176492

যেভাবে চিনবেন ভুয়া পুলিশ প্রতারক চক্র

পুলিশ জনগণের সেবক ও বন্ধু। সেই পুলিশের পরিচয় ব্যবহার করে অভিনব কায়দায় প্রতারণা করে যাচ্ছে একটি সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্র।

এসব ভুয়া পুলিশের হাতে প্রতিনিয়ত হয়রানির শিকার হচ্ছেন সাধারণ মানুষ। এর ফলে পুলিশের সম্মান ক্ষুণ্ন হচ্ছে।

তাদের পরিচয় বুঝতে না পেরে সর্বস্বান্ত হয়ে ঢালাও ভাবে পুলিশবাহিনীর প্রতি অশ্রদ্ধা বাড়ছে ভুক্তভোগীদের। তাই এই চক্রের অপতৎপরতা ঠেকাতে কঠোর ভূমিকায় নেমেছে পুলিশ।

একইসঙ্গে জনগণকে এদের ব্যাপারে সচেতন হওয়ারও অনুরোধ জানানো হয়েছে পুলিশের ঊর্ধ্বতন মহলের পক্ষ থেকে। কিন্তু, কীভাবে চেনা যাবে এসব ভুয়া পুলিশকে?

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে খোলামেলাভাবে কথা বলেছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের জনসংযোগ শাখার সিনিয়র সহকারী পুলিশ কমিশনার হাফিজুর রহমান রিয়েল।

ভুয়া পুলিশ চেনার বেশ কিছু উপায়ও বলে দিয়েছেন তিনি। এদের শনাক্ত করতে বেশ কিছু বিষয় পর্যবেক্ষণের পরামর্শ দিয়েছেন ডিএমপির এই কর্মকর্তা।

বাংলা ট্রিবিউনকে তিনি জানান, একটু ভালো মতো বুদ্ধি খাটিয়ে এই চক্রের সদস্যদের পর্যবেক্ষণ করলে সহজেই এদের পরিচয় সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায়। এ বিষয়ে কিছু টিপসও দিয়েছেন তিনি।

সেগুলো হলো-

১. ব্যবহৃত ওয়াকিটকি চালু আছে কিনা লক্ষ্য করুন। ভুয়া পুলিশ সদস্যদের ওয়াকিটকি কখনও চালু থাকে না এবং কোন শব্দও পাওয়া যায় না। কারণ সেটি খেলনা ওয়াকিটকি।

২. সাদা পোশাকে পুলিশ কোনও অভিযান পরিচালনা করলে অবশ্যই গায়ে জ্যাকেট পরিধান করে ও গলায় পরিচয়পত্র ঝোলানো থাকে।কিন্তু ভুয়া পুলিশ সদস্যরা বেশিরভাগ সময় কোনও ধরনের জ্যাকেট বা পরিচয়পত্র সঙ্গে রাখে না।

৩. ভুয়া পুলিশ চক্র সবসময় খেলনা পিস্তল ব্যবহার করে, তারা কখনোই লং আর্মস: যেমন শর্টগান বা এসএমজি সঙ্গে রাখে না।

৪. গতিবিধি ও আচরণ পর্যবেক্ষণ করুন। ভুয়া পুলিশ সদস্যরা বাসায় ঢুকেই টাকা, অলঙ্কার ও মূল্যবান মালামাল নেওয়ার জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়ে। তাদের আচরণে উগ্রতা ও রুক্ষভাব পরিলক্ষিত হয়।

৫. এই চক্রের সদস্যদের পারস্পারিক কথোপকথন পর্যবেক্ষণ করার চেষ্টা করুন। এরা অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে এবং চোর ডাকাতের মতো আচরণ করতে থাকে।

ভুয়া পুলিশ দেখলে করণীয় সম্পর্কে পুলিশ কর্মকর্তা হাফিজুর রহমান বলেন, ‘আপনার নিজের নিরাপত্তা ও এসব প্রতারণাকারী চক্রের হাত থেকে রেহাই পেতে সবসময় নিজের বুদ্ধি-বিবেক ও পর্যবেক্ষণ ক্ষমতা প্রয়োগ করুন।

এ ধরনের ঝামেলায় পড়লে বা মুখোমুখি হলে কৌশলে নিকটস্থ থানা বা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের অবহিত করুন।

যদি শতভাগ নিশ্চিত হওয়া যায় যে এরা ভুয়া পুলিশ সদস্য এবং ব্যবহৃত অস্ত্রটিও খেলনা তাহলে সঙ্গে সঙ্গে সাহসিকতার সঙ্গে তাদেরকে প্রতিহত করুন ও পুলিশকে খবর দিন এবং আপনার এলাকার সংশ্লিষ্ট বিট অফিসারকে অবহিত করুন।’

সিনিয়র সহকারী পুলিশ কমিশনার হাফিজুর রহমান রিয়েল, মূলত পুলিশ বা অন্যান্য আইন-শৃঙ্খলাবাহিনী থেকে বহিষ্কৃত সদস্যরাই সাজার মেয়াদ শেষে সংঘবদ্ধ হয়ে এ ধরনের অপতৎপরতায় লিপ্ত রয়েছে।

আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সাবেক সদস্য হওয়ায় তারা বাহিনীর নিয়ম-শৃঙ্খলার বেশ কিছু বিষয় বেশ ভালোভাবেই জানে। এ কারণে সাদা চোখে তাদের ধরা মুশকিল।

আর এরই সুযোগ নিয়ে পুলিশের পরিচয় ব্যবহার করে এরা অভিনব কায়দায় প্রতারণা করে যাচ্ছে। কখনও কখনও তারা ডাকাতির মতো ঘটনাও ঘটাচ্ছে।

তবে একটু খেয়াল করলে তাদের পরিচয় জেনে ফেলা খুব একটা কঠিন নয়।
তিনি জানান, এদের অপতৎপরতা সারাদেশেই কমবেশি দেখা যাচ্ছে।

রাজধানীর ব্যাংক, বিমা প্রতিষ্ঠান, ব্যবসায়ীদের অফিস, বাসা-বাড়ি সবখানেই সুযোগ বুঝে এরা হানা দিচ্ছে।

তিনি জানান, এদের মধ্যে যারা ধরা পড়েছে তাদের প্রায় সবার মধ্যে কিছু অভিন্ন বৈশিষ্ট্য পাওয়া গেছে।

পুলিশের ধারণা, বাকিরাও একই রকম পরিচয় ব্যবহার করে অন্যদের প্রতারিত করার চেষ্টা চালায়।

তাই, সূক্ষ্মভাবে পর্যবেক্ষণ করলে এই বৈশিষ্ট্যগুলোই সাধারণ মানুষের জন্য প্রতারণা থেকে বাঁচার রক্ষাকবচ হতে পারে।

ডিএমপির এই কর্মকর্তা জানান, পুলিশ পরিচয়ে যারা প্রতারণা করে আসছে তারা বেশিরভাগই স্মার্ট।

তাদের বেশভুষা আচার-আচরণ চলাফেরা এমনকি চুলের ছাঁট পর্যন্ত হয় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের মতো।

পুলিশ বা অন্যান্য বাহিনী থেকে বিভিন্ন কারণে চাকরিচ্যুত হওয়ায় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন রকম আইন-কানুন ও কৌশল তাদের জানা রয়েছে।

কিন্তু, তাদের ধরতে হলে লক্ষ্য করতে হবে তাদের আচরণ ও তারা যেসব সরঞ্জামাদি ব্যবহার করে সেগুলো।

তিনি আরও বলেন, এই চক্রের সদস্যরা সাদা পোশাকে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয় দিয়ে বাসা-বাড়ি বা অফিসে ঢোকে।

তারা সাধারণত হ্যান্ডকাফ, খেলনা পিস্তল, খেলনা ওয়াকিটকি, দড়ি ও ভুয়া পরিচয়পত্র ব্যবহার করে।

বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তারা মাইক্রোবাস ব্যবহার করে। অনেক সময় তারা পুলিশের পোশাক, বাঁশি এবং ডিবি লেখা জ্যাকেটও ব্যবহার করে থাকে।

বিশেষ করে ব্যাংক, বিমা ও বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানে আগে থেকেই ওঁৎ পেতে থাকে। কেউ টাকা তুললে বা জমা দিতে এলে তার পিছু নেয়।

পরে সুবিধামতো জায়গায় কৌশলে মাইক্রোবাসে তুলে খেলনা পিস্তল ঠেকিয়ে ও নানা ধরনের ভীতি প্রদর্শন করে সবকিছু হাতিয়ে নেয়।

আবার কখনও কখনও মুক্তিপণের মতো ঘটনা সাজিয়ে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নেয়। মাঝে মধ্যে এরা ডাকাতিতেও সংশ্লিষ্ট হয়।

কিন্তু, পুলিশের পরিচয় ব্যবহার করলেও যেহেতু তারা প্রতারক ও ডাকাতির মানসিকতা রয়েছে তাই সব কিছুতেই তাদের মধ্যে তাড়াহুড়ার মনোভাব লক্ষ্য করা যায়।

তাদের আচার-আচরণ ও অন্যান্য বিষয়গুলো একটু ভালভাবে খেয়াল করলেই ওদের ভুয়া পরিচয় সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায়।

ad

পাঠকের মতামত