হত্যার আগে স্বামীকে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে দেয় আর্জিনা
হত্যার আগে স্বামী জামিল শেখকে তরকারির সঙ্গে অতিমাত্রায় ঘুমের ওষুধ খাইয়ে দেয় স্ত্রী আর্জিনা। এ কারণে আঘাত করার পর ঘুম ভাঙলেও তিনি উঠে বসতে বা হামলা প্রতিহত করার শক্তি পাননি।
পরকীয়ার টানে স্বামী ও মেয়েকে হত্যার পর ডাকাতির নাটক সাজাতে গিয়ে নিজে ধর্ষণের শিকার হয়েছেন বলেও দাবি করে আর্জিনা। আর এই ধর্ষণের তথ্যেই হত্যার ক্লু খুঁজে পায় পুলিশ।
ধর্ষণের বিষয়টি নিশ্চিত হতে পুলিশ শারীরিক পরীক্ষার জন্য হাসপাতালে পাঠানোর উদ্যোগ নিলে বেঁকে বসে আর্জিনা।
এতে পুলিশের সন্দেহ আরও ঘনীভূত হয়। এরপর একের পর এক প্রশ্নবাণে শেষ পর্যন্ত পুলিশের কাছে স্বামী ও মেয়েকে খুনের বর্ণনা দেয় আর্জিনা। একই সঙ্গে ফাঁস করে দেয় ঘাতক প্রেমিক শাহিন ও তার বন্ধু খোয়াজের নাম।
পুলিশ ইতিমধ্যেই জোড়া খুনের সঙ্গে জড়িত তিনজনকেই গ্রেফতার করেছে। এর মধ্যে স্বীকারোক্তি দেয়ার পর স্বামী ও সন্তানের ঘাতক আর্জিনা বেগমকে কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত। অন্যদিকে গ্রেফতারের পর চার দিনের রিমান্ডে রয়েছে আর্জিনার কথিত প্রেমিক শাহিন ও তার বন্ধু খোয়াজ।
বাড্ডা থানার ওসি কাজী ওয়াজেদ আলী যুগান্তরকে বলেছেন, গ্রেফতাররা ইতিমধ্যেই পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদে জোড়া খুনে নিজেদের সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করেছে। কিভাবে বাবা-মেয়েকে হত্যা করা হয়েছিল পুলিশের কাছে তার পুরো বর্ণনা দিয়েছে।
শাহিন পুলিশকে বলেছে, পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী ঘটনার রাতে স্বামীর খাবারের সঙ্গে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে দিয়েছিল আর্জিনা।
ওসি কাজী ওয়াজেদ আলী জানান, পেশায় গাড়িচালক জামিল শেখ শক্ত-সমর্থ হওয়ায় একার পক্ষে তাকে হত্যা সম্ভব নাও হতে পারে ভেবে বন্ধু খোয়াজের শরণাপন্ন হয় শাহিন। খোয়াজ বাড্ডা এলাকায় একটি রঙের দোকানের কর্মচারী। অন্যদিকে একই এলাকায় দীর্ঘ দিন রংমিস্ত্রি হিসেবে কাজ করে শাহিন। দীর্ঘদিনের বন্ধুত্বের সম্পর্কের দাবিতে শাহিন খোয়াজের কাছে সাহায্যের দাবি জানায়। আর বন্ধুর জন্য সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয় খোয়াজ।
ওসি জানান, পূর্ব পরিকল্পনার অংশ হিসেবে আগেই করলার তরকারির মধ্যে কৌশলে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে স্বামী জামিল শেখকে খাইয়েছিল আর্জিনা। মাত্রাতিরিক্ত ঘুমের ওষুধ মিশ্রিত ওই তরকারি দিয়ে ভাত খেয়ে ঘটনার রাতে গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে পড়েন জামিল শেখ।
এরপর রাত ১টার দিকে ঘরে ঢুকে প্রথমেই জামিলকে বালিশচাপা দেয় খোয়াজ। তখন আর্জিনা জামিলের দুই হাত চেপে ধরতেই শাহিন আগে থেকে সংগ্রহ করে রাখা শক্ত লাঠি দিয়ে জামিলের মাথাসহ শরীরে বেশ কয়েকটি জায়গায় আঘাত করে। অন্যদিকে বাবাকে হত্যার দৃশ্য দেখে ফেলায় আর্জিনা ও তার প্রেমিক শাহিন ৯ বছরের মেয়ে নুসরাত জাহানকেও শ্বাসরোধে হত্যা করে।
প্রসঙ্গত, বৃহস্পতিবার সকালে পুলিশ রাজধানীর উত্তর বাড্ডার ৩০৬ ময়নারবাগ পাঠানভিলার তৃতীয়তলায় ভাড়া বাসা থেকে জামিল শেখ (৩৮) ও তার মেয়ে নুসরাত জাহানের লাশ উদ্ধার করে। নিহত জামিলের বাড়ি গোপালগঞ্জ সদরের করপাড়া ইউনিয়নের বনপাড়া গ্রামে। তিনি তেজগাঁওয়ে বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানের গাড়িচালক ছিলেন।
সূত্র: যুগান্তর