৯০ টাকায় শুরু করে এখন লাখপতি
আগে কাঠের মিলে খড়ি ফেড়ে জীবন চালাতেন। আট বছর আগে হঠাৎ মাথায় বুদ্ধি এলো সস্তায় মিষ্টি তৈরি করার।
এরপরে ৯০ টাকা মুলধন দিয়ে শুরু করেন তিনি। সেই মুলধন এখন দাঁড়িয়েছে লাখ টাকায়। নিজের পাশাপাশি কাশেম কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেছেন অনেক বেকার যুবকের।
কথা হচ্ছিলো রাজশাহীর পবা উপজেলার পাকুড়িয়া গ্রামের আবুল কাশেমের। বয়স ষাটের ঘর পেরিয়েছে অনেক আগেই। এ বয়সেই আবুল কাশেম এখন অনেকের অনুকরণীয়।
আবুল কাশেম জানান, বিভিন্ন পেশায় নিজেকে খাপ খাইয়ে নিতে না পেরে তিনি হতাশায় ভুগছিলেন। আট বছর আগেও হাড় ভাঙা খাটুনি করে জীবিকা নির্বাহ করেছেন।
নিজের চেষ্টা ও অদম্য ইচ্ছা থাকলে একজন মানুষ যে কোন বয়সেই নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারে। আবুল কাশেম তা প্রমাণ করে দেখিয়েছেন।
আবুল কাশেম জানান, বাবার স্মৃতি তার মনে পড়ে না। পারিবারিক অস্বচ্ছলতার কারণে মা কষ্ট করে বড় করেন। জীবনের শুরুতে অন্যের দোকানে কাজ, চা বিক্রি করে, ভ্যান চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেছেন। শেষে নিজ গ্রামের বাজারে খড়ি ফাড়তেন।
আবুল কাশেম বলেন, মা গ্রামের বিভিন্ন মানুষের কাছে সাহায্য লই আমগো মুখে খাওন তুলে দিছে। এখন মায়ে নাই। থাকলে মা’এরে সেবা করতে পারতাম।
আবুল কাশেমের জীবনের গল্পের পরিবর্তনের শুরু গত সাত বছর আগে। কাশেম নওগাঁর একটি গ্রামে বেড়াতে যান।
সেখানে গিয়ে কাশেম দেখেন, গ্রামের একটি পরিবার চিনি, আটা, বুন্দিয়া ব্যবহার করে বিভিন্ন ধরণের মুখরোচক মিষ্টি খাবার তৈরি করে বাজারে বিক্রি করছেন।
উদ্যোগটা কাশেমের আগ্রহকে প্রসারিত করে। সে পুরো বিষয়টা খুব ভালো করে পর্যবেক্ষণ করে ও প্রয়োজনীয় সকল তথ্য সংগ্রহ করতে থাকে।
এবার রাজশাহীতে ফেরার পালা। কাজ শিখে আসার পরে ব্যবসা শুরু করতে ৯০ টাকা দিয়ে বাজার থেকে কাঁচামাল হিসেবে আটা, চিনি ও বুন্দিয়া কিনে নিয়ে আসেন।
প্রয়োজনীয় দিক-নির্দেশনা দিয়ে স্ত্রীর হাতে ধরিয়ে দেন কাঁচামাল। যা চেয়ে ছিলেন তার কিছুই হলো না। তবে কাশেম হতাশ হননি। প্রায় এক সপ্তাহ পর টাকা সংগ্রহ করে আবার কাঁচামাল কিনে আনেন।
এবার স্ত্রী তাকে আর হতাশ করেননি। একই সাথে তাকেও আর পিছু ফিরে তাকাতে হয়নি। সে সময়ের ৯০ টাকা দিয়ে শুরু করা ব্যবসা এখন এক লাখে গিয়ে ঠেকেছে।
এখন তিনি শুধু নন। কর্মসংস্থান হচ্ছে স্থানীয় ২৫ জন দুস্থ পরিবারের। কাশেমের কর্মচারী বাবদ প্রতিদিনকার খরচ ১০ হাজার টাকা। প্রায় ২০ পদের মুখরোচক মিষ্টি খাবার তিনি তৈরি করেন।
যার মধ্যে রয়েছে মিষ্টি সিঙ্গারা, মিষ্টি, কুশলী ইত্যাদি। তার এই মুখরোচক খাবার বিভিন্ন উপজেলার বেকারি এসে নিয়ে যায়। পরে তা স্থানীয় বাজেরে বিক্রি করা হয়।
এক সময়ে অবহেলিত আবুল কাশেম বর্তমানে স্থানীয়দের মাঝে একজন ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা, আবুল কাশেম একজন অনুপ্রেরণার নাম।