180044

বয়সে ছোট নায়কদের সঙ্গে অভিনয় করেছে যে নায়িকারা

বাংলা চলচ্চিত্রে ছবির চরিত্রের প্রয়োজনে বয়সে ছোট নায়কদের সঙ্গে অভিনয় করেছেন এমন নায়িকাদের নামের তালিকাটা বেশ লম্বা হবে। তবে অবাক করার মতো বিষয় হল, বয়সে ছোট নায়কদের নিয়েই ছবি করে রেকর্ডসংখ্যক ব্যবসা করেছেন এই নায়িকারা। আজকের লেখায় এমন কয়েকজন নায়িকাদের পরিচিত করাবো যারা বয়সে ছোট নায়কদের সাথে ছবিতে অভিনয় করেছেন।

প্রয়াত নায়করাজ রাজ্জাক দিয়ে শুরু করা যাক। নায়ক হিসেবে তাঁর প্রথম ছবি ‘বেহুলা’তেই নায়িকা সুচন্দা। ক্যারিয়ারের দিক থেকে রাজ্জাকের সিনিয়র ছিলেন সুচন্দা। ‘বেহুলা’ হিট করার পর কিন্তু এই জুটি আর পেছনে ফিরে তাকায়নি। একে একে ‘আনোয়ারা’, ‘দুই ভাই’, ‘সুয়োরানী দুয়োরানী’, ‘কুচবরন কন্যা’, ‘জুলেখা’, ‘সংসার’, ‘মনের মতো বউ’, ‘যোগ বিয়োগ’, ‘অশ্রু দিয়ে লেখা’সহ অসংখ্য ছবিতে জুটি বেঁধেছিলেন।

সুচন্দার চেয়েও সিনিয়র কবরী। ১৯৬৪ সালে ‘সুতরাং’ ছবির মাধ্যমে চলচ্চিত্রে অভিষেক তাঁর। অন্যদিকে ১৯৬৬ সালের ‘বেহুলা’ দিয়ে নায়ক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন রাজ্জাক। এই জুটির প্রথম ছবি ‘আবির্ভাব’। ছবিটি এত ব্যবসাসফল হয় যে পরে এই জুটির শিডিউল পাওয়াটাই মুশকিল হয়ে পড়ে। ‘রংবাজ’, ‘দীপ নেভে নাই’, ‘দর্পচূর্ণ’, ‘বাঁশরী’, ‘বেইমান’, ‘অবাক পৃথিবী’ ইত্যাদি ছবি তার অনন্য উদাহরণ।

কবরীর সঙ্গে জুটি বেঁধে চলচ্চিত্রে অভিষেক ঘটেছে ফারুক, উজ্জ্বল ও সোহেল রানার মতো তারকারও। ক্যারিয়ারের দিক থেকে এঁদের প্রত্যেকের সিনিয়র কবরী। ফারুকের সঙ্গে ‘জলছবি’তে অভিনয় করেন ১৯৬৫ সালে। এরপর করেন ‘সুজন সখী’। উজ্জলের প্রথম ছবি ‘বিনিময়’তেও ছিলেন কবরী। ১৯৭০ সালে মুক্তি পায় ছবিটি। ১৯৭৪ সালে মুক্তি পাওয়া সোহেল রানার প্রথম ছবি ‘মাসুদ রানা’রও নায়িকা কবরী। শিশুশিল্পী হিসেবে ক্যারিয়ার শুরু করা শাবানার নায়িকা হিসেবে অভিষেক ঘটে ১৯৬৭ সালে ‘চকোরি’তে। এই নায়িকা পরে জুটি বাঁধেন সোহেল রানা, আলমগীর, জসীমসহ আরো অনেকের সঙ্গে। বিশেষ করে আলমগীর-শাবানা ও জসীম-শাবানা জুটির ছবি মানেই ব্যবসাসফল—এই বিশ্বাস ছিল ইন্ডাস্ট্রিতে।

অভিনেতা ইলিয়াস কাঞ্চনের অভিষেক ঘটে ১৯৭৭ সালে। তত দিনে ববিতা ইন্ডাস্ট্রিতে শক্ত অবস্থান তৈরি করে নিয়েছেন। ববিতার ছবি মানেই ব্যবসাসফল। পরিচালক সুভাষ দত্ত ববিতাকে পুঁজি করেই ‘বসুন্ধরা’ ছবিতে ইলিয়াস কাঞ্চনকে নেন। এরপর ‘ডুমুরের ফুল’ ও ‘সুন্দরী’ ছবিতে দেখা গেছে তাঁদের। ববিতার সঙ্গে জুটি বেঁধেছিলেন জুনিয়র নায়ক জাফর ইকবালও। তাঁদের জুটি বেশ গ্রহণযোগ্যতা পায়। এই জুটির ‘অবুঝ হৃদয়’ ছবিটি দারুণ জনপ্রিয়। বড় বোন সুচন্দা ও ববিতা যেমন জুনিয়রদের সঙ্গে কাজ করে হয়েছিলেন সফল, তেমনি সফল হয়েছেন চম্পাও। বলা চলে তাঁর কারণেই প্রত্যাবর্তন ঘটে অভিনেতা মান্নার। এই জুটির ‘প্রেম দিওয়ানা’, ‘কাসেম মালার প্রেম’, ‘বাবার আদেশ’ ছবিগুলো দারুণ জনপ্রিয়তা পায়। মান্নাও ধীরে ধীরে তারকাখ্যাতি পেতে শুরু করেন।

অনেক জুনিয়র নায়কের সঙ্গে অভিনয় করে সফল হয়েছেন মৌসুমী। ফেরদৌস, শাকিল খান, এমনকি শাকিব খানের সঙ্গেও জুটি বেঁধেছেন। ফেরদৌস-মৌসুমীর ‘খায়রুন সুন্দরী’, শাকিল-মৌসুমীর ‘মগের মল্লুক’ ও শাকিব খানের সঙ্গে ‘তুই যদি আমার হইতিরে’ ছবিগুলো দারুণ জনপ্রিয়তা পায়। সিনিয়র নায়িকা শাবনূর, পপি, মুনমুনের সঙ্গেও জুটি বেঁধেছিলেন শাকিব খান।

শাবনূরের সঙ্গে ‘ফুল নেব না অশ্রু নেব’, ‘এক টাকার বউ’, ‘আমার প্রাণের স্বামী’, ‘বলো না কবুল’, ‘ও প্রিয়া তুমি কোথায়’সহ বেশ কিছু ব্যবসাসফল ছবি উপহার দেন। পপির সঙ্গে প্রথম ছবি ‘দুজন দুজনার’, মুনমুনের সঙ্গে প্রথম ছবি ‘বিষে ভরা নাগিন’ হিটের তকমা পায়। জুনিয়রদের সঙ্গে অভিনয় করার আগ্রহটা এই প্রজন্মের নায়িকাদের মধ্যেও লক্ষ করা যায়। ২০০৯ সালে মডেল ইমনের চলচ্চিত্রে অভিষেক ঘটে অপু বিশ্বাসের বিপরীতে। ‘এক বুক ভালোবাসা’ ছবিটি তেমন ব্যবসা করতে না পারলেও পপির সঙ্গে জুটি বেঁধে ইমন সাফল্য পান ‘গার্মেন্টস কন্যা’ ছবিতে।

পপির সঙ্গে জুটি বেঁধেছেন নিরবও। ‘চার অক্ষরের ভালোবাসা’ ছবিতে দেখা গেছে তাঁদের। এই ছবিটিও তেমন সাফল্য পায়নি। সিনিয়র নায়িকা কেয়া জুটি বেঁধেছেন এই সময়ের নায়ক সাইমনের সঙ্গে, ‘ব্ল্যাকমানি’তে। নায়িকা পূর্ণিমাও জুনিয়র নায়কদের সঙ্গে অভিনয় করেছেন। বিশেষ করে শাকিব খানের সঙ্গে ‘পরান যায় জ্বলিয়ারে’, ‘মাটির ঠিকানা’, ‘জজ ব্যারিস্টার পুলিশ কমিশনার’, ‘বাধা’ ছবিগুলো ব্যবসা করেছে। সম্প্রতি এই প্রজন্মের মাহিয়া মাহিও জুনিয়র নায়কদের সঙ্গে অভিনয় শুরু করেছেন। শিগগিরই দেখা যাবে শিবলির সঙ্গে ‘মন দেব মন নেব’ ছবিতে।

ad

পাঠকের মতামত