178194

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী যা আলোচনা করলেন সু চির সাথে

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, মিয়ানমার থেকে অনুপ্রবেশকারীদের (রোহিঙ্গা) দ্রুত ফিরিয়ে না নিলে তাদের অনেকেই সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদে জড়িয়ে যেতে পারে। তখন পরিস্থিতি বাংলাদেশ বা মিয়ানমার- কারো অনুকূলে থাকবে না। বুধবার (২৫ অক্টোবর) মিয়ানমারের রাজধানী নেপিডোতে দেশটির রাষ্ট্রীয় পরামর্শক ও ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষ নেতা অং সান সু চি’র সাথে সাক্ষাতকালে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এ আশঙ্কা ব্যক্ত করেন।

সাক্ষাতকালে সু চি বলেন, বাংলাদেশে অবৈধ অনুপ্রবেশকারীদের ফিরিয়ে নিতে তার সরকার কাজ শুরু করেছে। রাখাইন সঙ্কট নিরসনে কফি আনান কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নেও মিয়ানমার কাজ করছে। দশ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল নিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সকালে সু চি’র সাথে সাক্ষাত করেন। প্রায় এক ঘণ্টা তাদের মধ্যে কথা হয়।

মিয়ানমার থেকে ইয়াবার মত মাদক বাংলাদেশে পাচারের ভয়াবহ রূপ সু চি’র কাছে তুলে ধরেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। এ ব্যাপারে সু চি বলেন, মিয়ানমারের যুব সমাজও ইয়াবায় আসক্ত হয়ে পড়েছে। বাংলাদেশে ইয়াবা পাচার বন্ধে তার সরকার সীমান্ত বন্ধ করে দেবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সু চিকে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানান। দুই দেশের সুবিধাজনক সময়ে বাংলাদেশ সফর করবেন বলে সু চি জানান।

আগের দিন দুই দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও সচিব পর্যায়ের বৈঠকে নেয়া সিদ্ধান্তগুলো সম্পর্কে সু চিকে অবহিত করেন আসাদুজ্জামান খান কামাল। এসব সিদ্ধান্তের ব্যাপারে একমত পোষণ করেন সু চি। বৈঠকের পর মিয়ানমার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পার্মানেন্ট সেক্রেটারি স্থানীয় সাংবাদিকদের জানান, বাংলাদেশ যত দ্রুত সম্ভব প্রত্যাবাসন চায়। কিন্তু আমরা জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠন করে ধাপে ধাপে এ প্রক্রিয়ায় অগ্রসর হতে চাই।

অন্যদিকে মিয়ানমারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পার্মানেন্ট সেক্রেটারি বলেছেন, রাখাইন রাজ্যে প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণ ও উদ্বাস্তুদের পুনর্বাসন প্রক্রিয়ার পরিকল্পনা আমরা এখনো হতে নেয়নি। এসব কাজ করবে রাজ্য কর্তৃপক্ষ। এ প্রক্রিয়া কখন শেষ হবে তা আগে থেকে বলা কঠিন। নেপিডোতে গত মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে আগামী ৩০ নভেম্বরের মধ্যে জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠনের তাগাদা দিয়েছে বাংলাদেশ। ২ অক্টোবর ঢাকা সফরকালে সু চি’র দফতরের ইউনিয়নমন্ত্রী টিন্ট সোয়ের সাথে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর আলাপকালে দুই দেশ রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠনের সিদ্ধান্ত নেয়।

এদিকে বুধবার সন্ধ্যায় তিন দিনের মিয়ানমার সফর শেষে ফিরে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে সাংবাদিকদের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, মিয়ানমারের মন্ত্রীর বাংলাদেশ সফরকালে একটি যৌথ ওয়ার্কিং কমিটি হওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছিল। সেই বিষয়টি এবারও আলোচনায় এসেছে। ওই কমিটিতে দুই দেশের সমানসংখ্যক সদস্য থাকবে। এই কমিটি গঠনে মিয়ানমার রাজি। এ ব্যাপারে শিগগির কাজ শুরু হবে।

আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল রোহিঙ্গা সংকট নিরসনে তাঁর এই সফরকে ফলপ্রসূ হিসেবে দেখছেন। মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের ফেরত নেবে বলেও আশা করছেন তিনি। এ ব্যাপারে মিয়ানমারের সর্বোচ্চ মহল থেকে আশ্বাস পেয়েছেন বলে জানান মন্ত্রী। তিনি জানান, মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সু চিকে সুবিধাজনক সময়ে বাংলাদেশ সফর করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। সু চি সেই আমন্ত্রণ গ্রহণ করেছেন বলে জানান মন্ত্রী।

রোহিঙ্গা সংকটের সমাধান খুঁজতে আলোচনার জন্য গত সোমবার মিয়ানমার সফরে যান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। পুলিশের মহাপরিদর্শকসহ (আইজিপি) প্রতিনিধি দলে ১০ জন ছিলেন। বুধবার সন্ধ্যায় তারা দেশে ফিরে আসেন। সফরকালে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সু চিসহ দেশটির দায়িত্বশীল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। রোহিঙ্গাদের ফেরত নিতে তারা সম্মত বলে জানিয়েছেন মন্ত্রী। একই ইস্যুতে আলোচনার জন্য শিগগির মিয়ানমার সফরে যাবেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী।

ad

পাঠকের মতামত