177879

গ্রেপ্তারি পরোয়ানা তারেক রহমানের বিরুদ্ধে

তেজগাঁও থানার রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ তিনজনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন আদালত। আজ সোমবার ঢাকা মহানগর দায়রা জজ মো. কামরুল হোসেন মোল্লা এই পরোয়ানা জারি করেন।
পরোয়ানাভুক্ত অপর দুই আসামি হলেন, বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল একুশে টিভির সাংবাদিক কনক সারোয়ার ও মাহতির ফারুকী খান।

ওই আদালতের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর তাপস কুমার পাল বলেন, মামলাটিতে চার্জশিট দাখিল হওয়ার পর সম্প্রতি এই আদালতে বিচারের জন্য আসে। মামলার ৪ জন আসামির মধ্যে তারেক রহমানসহ ৩ জন পলাতক থাকায় সোমবার আদালত মামলার চার্জশিট আমলে নিয়ে তাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন। মামলার অপর আসামি একুশে টেলিভিশনের (ইটিভি) সাবেক চেয়ারম্যান আবদুস সালাম জামিনে আছেন।

২০১৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর ডিবি পুলিশের ইন্সপেক্টর ইমদাদুল হক ঢাকা সিএমএম আদালতে ওই চার্জশিট দাখিল করেন। ২০১৫ সালের ৮ জানুয়ারি তারেক রহমান এবং আবদুস সালামের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রেহের এই মামলাটি দায়ের করেন তেজগাঁও থানার এসআই বোরহানউদ্দিন। পরে ওই মামলায় ২০১৬ সালের ১১ জানুয়ারি আব্দুস সালামের ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর ঢাকা সিএমএম আদালত। ওই রিমান্ড শেষে ওই বছর ১৯ জানুয়াীর আদালতে স্বীকারোক্তিমুলক জবানবন্দি প্রদান করেন।

মামলার অভিযোগে বলা হয়, ২০১৫ সালের ৫ জানুয়ারি বাংলাদেশ সময় দিবাগত রাত ১টা ২৮ মিনিটে (যুক্তরাজ্য সময় (৪/১/২০১৫ ইং সন্ধ্যা ৭ টা ২৮ মিনিটে যুক্তরাজ্য বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) আয়োজিত “৫ জানুয়ারি গনতন্ত্র হত্যা দিবস” ব্যানারে এক প্রতিবাদ সভায় বিভিন্ন বিচারাধীন মামলার পলাতক আসামি বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান জনাব তারেক রহমান এক সুদীর্ঘ (প্রায় ৫০ মিনিট) বক্তব্য প্রদান করেন। তাঁর এই দীর্ঘ বক্তব্য একুশে টেলিভিশন সরাসরি সম্প্রচার করে। উক্ত বক্তব্যে “বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি একজন রাজনৈতিক নেতার কবর জেয়ারত করে এবং রাজনৈতিকত বক্তব্য দিয়ে নিরপেক্ষ ও ন্যায় বিচার করতে পারবেন না।”

মর্মে তিনি মন্তব্য করেন, যা স্বাধীন বিচার বিভাগের প্রতি অবজ্ঞা প্রদর্শনের শামিল। সেই সাথে রাষ্ট্রর অন্যতম অঙ্গ বিচার বিভাগের প্রতি জনগনের ঘৃনা ও বিদ্বেষ সৃষ্টি করার ইন্ধন যোগায়। বিডিআর হেডকোয়ার্টাস পিলখানায় আওয়ামীলীগের মুখোশপরা লোকেরা ৭৫ জন সেনা অফিসারকে হত্যা করে বলেও তারেক রহমান মিথ্যা বক্তব্যে বলেন।

উক্ত হত্যাকান্ডের তদন্তের দাবীদার সেনা অফিসারদের চাকুরিচ্যুত করা হয় মর্মে বক্তব্য দেন। তাঁর এ ধরনের উস্কানিমূলক বক্তব্যের মাধ্যমে সেনাবাহিনীর মধ্যে বিভাজন সৃষ্টি করতঃ সরকারের বিরুদ্ধে দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনীকে উস্কে দেয়ার তথা সেনাবাহিনীর মধ্যে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করা হয়েছে। একটি বিশেষ এলাকার পুলিশকে দিয়ে বিএনপির নেতাকর্মীদের উপর নির্যাতন চালিয়ে যাচ্ছে” বক্তব্যের মাধ্যমে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মধ্যে অসন্তোষ ও বিভক্তি সৃষ্টি এবং শৃঙ্খলা বাহিনীর চেইন অব কমান্ড ভঙ্গ করতে প্ররোচিত করার মাধ্যমে আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির প্রয়াস চালান। তারেক রহমান প্রশাসনের লোকদের মধ্যে বিভাজন সৃষ্টি করার লক্ষে গনতান্ত্রিক ভাবে প্রতিষ্ঠত সরকারের বিরুদ্ধে ব্যাপক আন্দোলন গড়ে তুলতে বক্তব্যে উল্লেখ করেন।

তিনি তার বক্তব্যে ঢাকা শহরকে অন্য জেলা শহর থেকে এবং ঢাকার এক এলাকাকে অন্য এলাকা থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেওয়ার জন্য তার দলের নেতাকর্মীদের নির্দেশ দেন, যার ফলে বিএনপি জামাতসহ ২০ দলীয় ঐক্য জোটের সমর্থকরা গত ৫ জানুয়ারি দেশের বিভিন্ন স্থানে ধ্বংসাত্মক কার্যক্রমের মাধ্যমে জানমালের ব্যাপক ক্ষতি সাধন করার উস্কানি পায় এবং তিনি বাংলাদেশের অখন্ডতা ও পরোক্ষভাবে সার্বভৌমত্বের প্রতি হুমকি প্রদর্শন করেছেন।

তার ওই সকল বক্তব্য আব্দুস সালাম এবং অন্যান্যদের সহযোগিতায় ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠিত, গনতান্ত্রিক ও আইনানুগ সরকারের বিরুদ্ধে মিথ্যা, বানোয়াট, ভিত্তিহীন, উস্কানিমূলক বিভ্রান্তিকর তথ্যাদি একুশে টেলিভিশনের মাধ্যমে প্রচার করে রাষ্ট্রদ্রোহিতার অপরাধ করেছেন।

উল্লেখ্য, ২০১৫ সালের ৫ জানুয়ারি মধ্যরাতে ইটিভি কার্যালয়ের নিচ থেকে সালামকে আটক করে গোয়েন্দা পুলিশ। এরপর তাকে ক্যান্টনমেন্ট থানার পর্নোগ্রাফি আইনের একটি মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে ৬ জানুয়ারি আদালতে হাজির করলে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়।

ad

পাঠকের মতামত