177286

‘আজ আমি গরিব বলে অভিনয় শিল্পীরা আমাকে অন্যায়ভাবে মারলো’

বিনোদন ডেস্ক : ঘটনাটা গত ১৫ অক্টোবরের। ঢাকার উত্তরার ‘স্ক্রিপ্ট হাউজ’ নামের একটি শুটিং হাউজের ম্যানেজার আলাউদ্দিন ও তার কয়েকজন সহকর্মীরা তরুণ অভিনেতা সৌমিক এবং তার ইউনিটকে মারধর ও লাঞ্ছিত করেন বলে অভিযোগ ওঠে।

এই অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে অভিনয় শিল্পী সংঘ, প্রডিউসার অ্যাসোসিয়েশন, ডিরেক্টরস গিল্ড ও হাউজ মালিক সমিতির নেতাদের উপস্থিতিতে সকলের পর্যালোচনার পর সবাই এই সিদ্ধান্তে উপনীত হন যে আলাউদ্দিন দোষী এবং ভবিষ্যতে আলাউদ্দিন স্ক্রিপ্ট হাউজসহ অন্য যে কোনো হাউজে আর কাজ করতে পারবে না। সে যদি কোনো হাউজে কাজ করে তবে সেই শুটিং হাউজে কেউ কাজ করবে না।

তবে ১৭ তারিখ দুপুরে ঐ দিনের ঘটনার কিছু সিসিটিভির ফুটেজ পাঠানো হয়। ফুটেজগুলো পর্যালোচনা করে দেখা যায় যে শুরু থেকেই তরুণ অভিনেতা সৌমিক উত্তেজিত ছিলেন। এবং এক পর্যায়ে তিনি স্ক্রিপ্ট হাউজের ম্যানেজার আলাউদ্দিনকে মারধর শুরু করেন। মূলত ‍তিনিই মারপিটের সূত্রপাত ঘটান।

অভিযোগে বলা হয়েছিল আলাউদ্দিন ও তার কয়েকজন সহযোগী মিলে অভিনেতা সৌমিককে মারধর করেন। কিন্ত ঘটনাস্থলে থাকা আলাউদ্দিন জানান ঐ দিন শুটিং স্পটে আলাউদ্দিনসহ স্ক্রিপ্ট হাউজের তিনজন স্টাফ ছিলেন। অথচ সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায় যে সৌমিকের সঙ্গে থাকা ১০ থেকে ১২ জনের একটি দল আলাউদ্দিনের উপর হামলা চালায়।

এ ঘটনার সত্যতা জানতে যোগাযোগ করা হয়েছিল স্ক্রিপ্ট হাউজের মালিক ইমরানুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আমি বলবো পুরো অন্যায় আচরণ করা হয়েছে আমার ম্যানেজারের সঙ্গে।

গতকাল চার সমিতি মিলে যে বিচারে বসা হয়েছিল সেখানে তারা আমাদের কোনো কথা শুনেননি। বিভিন্ন শুটিং বাড়ির মালিক উপস্থিত ছিলেন বিচারে তাদেরও কথা বলতে দেওয়া হয়নি। আমি বলব আলাউদ্দিন আজ অসহায় ও গরিব বলে তাকে এই শাস্তি দেওয়া হয়েছে। অথচ সে কোন অন্যায় করিনি। শুধু তাই নয়, বিচারে ডেকেও তাকে মারা হয়েছে। পরে তাকে আমরা বাংলাদেশ মেডিকেলে ভর্তি করি। এটা সত্যিই দুঃখজন। শিল্পী সমাজের কাছে এ ধরনের আচরণ আশা করিনি।’

 

মূলত ১৫ অক্টোবর রাতে শুটিং বাড়ির ভাড়া ও বুকিং সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে তর্কে জড়িয়ে পড়েছিলেন ম্যানেজার ও নির্মাতা পার্থ। তারা ১৫ ও ১৬ অক্টোবর দুদিন শুটিং হাউজ বুকিং দিয়েছিলেন। কিন্তু নির্মাতা পার্থ ১৫ অক্টোবর শুটিং শেষ করে রাতে জানান যে তারা ১৬ অক্টোবর আর শুটিং করবেন না। কিন্তু শুটিং বাড়ির সমিতির নিয়ম অনুসারে কোনো বুকিং বাতিল করলে তা ৭২ ঘণ্টা আগে জানাতে হবে। তা না হলে পরবর্তী যে দিন শুটিং করবেন তার অগ্রীম ভাড়া দিতে হবে।

এই বিষয় নিয়ে শুটিং বাড়ির ম্যানেজার ও নির্মাতার সঙ্গে সাধারণত কথা হয়। কিন্তু অভিনেতা সৌমিক কেনো এ ধরনের তর্কে জড়িয়ে গেলেন? এ প্রশ্নের উত্তর জানতে যোগাযোগ করা হয়েছিল তার সঙ্গে কিন্তু তাকে পাওয়া যায়নি।

কিন্তু এ বিষয়ে তার ফেসবুক স্ট্যাটাসের একটি অংশে তিনি বলেছেন, ‘তিনি [আলাউদ্দিন] বলেছিলেন একদিনের পেমেন্ট নাকি বেশি দিতে হবে। আর আমি ছিলাম গাড়িতে বসা। কিন্তু শুটিং বাড়ির গেট বন্ধ করে দেয় তারা। তারপর আমাদের ইউনিটের লোকজনের উপর চড়াও হয়ে যায়। আমি প্রতিবাদ করতে গেলে আমাকে লাঠিসোঠা নিয়ে তার সহকর্মীরা মিলে মারতে থাকে।’

যদিও সিসিটিভির ফুটেজে কোথাও কাউকে লাঠি নিয়ে সৌমিককে মারতে দেখা যায়নি। তবে এ বিষয়ে কি বলছেন অভিযুক্ত আলাউদ্দিন। চলুন শুনি তার মুখে, ‘দেখুন আমি গরিব মানুষ। চাকরি করে খাই। মালিককে দিন শেষে আমার হিসাব দিতে হয়। শুটিং বাড়ি বুকিং দিয়ে সেটা কেউ হুট করে বাতিল করতে পারেন না। তার জন্য একটা ক্ষতিপূরণ দিতে হয়। আমি কেনো টাকা চাইলাম, এটাই হল আমার অপরাধ। আর আমার তো সৌমিকের সঙ্গে কথা বলার কথা না। তিনি নিজ থেকে এসে আমার সঙ্গে তর্ক করেছেন। এবং একটা সময় এসে আমাকে মারধর শুরু করেন। আমি সেদিনের ঘটনা ভুলেই গেছিলাম। কিন্তু গতকাল যখন আমাকে বিচারের জন্য ডাকা হল হৈচৈ শুটিং স্পটে, তখন আমি সেখানে গিয়ে মার খেয়েছি। আজ আমি গরিব বলে আমাকে শিল্পীরা অন্যায়ভাবে মারলো। অন্যায় শাস্তি দিলো।’

এ বিষয়ে আপনি আইনের আশ্রয় নেবেন কিনা? এমন প্রশ্নের জবাবে জনাব আলাউদ্দিন বলেন, ‘আমি চাকরি করে খাই। আমার ভালো মন্দ সব আমার মালিক দেখবেন। তারা যদি মামলা করতে বলেন তাহলে মামলা করবো।’

১৬ অক্টোবর উত্তরার শুটিং বাড়ি হৈচৈতে যে বিচার অনুষ্ঠিত হয়, সেখানে উপস্থিত ছিলেন অভিনেতা রওনক হাসান। তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে জনাব রওনক বলেন, ‘দেখুন সে গরিব বলে তার সঙ্গে অবিচার বা অন্যায় করা হয়েছে বিষয়টা এমন না। আর বিচারের আগে তাকে কারা মেরেছে তা আমি বলতে পারবো না। তবে একটু গন্ডগোলের আওয়াজ পেয়েছিলাম। আর আলাউদ্দিনকে নিয়ে এটা নতুন অভিযোগ না। এর আগেও তার বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ পাওয়া গেছে। আমরা সবকটি সমিতির সঙ্গে কথা বলেই এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমি মনে করি আমরা অন্যায় করিনি।’

ad

পাঠকের মতামত