আড়াই ঘণ্টা আলোচনার পর হঠাৎ কাদের সিদ্দিকীর সংলাপ বয়কট
নিজস্ব প্রতিবেদক : জিয়াউর রহমানকে গণতন্ত্রের পুনঃপ্রতিষ্ঠাতা বলায় প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কেএম নূরুল হুদার পদত্যাগ দাবি করেছেন বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী। সিইসির এই বক্তব্যের প্রতিবাদে নির্বাচন কমিশনের সংলাপও বয়কট করেছে কাদের সিদ্দিকীর দল কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ। গতকাল নির্বাচন ভবনের সম্মেলন কক্ষে ইসির সংলাপে অংশগ্রহণের আড়াই ঘণ্টা পর একেবারে শেষ পর্যায়ে এসে এ বয়কটের কথা জানান কাদের সিদ্দিকী। পরে বাইরে এসে সাংবাদিকদের কাছে সংলাপ বয়কটের কথা আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করেন তিনি।
কাদের সিদ্দিকী বলেন, আমরা নির্বাচন কমিশনে আমাদের আলোচনা অব্যাহত রাখতে পারিনি। আলোচনা বয়কট করেছি এই জন্য যে, গতকাল সিইসি তার টোটাল কমিশনের সঙ্গে আলোচনা করে নয় তিনি এককভাবেই বলেছেন যে, জিয়াউর রহমান বহুদলীয় গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেছেন। জিয়াউর রহমান যদি বহুদলীয় গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা করে থাকেন তাহলে বহুদলীয় গণতন্ত্রকে কেউ না কেউ হত্যা করেছিল। সেই হত্যা করা, বাতিল করা, স্থগিত করা বা নির্বাসনে দেয়া গণতন্ত্রকে জিয়াউর রহমান পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেছেন। এর সঙ্গে আমরা একমত না। তিনি আরো বলেন, সিইসি একটি নিরপেক্ষ প্রতিষ্ঠান। সিইসি একথা বলতে পারেন না যে, জিয়াউর রহমান গণতন্ত্রকে প্রতিষ্ঠা করেছেন আর শেখ মুজিবুর রহমান গণতন্ত্রকে হত্যা করেছেন। তাই আমি মনে করি এই মুহূর্তে সিইসির পদত্যাগ করা উচিত।
তিনি একটা অত্যন্ত কঠিন বে-হিসেবি কথা বলেছেন। দেশে যে লড়াই সে লড়াই গণতন্ত্রের লড়াই। সে লড়াই মানুষের অধিকারের লড়াই। সে জন্য আমাদের ডাকা। এই আলোচনায় আমরা অংশগ্রহণ করলেও সেটাকে আমরা স্বীকার করতে পারছি না। বক্তব্য প্রত্যাহার না করলে সিইসির পদত্যাগ করা উচিত উল্লেখ করে কাদের সিদ্দিকী বলেন, প্রধান নির্বাচন কমিশনারের বক্তব্যের নিন্দা জানাচ্ছি। এই বক্তব্যকে প্রত্যাহার না করলে আমি তার পদত্যাগ কামনা করছি। তিনি একটা ছোট ব্যাখ্যা করেছেন যে, যারা এসেছেন তাদেরই যেসমস্ত সুকর্ম আছে আমরা ওয়েবসাইট থেকে নিয়ে সেগুলো বলার চেষ্টা করেছি। আমি ওইভাবেই জিয়াউর রহমানের কথা বলেছি।
সেটা একরকমের কথা। তবে সেটা উল্লেখ করে বললে তার কথা হতো না। বহুদলীয় গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেছিলেন জিয়াউর রহমান এটা কিন্তু সিইসির কথা প্রমাণ করে যদি তিনি এটা ধারণ করেন তবে তার প্রধান নির্বাচন কমিশনার থাকার কোনো নৈতিক অধিকার নেই। দু’বছর আগে টাঙ্গাইল-৪ আসনের উপ-নির্বাচনে রিটার্নিং অফিসার কর্তৃক কাদের সিদ্দিকীর মনোনয়ন বাতিলের প্রসঙ্গ আসে সংলাপে। এ প্রসঙ্গে রকিব কমিশনের সমালোচনা করে কাদের সিদ্দিকী সাংবাদিকদের বলেন, আমরা নির্বাচন কমিশনে আপিল করার পরে নির্বাচন কমিশন রিটার্নিং অফিসারের রায় বহাল রাখায় আমরা হাইকোর্টে গিয়েছি। হাইকোর্ট আমার মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণা করায় রিটার্নিং অফিসার মার্কা দিয়েছেন। মার্কা দিয়ে দেয়ার পর আর কারও কোনো কিছু করার এখতিয়ার থাকে না।
কিন্তু গত রকিব কমিশন আমাদের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে আপিল করেছিল। এই নির্বাচন কমিশনে আমরা সে কথাটা তুলে ধরেছিলাম। নির্বাচন কমিশন স্পষ্ট করেছে সে কাজটি নৈতিক হয়নি। এই কমিশন কখনও হাইকোর্টের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপিল করতে যাবে না। কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি কাদের সিদ্দিকীর সভাপতিত্বে ২৭ সদস্যের প্রতিনিধি দল ইসির সংলাপে অংশ নেয়। এতে দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য নাসরিন কাদের সিদ্দিকীও উপস্থিত ছিলেন। সংলাপে ১৮টি প্রস্তাব রাখে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ।
এসব প্রস্তাবের মধ্যে রয়েছে, নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার ব্যবস্থা পুনর্বহাল করা, নির্বাচনের অন্তত ১৫ দিন আগে কর্তৃত্বসহ সেনা মোতায়েন করা, রাজনৈতিক দলগুলোর অঙ্গ সংগঠনের বিষয়ে জারিকৃত নিষেধাজ্ঞা বাতিল করা, হাইকোর্টের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপিল না করা, ভোটার সংখ্যার ভিত্তিতে সীমানা পুনঃনির্ধারণ করা, প্রার্থীদের আয়কর রিটার্ন জমা দেয়ার বিধান বাতিল করা, হলফনামায় ফৌজদারি মামলার বিবরণ না নেয়া, প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রী একনাগাড়ে দুইবারের বেশি নির্বাচিত না করা।
পরে বিকালে বাংলাদেশের সাম্যবাদী দলের সঙ্গে আলোচনায় বসে ইসি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে একাদশ সংসদ নির্বাচন করার সুপারিশ করেছে সাম্যবাদী দল। সংলাপে বিদ্যমান সংসদীয় আসন বহাল, সেনা মোতায়েনের বিপক্ষে মতসহ ১৭ দফা প্রস্তাব দিয়েছে দলটি। মতবিনিময় শেষে সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়া বলেন, সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর আলোকে জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে অন্তর্বর্র্তীকালীন সরকারের অধীনে একাদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এসময় সংসদ বিলুপ্তির কোনো প্রয়োজন নেই। নতুন আদমশুমারি প্রতিবেদন না থাকায় বিদ্যমান সংসদীয় আসনেই একাদশ সংসদের ভোট করার দাবি জানান তিনি।
নির্বাচনে সেনাবাহিনী মোতায়েনের বিপক্ষে মত দেয় দলটি। মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারী ও জামায়াতের প্রতিনিধিরা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবেও যাতে ভোট করতে না পারে সে বিধান করার সুপারিশ করেছে সাম্যবাদী দল। দিলীপ বড়ুয়ার নেতৃত্বে ১৬ সদস্যের প্রতিনিধি দল সংলাপে অংশ নিয়েছে। এসময় প্রধান নির্বাচন কমিশনার কেএম নূরুল হুদাসহ নির্বাচন কমিশনাররা ও ইসির ভারপ্রাপ্ত সচিবসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। উৎস : মানবজমিন।