179762

লাশের সন্ধান করে দিল ‘মাছি’

প্রায় পরিত্যক্ত একটি বাড়ী। বাড়ীর মালিক রকিব উদ্দিন আমেরিকা প্রবাসী। তাই বাড়ীটি পুরোপুরি ফাঁকা। নিস্তব্দ নীরবতার মধ্যে খুনের পর ওই বাড়ীতে রাতের আধাঁরে মাটি চাপা দেয়া হয় বৃহধাকার এক মরদেহ।

এদিকে ৫ দিন ধরে খুঁজে পায়না পাশের বাড়ীর মৃত ছেরাজুল হকের ছেলে মোঃ খোরশদ আলম। ওই বাড়ীর ছোট ডোবার পাড়ে ভনভন করে মাছি উড়ে।

খুব সকালে খোরশেদের ছোট ছেলে ইস্রাফিল (১২) প্রবাসী রফিকের পরিত্যক্ত বাড়ী থেকে কাঁদতে কাঁদতে বের হতে দেখে পেলে বাড়ীর কেয়ারটেকার ও স্থানীয়রা। তাঁদের সন্দেহ হলে খুঁজতে থাকে লাশ।

একপর্যায়ে মাছির ভনভন শব্দ তাঁদের দেখিয়ে লাশের অবস্থান। খবর দেয়া হয় পুলিশে। পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠায়।

এ ঘটনা কুমিল্লা জেলার নাঙ্গলকোট উপজেলার রায়কোট ইউনিয়নের ছুপুয়া গ্রামের। নিহত খোরশেদ আলম (৫৫)। ওই গ্রামের মৃত ছেরাজল হকের ছেলে।

মঙ্গলবার (৭ নভেম্বর) সকাল ১১টার সময় প্রতিবেশী আমেরিকা প্রবাসী রকিব উদ্দিনের বাড়ীর ডোবার পাড়ে মাটি খুঁড়ে তাঁর লাশ উদ্ধার করা হয়।

এসময় ঘটনাস্থলে উপস্থিত থেকে লাশ উদ্ধারে তদারকি করেন উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ আকতারুজ্জামান। সাথে ছিলেন নাঙ্গলকোট থানার ওসি মোহাম্মদ আইয়ূব।

এর আগে সোমবার (৬ নভেম্বর) নিহতের মেয়ে মুরশিদা বেগম বাদী হয়ে নাঙ্গলকোট থানায় একটি সাধারণ ডাইরী (জিডি) করেছিলেন।

পারিবারিক শত্রুতার জের ধরে নিজের স্ত্রী সাজেদা বেগম মেয়ের শশুর ও পরকীয়া প্রেমিক তাজুকে সঙ্গে নিয়ে খুন করেন তাঁকে। এ ঘটনার সাথে জড়িত সন্দেহে পুলিশ ৩ জনকে আটক করে হেফাজতে নিয়েছে।

আটককৃতরা হলেন- নিহতের স্ত্রী সাজেদা বেগম (৪০), ছেলে ঈস্রাফিল হোসেন (১২), স্ত্রীর ভাগিনা পেয়ার আহাম্মদ (৩৫)।

স্থানীয় সূত্র মতে, দীর্ঘ ২৮ বছরের প্রবাস জীবন কাটিয়ে ২ বছর পূর্বে দেশে ফিরে আসেন প্রবাসী খোরশেদ আলম (৫৫)। স্বামী প্রবাস থাকার সুযোগে একই গ্রামের তাজুল ইসলামের সাথে পরকীয়া প্রেমে জড়ায় স্ত্রী সাজেদা বেগম (৪৫)। পরকীয়ার প্রেমিকের মন খুশি রাখতে স্বামীর উপার্জিত বেশ কয়েক লক্ষ টাকা ধার দেয় প্রেমিক তাজুকে।

স্বামী বাড়ী আসার সময় হয়েছে জানিয়ে টাকা ফেরত চায় সাজেদা। কিন্তু টাকা দিতে নারাজ তাজু। স্বামীকে টাকার হিসেব দেয়ার উপায় খোঁজে। কিন্তু চোখের সামনে শুধুই অন্ধকার। রাতের অভিসারে দু’জনে মিলে ফন্দি আঁটে।

তাদের আরো ঘনিষ্ট হতে খোরশেদের মেঝো মেয়ে রশিদাকে বিয়ে দিবেন তাজুর ছেলে ওমর ফারুকের সাথে। এভাবেই তাজু হাতিয়ে নেয় ১৭ লক্ষ টাকা। খোরশেদ বাড়ীতে এসে উপার্জিত টাকার হিসেব পায়না।

এ নিয়ে পরিবারে কলহ চলছে। একই সাথে তাজুর পাওনা টাকা আদায়ে দেন দরবারও চলছে। সর্বশেষ গ্রামের সালিশদাররা মিলে আগামী ১৭ নভেম্বর শালিস বৈঠকের তারিখ নির্ধারণ করেছিল। পরিনামে লাশ হতে হয় খোরশেদ।

এদিকে, মঙ্গলবার সকালে হত্যার ঘটনা ফাঁস হওয়ার সাথে সাথে পরকীয়া নাগর তাজুল ইসলাম ও মেয়ে মুরশিদা বেগম গা ঢাকা দেন। তাদেও গ্রেফতারে পুলিশের তৎপরতা বাড়ানো হয়েছে বলে পুলিশ সূত্রে জানা গেছে।

এ দিকে খুনিদেরকে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তামূলক শাস্তির দাবীতে স্থানীয় এলাকাবাসী বিক্ষোভ মিছিল করেছেন।

স্থানীয় ইউপি সদস্য একরাম ও সালেহ আহম্মদ জানায়, নিহত খোরশেদ আলমের সাথে তার মেয়ে রশিদার শশুর একই গ্রামের মৃত. যৌবন আলীর পুত্র তাজুল ইসলামের সাথে ১৭ লক্ষ টাকা নিয়ে বিরোধ চলে আসছে।

এছাড়াও সাজেদা ও তাজুর মধ্যে অনেক বছর ধওে পরকীয়া চলছিল। আগামী ১৭ নভেম্বর স্থানীয়ভাবে বিষযটি মিমাংসা হওয়ার কথা ছিল।

নিহতের বোন নেহেরা বেগম জানান, গত বৃহস্পতিবার ১১টার দিকে তার ভাই খোরশেদ আলম তার কাছে গিয়ে বলে, আমার শরীর খারাপ লাগছে। মনে হয় পরিবারের লোকজন তাকে হত্যা করতে পারে।

স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান জাফর আহম্মদ মজুমদার বলেন, তদন্ত করে সঠিক অপরাধিদের দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তির দাবী জানান।

এ ঘটনার পরপরই জেলা পুলিশের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) চৌদ্দগ্রাম সার্কেল মেহেদী হাসান, নাঙ্গলকোট থানার ওসি মোহাম্মদ আইয়ূব ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।

নাঙ্গলকোট থানার ওসি মোহাম্মদ আইয়ূব ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, নিহতের মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। ঘটনার সাথে জড়িত সন্দেহে আটক ৩ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। পরে বিস্তারিত জানানো হবে। এ ঘটনায় থানায় মামলার প্রস্তুতি চলছে।

ad

পাঠকের মতামত