178191

৩ বছর বয়সে সৎমা বিক্রি করে দেয় যৌনপল্লীতে

এ পাড়ায় আঁধার নামে না কখনই। রাত যত গভীর হয়, আলোর ঝলক ততই রঙিন হয়। কখনও বিদ্যুৎ চলে যায় বটে, তবে তা একেবারে আঁধার নামাতে পারে না। বিদ্যুৎ বিভ্রাট ঘটা মাত্রই জেনারেটর চালু হয় একাধিক পাড়ায়। আলোর বিকিরণ ঘটে গলিতে। তবে খুপড়িসম ঘরগুলোতে জ্বলে মোমের বাতি।

এ দিন ঘণ্টা পার হয়েছে বিদ্যুৎ চলে যাওয়ার। ঘরে ঘরে মোমের বাতি তখন। আর গলিগুলোয় আলো-আঁধারের মিতালি। এমন আঁধারেও মাঝ রাতে খদ্দেরে ভরপুর দৌলতদিয়া যৌনপল্লী। গলির মুখে মুখে দাঁড়িয়ে খদ্দেরের অপেক্ষায় বারবনিতারা। খদ্দেরের চোখ গিয়ে পড়ছে এক রূপ থেকে আরেক রূপে। আর চোখের ইশরায় মিতালি করে মিলে যাচ্ছে গলির চোরা পথে।

পল্লীর প্রধান গলি হয়ে খানিক গেলেই কাজীর হোটেল। হোটেল থেকে পূর্ব গলিতে কয়েক কদম যেতেই ডাক পড়ল। ‘আস, ঘরে যাই’। যেখানে বসে এমন আবেদন করছে মৌসুমী, তার সম্মুখভাগেই চায়ের দোকান। চায়ের ছুতোয় আটকে যাওয়া। ভরসা পেয়ে মৌসুমীও এগিয়ে আসে। চায়ের সঙ্গে সিগারেটেরও আবদার তার।

লাল শাড়ি আর ব্লাউজে বেশ পরিপাটি ঢংয়ে সাজিয়েছে নিজেকে। সন্ধ্যার পর দুজন খদ্দের মিলেছিল বটে, তাতে সাজের ব্যাঘাত ঘটেনি। কপালের ছোট্ট টিপ ভেতরকার দহনের সাক্ষী হয়ে জ্বলছে তখনও। ২৬ বছরের এ তরুণীর শারীরিক গঠনও বেশ সুঠাম ধাঁচের।

সিগারেটে আগুন লাগিয়ে আগের জায়গায় বসেই গল্প শুরু। ততক্ষণে পরিচয় জেনে যায় আমাদের। নিজেকে কিছুটা সংযত করেই জীবনকথা বলতে শুরু করে মৌসুমী। জন্মের পরই মায়ের মৃত্যু। দু’বছর পর ফের বিয়ে করেন বাবা।

সৎমা তিন বছর বয়সেই দালালের কাছে বিক্রি করে দেয় মৌসুমীকে। কীভাবে বিক্রি, বাবার সম্মতি ছিল কিনা, তার আর কিছু্ই জানে না মৌসুমী। দালাল এনে বেশি দামে বিক্রি করে দিয়েছে যৌনপল্লীর সর্দারণীর কাছে। শৈশবে এ সর্দারণীকেই মা জানত। মৌসুমী নাম তারই দেয়া। যৌনপল্লীর পাশের গ্রামে অন্য বাড়িতে বড় হতে থাকে সে। কিন্তু কৈশোরে ফিরতেই ফের বিক্রি করে দেয়া হয় তাকে।

এরপরই জীবনের গল্প বদলে যায় মৌসুমীর। যৌনপল্লীর এক বদ্ধ ঘরে প্রায় দুই মাস আটকে রাখা হয়। মানসিক চাপ চলতে থাকে যৌন পেশায় আসতে। চলতে থাকে মারপিট আর ক্ষুধার কষ্ট অনবরত। শারীরিক আর মানসিকভাবে ভেঙে পড়েই বাধ্য হয় এ আদি পেশায় সম্মতি দিতে।

যে বয়সে পুতুল সাজানোয় কথা সেই বয়সে খদ্দেরের জন্য সাজাতে শুরু করে নিজেকে। যে ঘরে বাস, তা কখনই নিজের করতে পারেনি। খদ্দেরের জন্যই শত আয়োজন। খদ্দের এলেই ও ঘরে আলো আসে, খদ্দের এলেই বিছানায় ফুল ফোটে। তবে সে আলোয়, সে ফুলে কখনই নিজেকে রাঙাতে পারেনি মৌসুমী।

অশ্রুসিক্ত আলাপের শেষে মৌসুমীর আক্ষেপ, ‘কখনই নিজের জন্য সাজতে পারিনি। আমাদের সবই খদ্দেরের জন্য। বউ সাজার স্বপ্ন নিয়ে ছয় বছর প্রেম করেছিলাম একজনের সঙ্গে। শরীর খাটানো টাকার সবই তুলে দিতাম তার হাতে। আমার টাকায় বিদেশ গেল সে। সেই যে গেল, আর ফিরে এলো না’।

ad

পাঠকের মতামত