মেয়ে হত্যার সময় যা করেছিলেন মা নামক ডাইনি আরজিনা
নিজের বাসায় সাবলেট থাকা শাহীন মল্লিকের সঙ্গে অবৈধ সম্পর্কের জের ধরে স্বামী জামিল শেখকে হত্যা করায় আরজিনা বেগম। সেই ঘটনা দেখে ফেলায় ৯ বছরের শিশু সন্তান নুসরাতকে হত্যা করা হয়।
শনিবার ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে রাজধানীর উত্তর বাড্ডায় বাবা-মেয়ে হত্যার ঘটনা নিয়ে তদন্তের বিস্তারিত তুলে ধরে পুলিশ।
ঢাকা মহানগর পুলিশের গুলশান বিভাগের উপ-কমিশনার মোস্তাক আহমেদ বলেন, প্রাথমিকভাবে নিজের মেয়েকে হত্যায় রাজি না থাকলেও ঘটনা প্রকাশিত হওয়ার ভয়ে তাতে সায় দেয় আরজিনা। শাহীন মল্লিক নুসরাতকে বালিশ চাপা দিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে।
মোস্তাক আহমেদ বলেন, ঘটনার রাতে একই বিছানায় শুয়ে ছিল জামিল, আরজিনা, নুসরাত ও তার ছোট ভাই আলভি। আরজিনা পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী ঘরের দরজা খুলে ঘুমায়। তখন শাহীন বাড়ির নিচ থেকে একটি কাঠের টুকরা এনে ঘরে ঢুকে জামিলের মাথায় আঘাত করে। প্রথম আঘাতের পর জামিল উঠে যায় এবং জিজ্ঞেস করে কেন তাকে আঘাত করা হল। এরপর শাহিন কোন কথা না বলে আরও কয়েকটি আঘাত করে তাকে হত্যা করে। এসময় ঘুম থেকে জেগে উঠে মেয়ে নুসরাত।
“সে শাহীনের কাছে বাবাকে কেন হত্যা করা হল এটি জানতে চায় এবং চিৎকার করে কান্নাকাটি করতে থাকে। তখন নুসরাতকে হত্যার পরিকল্পনা করে শাহীন। তবে প্রাথমিক পর্যায়ে এতে আরজিনা সম্মতি দেয় নি। পরবর্তীতে বিপদে পড়ার আশঙ্কায় মেয়েকে হত্যার সম্মতি দেয় মা আরজিনা। তখন নুসরাতকে ঘরের বিছানায় ফেলে গলা টিপে হত্যার চেষ্টা করে শাহীন। তবে নুসরাত চিৎকার করায় তার মুখে বালিশ চাপা দিয়ে তাকে মেরে ফেলা হয়।”
জোড়া হত্যাকাণ্ডের পর ছাদে শাহীন ও আরজিনা গল্প সাজাতে থাকে। একপর্যায় তারা সিদ্ধান্ত নেয় যে কেউ জিজ্ঞেস করলে ডাকাতরা জামিল ও তার মেয়েকে হত্যা করেছে বলে বলবে। এছাড়াও ডাকাতরা যাওয়ার সময় তাকে ধর্ষণ করেছে বলে দাবি করবে আরজিনা।
পুলিশের জানায়, উত্তর বাড্ডার ময়নারনগর এলাকার একটি বাসার নিচতলায় স্ত্রী ও দুই সন্তান নিয়ে ভাড়া থাকতেন গাড়িচালক জামিল শেখ। তখন ওই বাসার তৃতীয় তলার ভাড়াটিয়া শাহীন মল্লিকের সঙ্গে পরিচয় হয় জামিলের স্ত্রী আরজিনার।
‘শাহীন সবসময় আরজিনার প্রশংসা করতো এবং একসময় দুজন দুজনের প্রতি দুর্বল হয়ে পড়ে। ভালোলাগা থেকে দুজন সম্পর্কে জড়িয়ে যায়। তখন থেকে আরজিনার সঙ্গে যে কোন ছোটখাট বিষয় নিয়ে ঝগড়া হতো জামিল শেখের।
সংবাদ সম্মেলনে মোস্তাক আহমেদ বলেন, বৃষ্টির কারণে বাসার নিচে পানি জমে যাওয়ায় রাগ করে আরজিনা বাবার বাড়ি চলে যায়। পরে নতুন বাসা নেওয়ার শর্তে আরজিনা স্বামীর কাছে ফিরে আসেন এবং একই এলাকায় আরেকটি বাড়ির চিলেকোঠায় সাত হাজার টাকায় বাসা ভাড়া নেন জামিল শেখ। তখন আরজিনা কৌশলে পূর্ব পরিচিত হিসেবে প্রেমিক শাহীনকে তিন হাজার টাকায় সাবলেট নেন।
“শাহীনকে কাছে পেতে নতুন কৌশল অবলম্বন করে আরজিনা। এক পর্যায়ে আরজিনা জামিলকে তালাক দিয়ে শাহিনের সঙ্গে চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। তবে শাহীন তাকে তালাক না দিতে বলেন এবং দুইজন মিলে জামিলকে হত্যার পরিকল্পনা করে।”
পুলিশ জানায়, তদন্তে আশপাশের লোকজনের সঙ্গে কথা বলে এবং বেচে যাওয়া আরেক শিশুর কাছ থেকে কিছু তথ্য পাওয়া গেছে। তা থেকে এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে ওই দুইজনের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে।