177644

আশঙ্কা বড় ঘূর্ণিঝড়ের

জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব দিন-দিন প্রকট হচ্ছে বাংলাদেশে। প্রকৃতির বৈরী আচরণে বিঘ্ন হচ্ছে মানুষের জীবনযাত্রা। আবহাওয়া অধিদপ্তরের চলতি মাসের আগাম পূর্বাভাসে বলা হয়েছিল অক্টোবরের শুরুতেই বিদায় নেবে বর্ষা, কারণ এ সময় দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মৌসুমি বায়ুপ্রবাহ থাকবে না। অথচ মাসের শেষ দিকেও বর্ষার দাপট। আগামী রবিবার পর্যন্ত দেশের প্রায় সর্বত্রই বৃষ্টি ঝরবে। আর মাসের শেষ সপ্তাহে আরেক দফা বৃষ্টিপাতের মধ্য দিয়ে বর্ষার বিদায় নেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে বড় ঘূর্ণিঝড়ের আশঙ্কা রয়েছে নভেম্বরে। সে কারণে ওই সময় বৃষ্টি হবে এমন শঙ্কা আবহাওয়াবিদদের।

অক্টোবরের শেষ সপ্তাহের সম্ভাব্য বৃষ্টিই কি মৌসুমের শেষ বৃষ্টি, জানতে চাইলে সার্ক আবহাওয়া কেন্দ্রের বিজ্ঞানী আবদুল মান্নান জানান, এটিই শেষ বৃষ্টি নয়। কারণ অক্টোবর-নভেম্বরে বড় ধরনের ঘূর্ণিঝড় হয়। সেজন্য আরও বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

এদিকে গতকাল সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ঢাকায় ৭৬ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে, যা পরিবেশ বিজ্ঞানের ভাষায় ‘ভারী বর্ষণ’। আবহাওয়া অধিদপ্তর জানায়, বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় সৃষ্ট নিম্নচাপের কারণে বৃহস্পতিবার থেকে রাজধানীসহ দেশের অনেক জায়গায় বৃষ্টি ঝরছে। গতকাল থেকে থেমে থেমে চলা এই বৃষ্টি শনিবার পর্যন্ত ঝরবে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস। তবে রবিবার তা দুর্বল হতে পারে। দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে দেশের সব সমুদ্র বন্দরে তিন নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত বহাল রাখা হয়েছে।

আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, নিম্নচাপের কারণে উপকূলীয় এলাকায় সাগর উত্তাল। সেই সঙ্গে ঝড়োবাতাস বইছে। এসব এলাকায় নৌযানগুলোকে উপকূলের কাছাকাছি সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে। শনিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত বৃষ্টিধারা অব্যাহত থাকবে। তবে সন্ধ্যার পর বৃষ্টি ঝরবে থেমে থেমে।

এই বৃষ্টির কারণে পাহাড়ধসের আশঙ্কা আছে কিনা জানতে চাইলে আবদুল মান্নান বলেন, চট্টগ্রামে স্বাভাবিক বৃষ্টি হচ্ছে। তাই আপাতত পাহাড়ধসের আশঙ্কা কম।

আবহাওয়ার সর্বশেষ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, নিম্নচাপটি উত্তর ও উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হয়ে ১৯ অক্টোবর মধ্যরাতে ভারতের উড়িষ্যা উপকূলের কাছে প্যারাদ্বীপ অতিক্রম করেছে। বর্তমানে এটি স্থল নিম্নচাপরূপে উড়িষ্যা ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে। এটি আরও উত্তর-পূর্বদিকে অগ্রসর হয়ে দুর্বল হতে পারে। এর প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগর এলাকায় বায়ু চাপের তারতম্যের আধিক্য বিরাজ করছে এবং গভীর সঞ্চালনশীল মেঘমালা তৈরি অব্যাহত। তাই চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরগুলোকে তিন নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।

নিম্নচাপের ফলে উপকূলীয় জেলা কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, চাঁদপুর, ভোলা, বরিশাল, পটুয়াখালী, বরগুনা, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, খুলনা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরগুলোর নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে এক থেকে দুই ফুট অধিক উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে। উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত সব মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে। সেই সঙ্গে দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি থেকে ভারী বর্ষণ হতে পারে।

এদিকে বৈরী আবহাওয়ার কারণে সারা দেশে ছোট আকারের লঞ্চ চলাচল বন্ধ রাখতে বলেছে অভ্যন্তরীণ নৌচলাচল কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)। ৬৫ ফুটের কম দৈর্ঘ্যরে নৌযানের ক্ষেত্রে এ নির্দেশনা। আর উপকূলীয় এলাকা হাতিয়া, বেতুয়া ও রাঙাবালিতে সব ধরনের লঞ্চ চলাচল বন্ধ থাকবে।

বিআইডব্লিউটিএ সূত্র জানায়, গতকাল বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে সদরঘাট থেকে হাতিয়ার উদ্দেশে ছেড়ে যেতে অপেক্ষমাণ সব লঞ্চের যাত্রাই বাতিল করা হয়। পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত উপকূলীয় এলাকায় কোনো ধরনের লঞ্চ চলবে না বলে জানান তিনি।

অন্যদিকে পদ্মা উত্তাল হয়ে ওঠায় শিমুলিয়া-কাঁঠালবাড়ী রুটেও সব ধরনের নৌযান পারাপার বন্ধ রেখেছে কর্তৃপক্ষ। ফলে দুই ঘাটে কয়েকশ গাড়ি আটকা পড়েছে। নিম্নচাপের প্রভাবে শুক্রবার সকাল থেকেই পদ্মা উত্তাল হতে শুরু করে। বেলা পৌনে ১২টার দিকে শিমুলিয়া-কাঁঠালবাড়ী নৌরুট দিয়ে লঞ্চ, স্পিডবোট ও ডাম্প ফেরি চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। তবে বিকাল পর্যন্ত ফেরি দিয়ে কোনো রকমে পারাপার সচল রাখা হলেও বাতাসের তীব্রতা বেড়ে যাওয়ায় ৪টার দিকে তাও বন্ধ করে দেওয়া হয়। তাই পদ্মার মুন্সীগঞ্জ প্রান্তে শিমুলিয়া এবং মাদারীপুর প্রান্তে কাঁঠালবাড়ী ঘাটে পাঁচ শতাধিক যানবাহন আটকা পড়েছে।

মানিকগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌপথে শুক্রবার দুপুর থেকেই সব ধরনের লঞ্চ চলাচল বন্ধ রয়েছে। বিআইডব্লিউটিএ আরিচা কার্যালয়ের ট্রাফিক পরিদর্শক ফরিদুল ইসলাম বলেন, বৈরী আবহাওয়ার কারণে নদীতে বড় বড় ঢেউয়ের সৃষ্টি হয়। তাই দুর্ঘটনা এড়াতে সকাল থেকে স্বল্পসংখ্যক বড় লঞ্চ যাত্রী পারাপার করে। তবে দুপুর থেকে নদীতে উত্তাল ঢেউ সৃষ্টি হলে দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে তাও বন্ধ করে দেওয়া হয়। যাত্রীদের লঞ্চের পরিবর্তে ফেরিতে নদীপথ পাড়ি দিতে অনুরোধ করা হয়েছে।

মোংলা প্রতিনিধি জানান, নিম্নচাপের কারণে মোংলা বন্দরে অবস্থানরত দেশি-বিদেশি বাণিজ্যিক জাহাজে পণ্য খালাস-বোঝাই কাজ ব্যাহত হচ্ছে। বন্ধ রাখা হয়েছে খাদ্যবাহী জাহাজের পণ্য বোঝাই-খালাস কাজ। এর সত্যতা নিশ্চিত করেছেন বন্দর কর্তৃপক্ষের পরিচালক (ট্রাফিক) গোলাম মোস্তাফা।

ad

পাঠকের মতামত