180225

বিদেশে থেকেই পদত্যাগ দুই কারণে

অবসরের সময়সীমার দুই মাস ২০ দিন আগেই পদত্যাগ করতে হলো প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহাকে। কী কারণে তাঁকে বিদেশে বসেই এভাবে বিদায় নিতে হলো তা নিয়ে আইন অঙ্গনসহ বিভিন্ন মহলে আলোচনা হচ্ছে।

প্রধান বিচারপতি তাঁর পদত্যাগপত্রে কী লিখেছেন তা জানা সম্ভব হয়নি। তবে আইনজ্ঞসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, কার্যত দুটি কারণে তাঁকে বিদেশে থেকে এভাবে বিদায় নিতে হয়েছে। প্রথমত, তাঁর বিরুদ্ধে ১১টি অভিযোগ ওঠার পরিপ্রেক্ষিতে আপিল বিভাগের অন্য পাঁচ বিচারপতি তাঁর সঙ্গে এজলাসে বসে বিচারকাজ পরিচালনা করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। দ্বিতীয়ত, দেশে ফিরে পদত্যাগ করলে কিংবা নির্ধারিত সময় পর্যন্ত নিজ পদে আসীন থাকলে তাঁকে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) মুখোমুখি হতে হতো। ফলে আবার তাঁর বিদেশে যাওয়া অনিশ্চয়তার মুখে পড়ার শঙ্কা ছিল।
প্রধান বিচারপতির পদত্যাগের ফলে তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ অনুসন্ধান করার পথ সহজ হবে দুদকের পক্ষে। তাঁর পদত্যাগপত্র গৃহীত হয়েছে—রাষ্ট্রপতির দপ্তর থেকে এটা বলার পরই কেবল দুদক তাঁর বিরুদ্ধে অনুসন্ধানে নামতে পারবে। তবে পদত্যাগপত্র গৃহীত না হওয়া পর্যন্ত তাঁর বিরুদ্ধে দুদকের কোনো পদক্ষেপ গ্রহণে আইনগত বাধা রয়েছে।

এ বিষয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘দুর্নীতি, অনিয়ম, নৈতিক স্খলনের অভিযোগ ওঠার পর একজন বিচারপতির আর সম্মান নিয়ে থাকার কিছু থাকে না।

তারপর যদি সহকর্মীরা তাঁর সঙ্গে বসে বিচারকাজ পরিচালনা করতে অস্বীকৃতি জানান, তাহলে এর চেয়ে অপমানজনক আর কিছু হতে পারে না। প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার ক্ষেত্রে এ ঘটনাই ঘটেছে। এ কারণে বিচারপতি এস কে সিনহার সামনে পদত্যাগ করা ছাড়া আর কোনো পথ খোলা ছিল না বলে মনে করি। ’
সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘সুপ্রিম কোর্টের পক্ষ থেকে একটি বিবৃতি দেওয়া হয়েছে। সেই বিবৃতি গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। সেটা আমরা দেখেছি। সেখানে প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার বিরুদ্ধে ১১টি অভিযোগ তোলা হয়েছে। এ কারণে তাঁর সহকর্মীরা তাঁর সঙ্গে বসে বিচারকাজ পরিচালানা করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। এ অবস্থায় তাঁর উচিত ছিল দেশে ফিরে অভিযোগগুলো মোকাবেলা করা; কিন্তু তিনি তা না করে বিদেশে থেকে পদত্যাগ করলেন। এ থেকে ধরে নেওয়া যায় যে অভিযোগগুলোর কিছু না কিছু সত্যতা রয়েছে। তাই বিচারপতি এস কে সিনহা পদত্যাগ করেছেন বলে মনে করি। ’

বিচারপতি এস কে সিনহার বিরুদ্ধে দুদক তদন্ত করতে পারবে কি না জানতে চাইলে ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ বলেন, রাষ্ট্রপতি যে মুহূর্ত থেকে বিচারপতি এস কে সিনহার পদত্যাগপত্র গ্রহণ করবেন, এর পর থেকে তিনি আর বিচারপতি পদে আসীন নেই বলে ধরে নিতে হবে। তাই এখনই তাঁর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তদন্ত করা যাবে কি না তা বলার সময় হয়নি। তবে আইন অনুযায়ী বিচারক পদে আসীন থাকাবস্থায় তদন্ত করা যাবে না। আর সাবেক একজন বিচারপতির বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তদন্তে কোনো আইনগত বাধা নেই।

দেশের ২১তম প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার ১০ নভেম্বর বা এর কাছাকাছি সময়ে দেশে ফেরার কথা থাকলেও তিনি ফিরবেন কি না সে নিয়ে বেশ কিছুদিন ধরেই জল্পনা-কল্পনা ছিল। গতকাল শনিবার তাঁর পদত্যাগপত্র রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠানো হয়েছে। রাষ্ট্রপতি গতকালই তা গ্রহণ করেছেন। আগের দিন শুক্রবার প্রধান বিচারপতি সিঙ্গাপুরে ক্যান্সারের চিকিৎসা করিয়ে কানাডার উদ্দেশে যাত্রা করেন। এর আগেই তিনি পদত্যাগপত্রে সই করে সিঙ্গাপুরে বাংলাদেশ দূতাবাসে পাঠান। গতকাল দূতাবাস থেকে সেটি পাঠানো হয়েছে রাষ্ট্রপতির দপ্তরে। দেশের কোনো প্রধান বিচারপতির পদত্যাগ এটিই প্রথম।

দায়িত্বের মেয়াদ শেষ হওয়ার দুই মাস ২০ দিন আগেই পদত্যাগ করলেন এস কে সিনহা নামে পরিচিত প্রধান বিচারপতি। প্রধান বিচারপতি পদত্যাগ করায় সংবিধানের ৯৫(১) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি একজন নতুন প্রধান বিচারপতি নিয়োগ দেবেন। ওই নিয়োগ না দেওয়া পর্যন্ত আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারতি মো. আবদুল ওয়াহ্হাব মিঞা প্রধান বিচারপতির দায়িত্ব পালন করবেন। সংবিধানের ৯৭ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী এরই মধ্যে বিচারপতি মো. আবদুল ওয়াহ্হাব মিয়া গত ৩ অক্টোবর থেকে এ দায়িত্ব পালন করছেন।

প্রধান বিচারপতির পদত্যাগের সংবাদ শোনার পর গতকাল দুপুরে বেইলি রোডে আইনজীবীদের এক অনুষ্ঠান দ্রুত শেষ করে বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতির দপ্তরে যান আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। সেখান থেকে ফিরে গুলশানে নিজ বাসায় এক জরুরি সংবাদ সম্মেলন করে তিনি প্রধান বিচারপতির পদত্যাগের খবর গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেন। এর আগে রাষ্ট্রপতির প্রেসসচিব মো. জয়নুল আবেদীন ওই খবর নিশ্চিত করেন গণমাধ্যমকে।

আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, প্রধান বিচারপতি অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে প্রথমে ছুটি নেন। পরে বিদেশে চলে যান। সেখান থেকে পদত্যাগপত্র পাঠান। প্রধান বিচারপতিকে পদত্যাগে বাধ্য করা হয়েছে বলে বিএনপি যে অভিযোগ তুলেছে সে সম্পর্কে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘তিনি ছুটিতে গেলে অভিযোগ করা হয়েছিল যে তাঁকে জোর করে ছুটি নিতে বাধ্য করা হয়েছিল। তিনি বিদেশ থেকে পদত্যাগপত্র পাঠিয়েছেন। সেখানে কোনো ফোর্স পাঠানো হয়নি। তাহলে পদত্যাগে বাধ্য করা হলো কিভাবে?’ আইনমন্ত্রী বলেন, ‘পানি ঘোলা নয়, অত্যন্ত স্বচ্ছ। স্বচ্ছ পানিতে মাছ শিকার করা সহজ নয়। এ নিয়ে কেউ পানি ঘোলা করবেন না। ’ বিদেশ যাওয়ার সময় প্রধান বিচারপতি বলেছিলেন, তিনি সুস্থ আছেন—এ কথা উল্লেখ করে আইনমন্ত্রী বলেন, “প্রধান বিচারপতি সিঙ্গাপুরে চিকিৎসা নিয়েছেন। গণমাধ্যমে সেটা প্রকাশ হয়েছে। তাহলে তিনি কিভাবে বলেন, ‘আমি অসুস্থ নই। সুস্থ আছি’। ”

রাষ্ট্রপতির প্রেসসচিব মো. জয়নুল আবেদীন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘প্রধান বিচারপতির পদত্যাগপত্র পাওয়া গেছে। সিঙ্গাপুরে বাংলাদেশ দূতাবাসের মাধ্যমে রাষ্ট্রপতির কাছে এ পদত্যাগপত্র পাঠানো হয়েছে। আজ (শনিবার) এটা পাওয়া গেছে। ’

সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন গতকাল বিকেলে সমিতি ভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, প্রধান বিচারপতি পদত্যাগপত্র পাঠাতে বাধ্য হয়েছেন। এ কারণে আজকের এই দিনটি বিচার বিভাগের জন্য একটি কালো দিন। বিচার বিভাগের ওপর কালো থাবা। তিনি বলেন, ১৯৮২ সালে এরশাদ সরকারের আমলে একজন প্রধান বিচারপতি এজলাসে বসেই জানতে পারেন তাঁকে অপসারণ করা হয়েছে। ওই দিনটি যেমন বিচার বিভাগের জন্য কালো অধ্যায় হিসেবে রয়ে গেছে, ঠিক আজকের দিনটিও তেমনি।

প্রধান বিচারপতি শুক্রবার কানাডার উদ্দেশে সিঙ্গাপুর ছাড়ার সময় তাঁর পদত্যাগের খবর চলে আসে দেশে। তাঁর পারিবারিক সূত্র পদত্যাগের খবর নিশ্চিত করলেও সরকারি কোনো সূত্র গত রাত পর্যন্ত তা নিশ্চিত করেনি।

জানা গেছে, প্রধান বিচারপতি সিঙ্গাপুরে অবস্থান করে সেখানকার ন্যাশনাল ক্যান্সার ইনস্টিটিউটে চিকিৎসা করান। তিনি চার দিন ছিলেন ওই হাসপাতালে। এর আগেও তিনি ওই হাসপাতালেই চিকিৎসা করিয়েছেন। চিকিৎসার জন্য তিনি অস্ট্রেলিয়া থেকে গত ৬ নভেম্বর সিঙ্গাপুরে যান। চিকিৎসা শেষে তাঁর দেশে ফেরার কথা ছিল। কিন্তু তিনি দেশে না ফিরে গত শুক্রবার সিঙ্গাপুরের স্থানীয় সময় সকাল ৮টায় কানাডার উদ্দেশে সিঙ্গাপুর ছাড়েন। তিনি কানাডায় তাঁর ছোট মেয়ে আশা সিনহার বাসায় অবস্থান করবেন। এরপর সেখান থেকে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য সফরে যাবেন তিনি।

যে কারণে সরকারের রোষানলে

উচ্চ আদালতের বিচারক অপসারণের ক্ষমতা সংসদের হাতে পুনর্বহালের বিধানসংবলিত সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ বলে হাইকোর্টের দেওয়া রায় বহাল রেখে গত ৩ জুলাই রায় দেন আপিল বিভাগ। প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার নেতৃত্বে আপিল বিভাগের সাত বিচারপতির বেঞ্চ সর্বসম্মতভাবে ওই রায় দেন। পূর্ণাঙ্গ রায় গত ১ আগস্ট প্রকাশিত হয়। মূল রায়টি লিখেছেন প্রধান বিচারপতি নিজে। ওই রায় নিয়ে সরকারি দলের সমালোচনার মুখে পড়েন প্রধান বিচারপতি। তাঁর পদত্যাগের দাবিও তোলা হয়। সরকার সমর্থক আইনজীবীরা প্রধান বিচারপতির অনুষ্ঠান বর্জন করতে আইনজীবীদের প্রতি আহ্বান জানান। তাঁরা আন্দোলনে নামেন। রায় প্রকাশের পর দুটি রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি নেতারা পাল্টাপাল্টি সংবাদ সম্মেলন করেন। সাবেক প্রধান বিচারপতি ও আইন কমিশনের চেয়ারম্যান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হকও সংবাদ সম্মেলন করে রায়ের সমালোচনা করেন। আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ রায় নিয়ে সংসদ অধিবেশনেও ব্যাপক সমালোচনা হয়। ওই রায় এবং কিছু পর্যবেক্ষণের বিষয়ে আইনি পদক্ষেপ নিতে গত ১৪ সেপ্টেম্বর জাতীয় সংসদে একটি প্রস্তাবও পাস হয়। সংসদে ওই দিন প্রায় পাঁচ ঘণ্টা আলোচনা হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও এই আলোচনায় অংশ নিয়ে রায়ের সমালোচনা করেন।

বিদেশ যাওয়ার আগে যা বলেছিলেন

গত ১৩ অক্টোবর রাতে বিমানবন্দরের উদ্দেশে রওনা দেওয়ার সময় নিজ বাসভবনের সামনে অপেক্ষমাণ গণমাধ্যমকর্মীদের প্রধান বিচারপতি বলেছিলেন, ‘আমি অসুস্থ না। আমি চলে যাচ্ছি। আমি পালিয়ে যাচ্ছি না। আবার ফিরে আসব। ’ তিনি আরো বলেন, ‘আমি একটু বিব্রত। আমি বিচার বিভাগের অভিভাবক। বিচার বিভাগ যাতে কলুষিত না হয় সে জন্যই সাময়িকভাবে যাচ্ছি। বিচার বিভাগ স্বাধীন থাকুক এটাই আমি চাই। কারো প্রতি আমার বিরাগ নেই। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, সরকারকে ভুল বোঝানো হচ্ছে। আমি আর কিছু বলব না। আমি লিখিত বক্তব্য দিচ্ছি। ’

লিখিত বক্তব্যে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘আমি সম্পূর্ণ সুস্থ আছি, কিন্তু ইদানীং একটা রায় নিয়ে রাজনৈতিক মহল, আইনজীবী, বিশেষ করে সরকারের মাননীয় কয়েকজন মন্ত্রী ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাকে নিয়ে যেভাবে সমালোচনা করেছেন, এতে আমি সত্যিই বিব্রত। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, সরকারের একটি মহল আমার রায়কে ভুল ব্যাখ্যা প্রদান করে পরিবেশন করায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমার প্রতি অভিমান করেছেন, যা অচিরেই দূরীভূত হবে বলে আমার বিশ্বাস। সেই সঙ্গে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিয়ে আমি একটু শঙ্কিতও বটে। কারণ গতকাল প্রধান বিচারপতির কার্যভার পালনরত দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রবীণতম বিচারপতির উদ্ধৃতি দিয়ে মাননীয় আইনমন্ত্রী প্রকাশ করেছেন যে দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি অচিরেই সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসনে পরিবর্তন আনবেন। প্রধান বিচারপতির প্রশাসনে দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি কিংবা সরকারের হস্তক্ষেপ করার রেওয়াজ নেই। তিনি শুধুমাত্র রুটিনমাফিক দৈনন্দিন কাজ করবেন। এটিই হয়ে আসছে। প্রধান বিচারপতির প্রশাসনে হস্তক্ষেপ করলে এটি সহজেই অনুমেয় যে সরকার উচ্চ আদালতে হস্তক্ষেপ করছে এবং এর দ্বারা বিচার বিভাগ ও সরকারের মধ্যে সম্পর্কের আরো অবনতি হবে। এটি রাষ্ট্রের জন্য কল্যাণ বয়ে আনবে না। ’

প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা গত ২ অক্টোবর এক মাসের ছুটি নেওয়ার পর তিনি তা রাষ্ট্রপতিকে অবহিত করেছিলেন। পরে তিনি বিদেশ যাওয়ার অনুমতি চেয়ে রাষ্ট্রপতির কাছে আবেদন করেন। ওই আবেদনে ১০ নভেম্বর পর্যন্ত তাঁর বিদেশে থাকার কথা উল্লেখ ছিল। ১০ নভেম্বর বা এর কাছাকাছি সময়ে তাঁর দেশে ফেরার কথা বলা হয়েছিল আবেদনে। এর পরিপ্রেক্ষিতে রাষ্ট্রপতির নির্দেশে গত ১২ অক্টোবর প্রজ্ঞাপন জারি করে আইন মন্ত্রণালয়। এতে বলা হয়, প্রধান বিচারপতি দেশে না ফেরা পর্যন্ত এবং দেশে ফিরে দায়িত্বভার গ্রহণ না করা পর্যন্ত আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি মো. আবদুল ওয়াহ্হাব মিঞা প্রধান বিচারপতির দায়িত্ব পালন করবেন।

এক মাস ৯ দিনের ছুটিতে থাকা প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা গত ১৩ অক্টোবর রাতে অস্ট্রেলিয়ার উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করেন। এর চার দিন পর তাঁর সহধর্মিণী সুষমা সিনহা অস্ট্রেলিয়ায় যান। তাঁরা অস্ট্রেলিয়ায় বড় মেয়ের বাসায় ওঠেন। পরে তিনি সিঙ্গাপুর যান।

প্রধান বিচারপতির বিরুদ্ধে দুর্নীতিসহ ১১ অভিযোগ

প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা বিদেশ যাওয়ার প্রাক্কালে তাঁর বাসভবনের সামনে গণমাধ্যমকর্মীদের কাছে যে বক্তব্য দেন তা বিভ্রান্তিমূলক হিসেবে অভিহিত করেন সুপ্রিম কোর্ট। সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল সৈয়দ আমিনুল ইসলামের সই করা এক বিবৃতিতে বলা হয়, প্রধান বিচারপতির বিরুদ্ধে দুর্নীতি, বিদেশে অর্থপাচার, নৈতিক স্খলনজনিত অভিযোগসহ সুনির্দিষ্ট ১১টি অভিযোগ ওঠার পর প্রধান বিচারপতির সঙ্গে বসে বিচারকাজ পরিচালনা করতে আপিল বিভাগের অন্য পাঁচ বিচারপতি অস্বীকৃতি জানিয়েছিলেন। এ কারণে প্রধান বিচারপতি পদত্যাগেরও সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। গত ১৪ অক্টোবর ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি মো. আবদুল ওয়াহ্হাব মিঞার সঙ্গে আপিল বিভাগের অন্য চার বিচারপতির এক বৈঠক শেষে ওই বিবৃতি দেওয়া হয়।

মেয়াদ ছিল ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত

বিচারপতি এস কে সিনহা ২০১৫ সালের ১৭ জানুয়ারি দেশের ২১তম প্রধান বিচারপতি হিসেবে শপথ নেন। ২০১৮ সালের ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত তাঁর প্রধান বিচারপতি হিসেবে দায়িত্বে থাকার কথা ছিল।

বিচারপতি এস কে সিনহার জন্ম মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জের তিলকপুর গ্রামে ১৯৫১ সালের ১ ফেব্রুয়ারি। তাঁর বাবা প্রয়াত ললিত মোহন সিনহা এবং মা ধনবতী সিনহা। বিচারপতি এস কে সিনহা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে এলএলবি পাস করার পর ১৯৭৪ সালে সিলেট জেলা জজ আদালতে আইনজীবী হিসেবে পেশা শুরু করেন। ১৯৭৮ সালে হাইকোর্টে এবং ১৯৯০ সালে আপিল বিভাগে আইনজীবী হিসেবে তালিকাভুক্ত হন। তিনি বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার আগে প্রখ্যাত আইনজীবী এস আর পালের জুনিয়র হিসেবে কাজ করেন। ১৯৯৯ সালের ২৪ অক্টোবর তাঁকে হাইকোর্ট বিভাগে এবং ২০০৯ সালের ১৬ জুলাই আপিল বিভাগে বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়।

সূত্র: কালের কন্ঠ

ad

পাঠকের মতামত