বিসিএস পুলিশ ক্যাডার হয়ে যে ভাবে ইতিহাস গড়লেন আপন দুই বোন
সিলেটের বাহুবলের মেয়ে নাসরিন আক্তার ও শিরিন আক্তার। বাংলাদেশ পুলিশের ইতিহাসে রচনা করলেন এক নতুন অধ্যায়। তাদের সাফল্যে গর্বিত এলাকাবাসী। গর্বিত তাদের মা-বাবা। তৃণমূলে থাকা নির্যাতিত নারীদের জন্য কাজ করতে চান ছোট বোন শিরিন অক্তার। আর তার ভেতরে এ স্বপ্নের বীজটা বুনে অগ্রণী ভূমিকা রেখেছেন বড়বোন নাসরিন আক্তার।
৩১তম বিসিএসের মাধ্যমে বিসিএস পুলিশ ক্যাডারে নিয়োগ পান নাসরিন। বর্তমানে তিনি শান্তিরক্ষী মিশনে কর্মরত আছেন কঙ্গোতে। ছোটবোন শিরিন আক্তার ৩৬তম বিসিএসের মাধ্যমে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন বিসিএস পুলিশ ক্যাডারে।
বাহুবল থেকেই এসএসসি-এইচএসসি শেষ করে দু’বোনই দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর করেছেন। বড়বোন পড়েছেন ইতিহাস বিভাগে, আর ছোটবোন রাষ্ট্রবিজ্ঞানে।
আকবর হোসেন ও ঝরণা বেগম দম্পতির দুই অপরাজিতার সাফল্য কাহিনী এখন এলাকার মানুষের মুখে মুখে।
বাবার বলা ‘নিজে প্রতিষ্ঠিত হও ও মানুষের জন্য কিছু করো’ কথাটি অনেক বেশি অনুপ্রাণিত করে শিরিন আক্তারকে। আর তাই পুলিশের মতো একটি দায়িত্বশীল পেশায় থেকে মানুষের জন্য কিছু করতে চান তিনি।
বিসিএস পুলিশে সুপারিশপ্রাপ্ত এ কর্মকর্তা জানিয়েছেন তার স্বপ্নের কথা।
মূলত ৩১তম বিসিএসে বোনের সাফল্য দেখেই অণুপ্রাণিত হন তিনি। বোনের কর্মক্ষেত্র ও কর্মস্পৃহা দেখে অণুপ্রাণিত হয়েছেন অনেক বেশি। সর্বোপরি নারীর ক্ষমতায়নের জন্য মেয়েদের পুলিশের মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় যাওয়া জরুরী বলে মনে করেন শিরিন।
বড় বোনের সফলতার পরই সিদ্ধান্ত নেন বোনের মতো পুলিশ কর্মকর্তা হবার। সেজন্য বোনের দেখানো পথেই হেঁটেছেন। এক্ষেত্রে পরিশ্রম ও কৌশলগত প্রস্তুতি তাকে অনেক এগিয়ে নিয়েছে বলে তিনি জানান। তবে বেশি সময় পড়াশুনা করার চেয়ে মনোযোগ আর একাগ্রতার সাথে স্বল্পসময় পড়াটাকেই বেশি কার্যকরী মনে করেন তিনি।
বিশ্ববিদ্যালয়ে চতুর্থ বর্ষে পড়াকালেই নিতে শুরু করেন বিসিএসের প্রস্তুতি। আর সেক্ষেত্রে সার্বিক সহযোগিতা পেয়েছেন বড়বোন সিনিয়র সহকারি পুলিশ কমিশনার নাসরিন আক্তারের কাছ থেকে।
তার এ সাফল্যেরে পেছনে বাহুবল ডিগ্রী কলেজের প্রিন্সিপাল আব্দুর রব শাহীনের অনেক অবদান বলে উল্লেখ করেন শিরিন।
আব্দুর রব শাহীনকে আদর্শ উল্লেখ করে তিনি বলেন: স্যারের অবদান কখনোই ভুলবো না। স্যার সবসময়ই সব ছাত্র-ছাত্রীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে লেখাপড়ার খোঁজ নিতেন। ঝড়-জলের রাতে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে অন্ধকারে যখন থাকতাম তখনও স্যার আমাদের বাসায় আসতেন পড়ালেখার তত্ত্বাবধান করতে। এসে গাইড লাইন দিয়ে চলে যেতেন অন্য ছাত্র-ছাত্রীদের বাসায়।
আর তাই নিজের বিসিএসের ফলাফলটা বাবা-মাকে জানানোর পরই জানিয়েছেন শ্রদ্ধেয় শিক্ষককে।
তবে সাফল্যের পর থেকেই নেতিবাচক কিছু প্রশ্নেরও মুখোমুখি হতে হয়েছে শিরীন আক্তারকে। ‘তুমিও পুলিশে নিয়োগ পেয়েছো?’। ‘মেয়ে হয়ে এ পেশায় থাকবে কী করে?’ কারো কারো এরকম প্রশ্নে তিনি মোটেই দমে যেতে চান না। বরং নারীর ক্ষমতায়নে বিশ্বাসী এ মেধাবী নারী নির্যাতিত নারীদের সহায়তায় কাজ করতে চান।
বোনের সাথে একই প্লাটফর্মে থেকে কাজ করার আকাক্ষা শিরীনের। স্বপ্ন দেখেন এমন এক বাংলাদেশের যেখানে নারীরা স্বমহিমায় ও ক্ষমতায় পুরুষের কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে পৌঁছে যাবে সাফল্যের স্বর্ণ শিখরে।