শোবার ঘর যেভাবে সম্পর্ককে মধুর করবে
সবার কাছেই প্রিয় স্থান তার নিজের ঘর। সারাদিনের ক্লান্তি মেটাতে নিজের বিছানায় একটু আরামে গড়াগড়ি করে না এমন কাউকে খুঁজে পাওয়া যাবে না। ক্লান্ত শরীরটা বিছানায় এলিয়ে ঘুমরাজ্যে চলে যাওয়া এতো একান্ত আপন শোবার ঘরেই পাওয়া যাবে।
যেহেতু শোবার ঘর একান্ত ব্যক্তিগত ও আবেগঘণ মুহুর্তের একটি স্থান। যেকোনো দম্পতির জন্য এটি আরো গুরুত্বপূর্ণ একটি ঘর।
আমরা সকলে ধরেই নেই যে, এখানে আমরা একদম নিজের মতো এলোমেলোভাবে জীবনযাপন করবো। যা ইচ্ছা করবো, যেভাবে ইচ্ছা সেভাবে চলবো। কিন্তু কখনো কি ভেবে দেখেছেন যে শোবার ঘরটি কেবল আপনার একার নয়। আপনি যখন বিবাহিত তখন এই শোবার ঘরটি আপনার জীবন সঙ্গীরও। অর্থাৎ আপনাদের। আর তাই, বিবাহিত দম্পতি কেবল নামে হলেই চলবে না। অবশ্যই জানা থাকা চাই যৌথ জীবনের সীমারেখাগুলোও।
আধুনিক জীবনযাত্রায় খুব দ্রুত আজকাল বদলে যাচ্ছে জীবন যাপনের ধরণ। এবং সেই সাথে স্বভাবতই বদলে যাচ্ছে আচার-আচরণ এবং সেগুলো অবশ্যই প্রভাব ফেলছে সম্পর্কের ক্ষেত্রেও। ছোট ছোট ব্যাপারে দম্পতিদের মাঝে সমস্যা তৈরি হওয়াটা এখন খুবই স্বাভাবিক ঘটনা এবং আমরা অনেকেই স্বীকার না করলেও এটাই সত্য যে আমাদের অনেক ভুল আচরণেই ধীরে ধীরে তিক্ত হয়ে পড়ে ভালোবাসার সম্পর্কটি।
আজ কথা বলি এমন কিছু বেডরুম এটিকেট নিয়ে যা সম্পর্ককে মধুর রাখে আপনার অজান্তেই।
এলোমেলো মানুষ কারো কাছেই আকর্ষণীয় না
শোবার ঘর কিন্তু তার মানে এই নয় যে আপনি সব কিছু ছড়িয়ে-ছিটিয়ে টিনএজারদের মতন বসবাস করবেন। বরং নিজের জিনিসগুলো যথাস্থানে গুছিয়ে রাখার মাঝেই ম্যাচিউরিটি প্রকাশ পায়। মনে রাখবেন, এলোমেলো নোংরা স্বভাবের মানুষ কারো কাছেই আকর্ষণীয় নন। এমনকি জীবন সঙ্গীর কাছেও নয়!
সোশ্যাল মিডিয়া শোবার ঘরে নয়
এটা কি কেউ অস্বীকার করতে পারবেন যে রাতে ঘুমোতে যাবার আগে বিছানায় শুয়ে ফেসবুক, ইন্সটাগ্রামের মত সোশ্যাল মিডিয়া সাইটগুলোতে ব্রাউজ করেন না? বেশীরভাগ মানুষই করেন। এমনই দেখা যায় যে পাশপাশি শুয়ে স্বামী-স্ত্রী দুজনেই সোশ্যাল মিডিয়া নিয়েই ব্যস্ত। দুজনের মাঝে কথা হচ্ছে না, অন্তরঙ্গতা হচ্ছে না। দুজনের মাঝে ব্যবধান তৈরি করছে সোশ্যাল মিডিয়া, দুজনের মাঝে তৃতীয় পক্ষ হয়ে প্রবেশ করছে সোশ্যাল মিডিয়া। প্রশ্ন হচ্ছে- সোশ্যাল মিডিয়া কি আপনার দাম্পত্যের চাইতে গুরুত্বপূর্ণ? উত্তর হচ্ছে- না! বিছানায় জীবনসঙ্গীকে পাশে নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় সময় কাটানো রীতিমত নিজের সঙ্গীকে অপমান করার মতন বিষয়। এই কাজটি থেকে বিরত থাকুন। ঘুম না পেলে প্রিয় মানুষটির সঙ্গে কথা বলুন, তাকে সঙ্গ দিন, সংসারের আলাপ করুন। কিন্তু সোশ্যাল মিডিয়া নিয়ে ব্যস্ততা একদম নয়!
কেবল ঘর নয়, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকুন নিজেও
কথাটা শুনতে কেমন কেমন লাগলো? একটু মনে করে দেখুন তো, হয়তো আপনি নিজেই কতবার রান্নাঘরের কাজ সেরে পোশাকটি না পাল্টেই বিছানায় শুয়ে পড়েছেন। কিংবা হয়তো বাইরে থেকে এসে হাত-মুখ না ধুয়েই শুয়ে পড়লেন বিছানায়। কখনো কি ভেবেছেন যে পাশের মানুষটির কেমন লাগে আপনার গায়ের ঘাম বা পেঁয়াজ-আদা-রসুনের গন্ধে? কিংবা আপনার তেলতেলে, নোংরা চেহারা দেখে তিনি বিরক্ত হন কিনা? শুধু দাম্পত্যে নয়, আমাদের সামাজিক জীবনেও ব্যক্তিগত হাইজিনের একটা বড় স্থান আছে। একজন নোংরা মানুষ কখনোই অন্য কারো মন জয় করতে পারেন না। সেখানে বিষয়টি যখন দাম্পত্যের, তখন নিজের ব্যক্তিগত হাইজিনের ব্যাপয়ারে আরও সতর্ক হওয়া প্রয়োজন।
ঘুমের সময়ে অভিযোগ নয়
হ্যাঁ, দম্পতিরা নিজের শোবার ঘরেই সকল ব্যক্তিগত আলোচনা করবেন আর সেটাই স্বাভাবিক। কিন্তু ঘুমুতে যাবার সময় সমস্যার ঝাঁপি খুলে বসবেন না। শারীরিক-মানসিক উভয় ক্ষেত্রেই ঘুম একজন মানুষের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি ব্যাপার। ঘুমের আগে তাই ঝগড়াঝাঁটি করে বা তিক্ত কথা বলে সম্পর্ক নষ্ট করা থেকে বিরত থাকুন। ঘুমের পূর্বে ঝগড়াঝাঁটি আমাদের মনে নেগেটিভ প্রভাব বিস্তার করে, সম্পর্কটি নিয়ে খুব সূক্ষ্ম তিক্ততা তৈরি করতে শুরু করে। অনেকের এই কারণে রাতে ঘুমও খারাপ হয় আর সকাল শুরু হয় বিষণ্ণতা দিয়ে।
শোবার ঘরের প্রাইভেসি
শহুরে জীবনে বাড়িগুলো যেন সব গায়ে গায়ে লাগানো। এক জানালা থেকে উঁকি দিয়েই দেখা যায় পাশের বাড়ির জানালায় কী হচ্ছে। অন্যের বাড়িতে উঁকি দেয়াটা যে কুৎসিত রকমের অভদ্রতা, সেটা আমরা অনেকেই জানি না। জানলেও মানি না। আর তাই, নিজের শোবার ঘরের প্রাইভেসি রক্ষা করতে হবে আপনার নিজেকেই। অনেক দম্পতিই হয়তো ঘুমোতে যাবার সময় বা পাশপাশি বিশ্রাম নেবার সময় জানালার পর্দা খুলে রাখেন। যদি আশেপাশে প্রতিবেশী থাকে, এই কাজটি করবেন না। আপনাদের একান্ত ভুবন দেখার অধিকার কোন তৃতীয় ব্যক্তি নেই। আপনাদের ব্যক্তিগত জীবনটিকে যত ব্যক্তিগত রাখবেন, ততই সম্পর্ক মধুর হবে।
সন্তানকে নিয়ে ঘুমানো নয়
আমাদের দেশের একটি বাজে চর্চা হচ্ছে সন্তান বড় হবার পরও সাথে নিয়ে ঘুমানো, যা দাম্পত্যের জন্য অত্যন্ত অস্বাস্থ্যকর। ৭/৮ বছর হবার পরও যদি সন্তান মা -বাবার সাথে ঘুমাতে থাকে, তবে সেটা সন্তানের মানসিক স্বাস্থ্যের জন্যও ভালো নয়। সন্তানকে আলাদা কামরায় ঘুমাতে দিচ্ছেন মানে এই নয় যে আপনি সন্তানকে কম ভালোবাসেন। বরং এই কাজটি সন্তানের সঠিক মানসিক বৃদ্ধির জন্য জরুরী ও আপনার নিজের দাম্পত্য সম্পর্ককে হেলদি রাখতেও জরুরী।
জীবনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সম্পর্ক হচ্ছে দাম্পত্য। আর তাই, এই সম্পর্কে দেয়া উচিত একটু বিশেষ খেয়াল। আজীবন কোন একটি কাজ করা হয়নি বলে এখনও যে করা হবে না, বিষয়টি কিন্তু তেমন নয় মোটেই। বরং গতিশীল জীবনের সাথে পাল্লা দিয়ে আমাদের জীবনেও আসুক পরিবর্তন, নিয়মিত চর্চায় সম্পর্কগুলো হয়ে উঠুক আরও উন্নত ও সুন্দর।