178631

ফোন চুরি নয়, চাচির পরকীয়ায় জীবন গেছে আজিজার

মোবাইল চুরি নয়, চাচির সঙ্গে পরকীয়া প্রেমিকের অপ্রীতিকর ঘটনা দেখে ফেলার কারণেই ৫ম শ্রেণির ছাত্রী আজিজাকে পুড়িয়ে হত্যা করা হয়। পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে এমন তথ্য জানিয়েছেন গ্রেফতারকৃত তমুজা বেগম। আর ঘটনাকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে মোবাইল চুরির অপবাদ দিয়ে আজিজার শরীরে কেরোসিন ঢেলে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে হত্যা করা হয়।

শনিবার সকালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের দগ্ধ স্কুলছাত্রীর মৃত্যু হয়। নিহতের স্বজন ও পরিবারের অভিযোগ, মোবাইল চুরির অভিযোগে মেয়েটিকে বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে প্রথমে নির্যাতন ও পরে গায়ে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়।

নরসিংদীর শিবপুর উপজেলা খৈনকুট গ্রামের নিহত স্কুলছাত্রী আজিজা খাতুন (১৩) আবদুস সাত্তারের মেয়ে। সে স্থানীয় প্রাইমারি স্কুলের ছাত্রী। বাবা সাত্তার স্থানীয় একটি মুরগীর খামারে চাকরি করেন।

এদিকে সন্তানকে পুড়িয়ে হত্যার ঘটনায় আজিজার চাচি বিউটি বেগমসহ সাতজনের বিরুদ্ধে শিবপুর থানায় মামলা করেছেন নিহতের পিতা সাত্তার মিয়া। মামলার অন্য আসামিরা হলেন- বিউটি বেগমের মা সানোয়ারা বেগম, তার ভাই রুবেল মিয়া ও তার ফুপু শাশুড়ি তমুজা বেগম। এ ছাড়া অজ্ঞাতনামা আরও তিনজনকে আসামি করা হয়।

নিহত আজিজার ভাই সুজন ও মা রেহেনা বেগম জানান, শুক্রবার দুপুরে বাড়ির পার্শ্ববর্তী স্থানে গাছের পাতা কুড়ানোর সময় স্কুলছাত্রী আজিজার চাচি বিউটি বেগম ও তার ভাই রুরেল মিয়া একটি সিএনজি দিয়ে তাকে তুলে নিয়ে যায়। পরে তার ওপর নির্যাতন চালানো হয়। পরে রাত সাড়ে ৮টার বাড়ির অদূরে একটি উচু টিলায় নিয়ে তার শরীরে কেরোসিন ঢেলে দেয় এবং শরীরে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়।

আজিজার আত্মচিৎকারে এলাকার লোকজন ঘটনাস্থলে গিয়ে তাকে আগুনে পুড়তে দেখে। স্থানীয়রা পানি ঢেলে আগুন নেভানোর চেষ্টা করলেও ততক্ষণে শরীরের অনেকখানি পুড়ে যায়। পরে তাকে উদ্ধার করে প্রথমে স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অবস্থার অবনতি হলে রাত দেড়টার দিকে আজিজাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নেয়া হয়।

নিহতের ভাই সুজন জানান, আট-দশ দিন আগে চাচি বিউটি বেগমের একটি মোবাইল সেট চুরি হয়েছে বলে অভিযোগ তোলে। চাচির মা ও অন্য স্বজনরা এর জন্য আজিজাকে সন্দেহ করে। তারা হুমকি দেয়, এক সপ্তাহের মধ্যে মোবাইল ফোন ফেরত না দিলে আজিজাকে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেবে।

শনিবার সকালে ঢামেকে চিকিৎসাধীন দগ্ধ স্কুলছাত্রীর মৃত্যুর খবরে জেলাজুড়ে শোকের ছায়া নেমে আসে। ঘটনার রহস্য উন্মোচনে মাঠে নামে পুলিশ। এরই জের ধরে সন্দেহজনকভাবে বিউটি বেগমের ফুফু তমুজা বেগমকে আটক করে পুলিশ। ওই সময় আটক তমুজা পুলিশের কাছে নেপথ্যের ঘটনা তুলে ধরেন।

পুলিশের হাতে আটক তমুজা বেগম বলেন, গত তিন মাস পূর্বে বিউটি বেগমের স্বামী মালোয়েশিয়া যায়। স্বামী বিদেশে যাওয়ার পর বিউটি বেগম পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়ে। প্রেমিকের সঙ্গে অবাদে মেলামেশা শুরু করে। এরই মধ্যে বিউটি বেগমের সঙ্গে তার প্রেমিকের অবৈধ মেলামেশার দৃশ্য দেখে ফেলেন স্কুলছাত্রী আজিজা। এরপর থেকেই আজিজাকে হত্যা করার পরিকল্পনা করা হয়। পরিকল্পনা অংশ হিসেবে মোবাইল চুরির নাটক সাজানো হয়। ঘটনাকে বাস্তবায়ন করতে পরিকল্পিতভাবে মোবাইল চুরির অপবাদ দেয়া হয় আজিজা ও তার বোনকে।

এদিকে কিশোরী আজিজাকে পুড়িয়ে হত্যার খবরে পুরো এলাকায় শোকের ছায়া নেমে আসে। শোকে নেমে এসেছে নিহতের পরিবারে। সন্তানকে হারিয়ে পাগলপ্রায় আজিজার মা রেহেনা বেগম। কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, আমার মেয়ে চোর না। পড়াশোনার পাশাপাশি সে আমার সঙ্গে কাজ করে। বেশ কয়েকদিন যাবৎই বিউটি আজিজার পিছু নেয়। ক্ষণেক্ষণে তাকে বকাঝকা করত। কিন্তু সে যে আমার মেয়েকে পুড়িয়ে মারবে সেটা বুঝতে পারিনি।

নিহতের বোন মারুফা বলেন, যে মোবাইল চুরির কথা বলে সেটা চাচি হাতেই ছিল। ইচ্ছে করে আমাদের ওপর অপবাদ দিয়েছে। আমার বোনের হত্যাকারীদের বিচার চাই। তাদের যেন ফাঁসি হয়।

শিবপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সৈয়দুজ্জামান জানান, মোবাইল চুরি নয়, চাচির সঙ্গে পরকীয়া প্রেমিকের অপ্রীতিকর ঘটনা দেখে ফেলার কারণেই আজিজাকে পুড়িয়ে মারা হয়েছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে রাত ১১টার দিকে বিউটির ফুপু শাশুড়ি তমুজা বেগম বিষয়টি স্বীকার করেছেন। ঘটনার সঙ্গে আরও কে কে জড়িত আছে তা ক্ষতিয়ে দেখা হচ্ছে।

ad

পাঠকের মতামত