়! তাই কোনোভাবেই তার কাছ থেকে ভালোবাসা পাবার আকুতি নিজের মাঝে ধারণ করা ও সেটা প্রকাশ করা যাবে না।
একাকী থাকা
এই সময়গুলোতে মোটেও একা থাকা যাবে না। বরং আরো বেশি করে বিভিন্ন ধরণের কর্মকান্ডের সাথে নিজেকে সংযুক্ত করতে হবে। নিজের সকল বন্ধু, কলিগ কিংবা পরিবারের সাথে বেশী করে সময় কাটানো শুরু করতে হবে। কারণ সম্পর্ক ভেঙে যাবার পরে খুব স্বাভাবিকভাবেই নিজেকে একা মনে হবে। যার ফলে মনঃকষ্ট দেখা দেবে। যে কারণে একা না থেকে খুশি থাকুন। স্বাধীনভাবে সিঙ্গেল জীবনের আনন্দকে উপভোগ করতে শুরু করুন।
নিজের আবেগের সাথে যুদ্ধ করা
খুব স্বাভাবিকভাবে সম্পর্ক ভেঙে যাবার পরবর্তী সময়গুলোতে প্রবল মানসিক কষ্টের মুখোমুখি হতে হবে। চূড়ান্ত মানসিক কষ্টের ফলে একইসাথে মনে মাঝে অনেকগুলো আবেগের ভলে মিশ্র এক বিরক্তিকর আবেগ তৈরি হবে। রাগ, জেদ, অভিমান, হতাশা, ভয়, দন্দ, বিষণ্ণতার মতো নেতিবাচক অনুভুতিগুলো একে একে মাথাচাড়া উঠতে শুরু করবে যেন। তাই যখনই খুব বেশী মানসিক কষ্ট দেখা দেবে, সকল অনুভূতিগুলোকে বের করে দেবার জন্য কাঁদুন। যতক্ষণ খুশি কাঁদুন, কেঁদে নিজেকে হালকা করুন। কোনোভাবেই আবেগকে চাপা দিয়ে রাখবেন না। এতে করে কষ্ট বাড়তে থাকে। তবে একটা কথা মনে রাখতে হবে, কোন একটা বিষয়ের কথা মনে করে শুধুমাত্র একবারই কান্নাকাটি করা যাবে। কারণ, একই কৌতুক শুধুমাত্র প্রথবার শুনেই আমরা হাসি, দ্বিতীয়বার সেটা আমাদের হাসাতে পারে না। তবে কেনো একই কষ্টের কথা মনে করে একবারের বেশী কান্নাকাটি করা!
ফোনকল অথবা মেসেজ দেওয়া
সম্পর্ক শেষ হয়ে যাবার পর প্রাক্তন ভালোবাসার মানুষকে বারবার ফোনকল দেওয়া কিংবা অকারণে ম্যাসেজ দেবার মতো কাজ করা থেকে যথাসম্ভব বিরত থাকতে হবে। এমন সকল কাজের মাধ্যমে শুধুমাত্র নিজের বেপরোয়া ভাবই প্রকাশ পায় না, নিজের ব্যক্তিত্বের উপরে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে যায়।
নিজের স্ট্যান্ডার্ডে কোন ছাড় নয়
নিজেকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়াটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তবে নিজেকে এগিয়ে যাওয়া মানে কোনোভাবেই এই নয় যে, একদম খামখেয়ালী হয়ে ওঠা। যথেচ্ছভাবে নিজেকে ও নিজের জীবনকে পরিচালিত করা। অনেকেই একটি সম্পর্ক শেষ হয়ে যাবার সাথে সাথেই খুব দ্রুত অন্য আরেকটি সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন। কোন চিন্তাভাবনা না করে, বিচার-বিবেচনা না করেই আরেকটি সম্পর্কে জড়িয়ে পড়া অনেকাংশেই ভুল সিদ্ধান্ত হয়ে থাকে। বরং এই সময়ে নিজেকে সবচাইতে বেশী সময় দেওয়া প্রয়োজন। নিজেকে স্থির করা প্রয়োজন। তার সাথে সবচাইতে জরুরি ব্যাপার হলো, কোনোভাবেই নিজের জীবনযাত্রার মান, নিজের ব্যাক্তিত্বের ধরণের সাথে ছাড় দেওয়া যাবে না।
প্রাক্তন ভালোবাসার মানুষের উপহার রেখে দেওয়া
একদম সহজ ও সরল কথায় বললে- তার দেওয়া সকল উপহার একসাথে জড়ো করুন এবং ফেলে দিন। জ্বি, ঠিক এই কাজটাই করা উচিৎ যখন আপনার সম্পর্কটি ভেঙে গেছে। অনেকে ভাবতে পারেন, কয়েকটি জিনিস রেখে দিলে কিবা এমন হবে। ভুলটা এখানেই! প্রাক্তন ভালোবাসার মানুষটির সাথে সম্পর্কিত যেকোন কিছুই বর্তমান সময়কে কষ্টকর করে তুলতে পারে। তার দেওয়া উপহার মানেই পুরনো স্মৃতি, আর পুরনো স্মৃতি মানেই মনঃকষ্ট। অহেতুক মনঃকষ্টকে ঘরে পুষে রাখার কোন প্রয়োজন আদৌ আছে কী? না নেই!
সকল কিছুর উর্দ্ধে নিজেকে ভালোবাসা শিখতে হবে। নিজের প্রতি যত্নবান হতে হবে। যিনি নিজেকে ভালোবাসেন, তিনি কখনোই এমন কোন কাজ করবেন না যাতে তার ক্ষতি হবে।
সূত্র: প্রিয়