179386

‘রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে চাপ প্রয়োগ করুন’

রোহিঙ্গাদেরকে ফিরিয়ে নিতে বাধ্য করতে মিয়ানমারকে চাপ দিতে বিশ্ব নেতাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আশঙ্কা প্রকাশ করে তিনি বলেন, রোহিঙ্গা সংকট কেবল এই অঞ্চল নয়, এর বাইরেও অস্থিরতা তৈরি করতে পারে।

আজ রবিবার সকালে জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় কমনওয়েলথ পার্লামেন্টারি কনফারেন্স এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশ্ব নেতাদেরকে প্রধানমন্ত্রী এ আহ্বান জানান।

প্রায় এক মাস পরে গণভবনে ও প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের বাইরের কোন অনুষ্ঠানে যোগ দিলেন শেখ হাসিনা।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর উপর অমানবিক নির্যাতন এবং তাদের জোরপূর্বক বিতাড়িত করে দেওয়া শুধু এ অঞ্চলে নয়, এর বাইরেও অস্থিরতা তৈরি করছে। সাম্প্রতিককালে মিয়ানমার সরকারের এই নিবর্তনমূলক আচরণের ফলে সেখান থেকে ছয় লাখ ২২ হাজারেরও বেশি অধিবাসী বাংলাদেশে প্রবেশ করেছেন। ১৯৭৮ সাল থেকে বিভিন্ন সময়ে আরও প্রায় পাঁচ লাখ রোহিঙ্গা সীমান্ত অতিক্রম করে বাংলাদেশে প্রবেশ করে।

তিনি বলেন, মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে সাময়িকভাবে আমরা এই বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গা নাগরিককে আশ্রয় দিয়েছি। আপনাদের অনুরোধ জানাব, রোহিঙ্গা ইস্যুটি বিশেষ গুরুত্বের সঙ্গে আলোচনা করুন। মিয়ানমারকে তাঁর নাগরিকদের উপর নির্যাতন বন্ধ করতে এবং বাংলাদেশে আসা রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে চাপ প্রয়োগ করুন।
রোহিঙ্গা সমস্যার শান্তিপূর্ণ সমাধান আশা করে শেখ হাসিনা বলেন, সকলের সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে বৈরীতা নয়-এই নীতির ভিত্তিতে আমাদের পররাষ্ট্র নীতি পরিচালিত হয়। বিশেষ করে প্রতিবেশী দেশসমূহের সঙ্গে আমরা সব সময়ই সুসম্পর্ক জোরদার করার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছি। এর ফলে আমরা ভারতের সঙ্গে গঙ্গা নদীর পানি চুক্তি এবং স্থল সীমানা চুক্তি সম্পাদনের মাধ্যমে দীর্ঘদিনের বিরোধের শান্তিপূর্ণ নিষ্পত্তি করতে পেরেছি। একইভাবে মিয়ানমার এবং ভারতের সঙ্গে সমুদ্রসীমা নির্ধারণ করা সম্ভব হয়েছে।

জঙ্গিবাদ মোকাবেলায়ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কিছু মানুষের অপরিণামদর্শী কর্মকাণ্ডের ফলে নিরীহ মানুষের প্রাণ যাচ্ছে। জঙ্গিবাদ আজ আর কোন নির্দিষ্ট দেশের সমস্যা নয়, এটি বৈশ্বিক সমস্যায় পরিণত হয়েছে। আমাদের সকলকে ঐক্যবদ্ধভাবে জঙ্গিবাদ সমস্যার মোকাবেলা করতে হবে।
জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবেলায় উন্নত দেশগুলোর প্রতিশ্রুত সহায়তার নিশ্চয়তা চান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে আমরাই সবচেয়ে বেশি ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছি। এ বছর অতিবৃষ্টিসহ কয়েকবার বন্যার ফলে আমাদের বিশাল জনপদ ভেসে গেছে। ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে ফসলের। জলবায়ুর বিরূপ প্রভাব মোকাবেলার জন্য যে সব সহায়তার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে, সেগুলোর দ্রুত বাস্তবায়ন প্রত্যাশা করছি।
বাংলাদেশে শাসন ব্যবস্থা এবং সরকারের নানা উদ্যোগও সম্মেলনে তুলে ধরেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, বাংলাদেশে আমরা একটি দারিদ্র্য ও ক্ষুধামুক্ত, অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক সমাজ গড়ে তোলার জন্য নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছি। জাতীয় সংসদ, বিভিন্ন স্তরের স্থানীয় সরকারসহ আমরা গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্তিশালী করেছি।

তিনি আরও বলেন, গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থার অতন্দ্র প্রহরী স্বাধীন এবং শক্তিশালী গণমাধ্যম। বিগত বছরগুলোতে বাংলাদেশের গণমাধ্যম ব্যাপকভাবে বিকশিত হয়েছে নিশ্চিত করা হয়েছে তাদের অবাধ স্বাধীনতা। মানুষের তথ্যপ্রাপ্তির অধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ইউনিয়ন পর্যায় থেকে শুরু করে উপজেলা, পৌরসভা, সিটি করপোরেশন ও জেলা পরিষদে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিগণ দায়িত্ব পালন করছেন। নারীর ক্ষমতায়ন ও লিঙ্গ বৈষম্য নিরসনে আমাদের অবস্থান দক্ষিণ এশিয়ায় শীর্ষে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, এমডিজি বাস্তবায়নের সাফল্যের ধারাবাহিকতায় আমরা এসডিজি বাস্তবায়ন করছি। আমাদের চলমান সপ্তম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় এসডিজির বিষয়সমূহ অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। বাংলাদেশ শান্তি, গণতন্ত্র, উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির পথ ধরে এগিয়ে চলেছে। ইতোমধ্যে আমরা নিন্ম মধ্য আয়ের দেশ হিসেবে মর্যাদা লাভ করেছি। আমাদের প্রত্যাশা স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে ২০২১ সালে বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশ ও ২০৪১ সালে উন্নত দেশ হিসেবে বিশ্ব মানচিত্রে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে।

এই সম্মেলনের সাফল্য কামনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ ধরণের আন্তর্জাতিক সম্মেলন গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ও চর্চার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।

তিনি আরও বলেন, জনপ্রতিনিধি হিসেবে আমাদের প্রথম ও প্রধান নৈতিক দায়িত্ব হচ্ছে গণতন্ত্র এবং সংসদীয় গণতান্ত্রিক রীতিনীতি ও প্রতিষ্ঠানকে আরও শক্তিশালী করা এবং এসব রীতিনীতি ও প্রতিষ্ঠানের প্রতি জনগণের পূর্ণ আস্থা তৈরি করা।

শেখ হাসিনা তার বক্তব্যে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম থেকে শুরু করে ১৯৭৫ এর ১৫ অগাস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকাণ্ড এবং পরে নিজের নির্বাসিত জীবনের কথাও অনুষ্ঠানে তুলে ধরেন। ১৯৮১ সালে দেশে ফিরে এসে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলনের কথাও স্মরণ করেন।

অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন সিপিএ-এর চেয়ারপারসন এবং বাংলাদেশের জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী । পরে তিনি এই ফোরামের প্যাট্রন ব্রিটেনের রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনান।
শিরীন শারমিন চৌধুরীর স্বাগত বক্তব্যের পর জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সংগ্রামী জীবন এবং সিপিএ-এর কার্যক্রম নিয়ে দুটি তথ্যচিত্র দেখানো হয়। দুই তথ্যচিত্রের মাঝে নাচের দল নৃত্যাঞ্চল দলগত নৃত্য পরিবেশন করে।

সিপিএ মহাসচিব আকরাম খান অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন। এছাড়া কমনওয়েলথ মহাসচিব প্যাট্রেশিয়া স্কটল্যান্ডের একটি ভিডিও বার্তা দেখানো হয়। অষ্টম কমনওয়েলথ ইয়ুথ পার্লামেন্টের যুব প্রতিনিধি আয়মান সাদিকও অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন। ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন সিপিএ-এর কোষাধজ্ঞ ও অস্ট্রেলিয়ার ক্যাপিটাল টেরিটরির লেজিসলেটিড অ্যাসেমব্লির ডেপুটি স্পিকার ভিকি ডান।

পরে ‘বাংলাদেশ দ্যা গোল্ডেন ডেল্টা’ শীর্ষক নৃত্যনাট্য পরিবেশিত হয়। এছাড়া ‘সম্ভাবনাময় বাংলাদেশ’ শীর্ষক একটি তথ্যচিত্রও দেখানো হয় অনুষ্ঠানে।

ad

পাঠকের মতামত