177774

‘আমাকে জড়িয়ে ধরে আমার পেছনে মাস্টারবেটিং শুরু করে’

এবার হলিউড মুঘল হারভে উইন্সটেনের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ আনলেন কানাডার অভিনেত্রী এরিকা রোজেনবাম। তিনি বলেছেন, একবার তাকে হোটেলের বাথরুমে জোর করে নিয়ে যান উইন্সটেন। তার কাঁধ আঁকড়ে ধরেন। তার সামনেই অনৈতিক কাজ শুরু করেন, যা ভাষায় প্রকাশ করা কঠিন। ক্যারিয়ার গড়ার শুরুর দিকে তিনি এমন আচরণের শিকার হয়েছিলেন। এ খবর দিয়েছে অনলাইন বিজনেস ইনসাইডার।

এতে বলা হয়, এরিকা রোজেনবাম কথা বলেছেন দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমসের সাংবাদিক যোডি ক্যান্টরের সঙ্গে। এতে উইন্সটেনের হাতে কিভাবে বছরের পর বছর যৌন হয়রানির শিকার হয়েছিলেন এবং আবেগতাড়িত করা হয়েছে তা নিয়ে তিনি কথা বলেছেন। কানাডার টরন্টোতে এক চলচ্চিত্র উৎসবে উইন্সটেনের এক সহকারী তাদের সাক্ষাতের আয়োজন করেছিলেন। তখন এরিকা রোজেনবাম ২৪-২৫ বছর বয়সী টগবগে যুবতী। কয়েক বছর আগে তিনি উইন্সটেনের সঙ্গে তার প্রথম সাক্ষাৎ হয়েছিল এক পার্টিতে। সেখানেই উইন্সটেন তার কাছ থেকে যৌন সুবিধা নেয়ার চেষ্টা করেছিলেন। ওই সাক্ষাতের আগে এরিক রোজেনবামকে একটি টেক্সট ম্যাসেজ পাঠিয়েছিলেন উইন্সটেনের ওই সহকারী। তাতে ওই সহকারী বলেছিলেন, উইন্সটেন টাইট শিডিউলের মধ্যে আছেন। তাই তিনি রোজেনবামের সঙ্গে তার হোটেল কক্ষেই সাক্ষাৎ করতে চান। নিউ ইয়র্ক টাইমসের অনলাইনে প্রকাশিত একটি ভিডিওতে রোজেনবাম বলেছেন, আমার মনে হয়েছিল সেখানে যাওয়া ঠিক হবে না। তারপরও আমি গেলাম। কারণ, আমার এমন অবস্থানে থাকলে আপনিও যেতেন। ওই সময় না বলাটা আমার জন্য উপযোগী ছিল না।

রোজেনবাম বলেন, তিনি হোটেলে পৌঁছলেন। উইন্সটেনের সহকারী দরজা খুলে দিয়ে চলে গেলেন। এ কথা বলতে বলতে এরিকা রোজেনবামের কণ্ঠ স্তব্ধ হয়ে আসে। তিনি বলতে থাকেন এরপর যা ঘটেছে তা জটিল, কঠিন। রোজেনবাম বলেন, কক্ষের দরজা খুলে দিতেই তার ভেতর থেকে আহ্বান জানালেন উইন্সটেন। এ সময় তার পরনে কোনো প্যান্ট ছিল না। আমি শুধু বলতে পারি, তিনি এ সময় শুধু একটি শার্ট পরা ছিলেন। এমন অবস্থায় থাকার জন্য তিনি রোজেনবামের কাছে ক্ষমা চান। তিনি তাকে বলেন, তার শিডিউল ঠিক রাখতে দ্রুত কাজ করতে হচ্ছে। তিনি গোসল করবেন।

রোজেনবাম বলেন, এ সময় উইন্সটেনের শার্টটি শুধু তার কোমর পর্যন্ত ছিল। নিচে কিছুই ছিল না। এ অবস্থায় উইন্সটেন তাকে বলেন, তিনি যখন গোসল সারবেন তখন সেখানে গিয়ে আলোচনা চালাতে রাজি কিনা রোজেনবাম। কারণ, তিনি ভীষণ ব্যস্ত। রোজেনবাম জবাবে বলেন, আপনি খুব ব্যস্ত। আমরা না হয় পরে আলোচনা করে নেবো। এই বলে হোটেল কক্ষ থেকে বেরিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন রোজেনবাম। এ সময় উইন্সটেন ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন।

তিনি রোজেনবামকে বলেন, এখানে মাত্র একটি মিনিট দাঁড়াও। নিউ ইয়র্ক টাইমসকে দেয়া ভিডিও সাক্ষাৎকারে এরিক রোজেনবাম এ কথা বলতে বলতে কেঁদে ফেলেন। বলেন, এ সময় উইন্সটেন তাকে তার বাথরুমে নিয়ে যান। আমি মনে করতে পারছি না ওই সময় আমি কিছু বলেছিলাম কিনা। তবে কথা বলতে আমি তখন খুব ভয় পাচ্ছিলাম।

সাক্ষাৎকারের এ পর্যায়ে কাহিনীটি গ্রাফিক হিসেবে উপস্থাপন করা হয়। তাতে রোজেনবাম বলেন, তিনি আমাকে কাঁধের পেছন থেকে জড়িয়ে ধরলেন। আমাকে সামনের আয়নার দিকে তাকাতে বললেন। আমি তাকে বললাম, আপনি নিজের দিকে তাকান। রোজেনবাম বলেন, উইন্সটেন তখন নিজে নিজেই আমার পেছনে দাঁড়িয়ে মাস্টারবেটিং শুরু করে। তিনি পেছন থেকে আমাকে জড়িয়ে ধরেছিলেন। কাঁধের ওপর দিয়ে আমার মুখের দিকে তাকিয়ে ছিলেন। এ সময়ের অনুভূতি সম্পর্কে রোজেনবাম বলেন, আমি স্মরণ করতে পারছি আয়নায় আমার মুখ। আমি তখন বিশ্বাস করতে পারছিলাম না যে, সেখানে দাঁড়িয়ে ছিলাম আমি। বিশ্বাস করতে পারছিলাম না যে, আমি এ ঘটনা ঘটতে দিচ্ছি। আমাকে ভীষণ অপরাধী মনে হচ্ছিল। আমি জানি না এভাবে এক মিনিট নাকি পাঁচ মিনিট পেরিয়ে গিয়েছিল। এ অবস্থায় আমি তাকে বলেছিলাম আমি সেখানে থাকতে পারবো না। আমি দরজার দিকে হাঁটা শুরু করলাম। আমার মনে হয় না তিনি যা করছিলেন তা শেষ করতে পেরেছেন। তারপর আমাকে তিনি কিছু বলেছিলেন বলে আমার মনে পড়ে না। এরপরে আমার কাছে কেমন লেগেছিল তা স্মরণে আছে। আমি জানতাম না এ অভিযোগ যদি আমি তুলি তাহলে তাতে কোনো কিছু ঘটবে কিনা। আমার তখন মাথা কাজ করছিল না। নিজেকে খুব বোকা মনে হচ্ছিল। তিনি ছিলেন বিশাল ক্ষমতার অধিকারী। আমার মনে হয়েছিল আমি তার ফাঁদে পড়ে গিয়েছি। আমি শুধু ভাবতে থাকি কিভাবে এর থেকে আমি বেরিয়ে আসতে পারি।

উল্লেখ্য, হারভে উইন্সটেনের বিরুদ্ধে যৌন নির্যাতনের অভিযোগ রোজেনবামের একারই নয়। হলিউডের কয়েক ডজন নামিদামি, প্রথম সারির আধুনিক সময়ের অভিনেত্রী একই রকম অভিযোগ এনেছেন। এর মধ্যে রয়েছেন গাইনেথ পালট্রো, অ্যানজেলিনা জোলি, অ্যাশলে জুডের মতো অভিনেত্রীরা। ওদিকে নিউ ইয়র্ক টাইমসে এক প্রবন্ধে অস্কার বিজয়ী অভিনেত্যী লুপিতা নাইওঙ-ও অভিযোগ করেছেন উইন্সটেনের বিরুদ্ধে। এতে উইন্সটেনের সঙ্গে ধারাবাহিক কতগুলো মিটিং সম্পর্কে তিনি বিস্তারিত লিখেছেন। এর মধ্যে তিনি তাকে ক্যারিয়ার গড়ার পরামর্শ দেন। পাশাপাশি তার কাছ থেকে যৌন সুবিধা নেয়ার চেষ্টা করেন। ওদিকে স্বামী উইন্সটেনের বিরুদ্ধে একের পর এক যৌন কেলেঙ্কারির পাহাড় জমতে থাকায় তাকে ছেড়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন তার স্ত্রী জর্জিনা। আবার নিজের প্রতিষ্ঠান মিরাম্যাক্স থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে হারভে উইন্সটেনকে। সূত্র: মানবজমিন

ad

পাঠকের মতামত