ধর্ষকের সাথেই স্কুলে ক্লাস করতে হচ্ছে কিশোরীটিকে
যুক্তরাজ্যে সহপাঠীর কাছে ধর্ষণের শিকার হওয়ার পর সেই ধর্ষক সহপাঠীর সাথেই একসাথে স্কুলে ক্লাস করতে হচ্ছে এক কিশোরীকে। ধর্ষণের ঐ ঘটনার পর ছেলেটিকে গ্রেফতার করা হলেও সে জামিনে খালাস পায়।
ঠিক তার পরদিনই স্কুলে ক্লাস শুরু করে সে। আর তার কাছে ধর্ষণের শিকার ছাত্রীটিকে তাই তার সাথেই একই ক্লাসে পড়াশোনা করতে হচ্ছে।
ছাত্রীটির মা রেইচল (ছদ্মনাম) বলছিলেন, “যে ধর্ষিত হয়েছে সে এমনিতেই খুব নাজুক মানসিক পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যায়। আর তার ওপর যদি নিজের ধর্ষকের সাথেই একসাথে ক্লাস করতে হয় তাহলে সেটি আরো কঠিন ব্যাপার। এরকম মানসিক আতঙ্কের মধ্যে দিয়ে যাওয়া কারোর প্রতি এটি খুবই অন্যায়।”
তিনি আরো বলছিলেন, “আমার মেয়ের জন্য বিষয়টি আরো কষ্টের হয়েছে কারণ ধর্ষণের ঘটনা সহপাঠীরা জেনে গেছে। রুম ভর্তি সবাই জানে কি হয়েছে। তারাও আপনাকে আপনার ধর্ষকের সাথে একসাথে দেখছে, যাচাই করছে, এটা খুব ভয়ংকর একটা ব্যাপার।”
ধর্ষণ বা যৌন হয়রানি শিকার হয়েছেন এমন কোন শিক্ষার্থীকে যেন তার নির্যাতনকারীর সাথেই একই ক্লাসে পড়াশোনা করতে না হয় এজন্য স্কুলগুলোর জন্য কিছু নিতিমালা প্রণয়ন করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে যুক্তরাজ্য সরকার। খবর বিবিসি বাংলার।
তবে ধর্ষণের বিরুদ্ধে প্রচারণা কর্মীরা বলছেন বিষয়টি খুব সময় নিচ্ছে। রেইচল বলছিলেন এই ধরণের পরিস্থিতি মোকাবেলা করার জন্য তার মেয়ে যে স্কুলে পড়তো সেটির কোন সুনির্দিষ্ট নীতিমালা নেই।
এই ঘটনার পর স্কুল কর্তৃপক্ষের সাথে একটি মিটিং এ বসার জন্য তাকে রীতিমতো বেগ পেতে হয়েছে। তারা তার মেয়ের জন্য ঠিক কি ধরনের সহায়তার ব্যবস্থা নেয়া দরকার সেবিষয়ে কোন গুরুত্ব দেয়নি স্কুল কর্তৃপক্ষ।
তিনি অভিযোগ তোলেন যে তারা বরং ছাত্রটির পড়াশোনার দিকেই মনোযোগ দিয়েছে বেশি। ফলে ক্রমেই তার মেয়েটি নিজেকে গুটিয়ে নিতে শুরু করে। প্রথমে স্কুলের সাধারণ মিলনস্থলগুলো থেকে এবং তারপর ধীরে ধীরে একেবারেই স্কুল ছেড়ে দেয় সে।
এই ইস্যুটি ২০১৬ সালে কমনস উইমেন অ্যান্ড ইক্যুয়ালিটিস কমিটিতে উত্থাপন করা হয় যেখানে ইংল্যান্ডের স্কুলগুলোতে যৌন সহিংসতা আর হয়রানির বিভিন্ন ঘটনা উঠে আসে।
বিবিসি’র একটি গবেষণা অনুযায়ী, ২০১৫ সালের জুলাই মাস পর্যন্ত বিগত তিন বছরে যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন স্কুলে যৌন হয়রানির ঘটনায় সাড়ে পাঁচ হাজার মামলা করা হয়েছে।
শিক্ষা বিভাগের ওয়েবসাইটে প্রাপ্তবয়স্ক ধর্ষকের বিচার আর করণীয় বিষয়ে ১১ পাতার নির্দেশনামা থাকলেও সমবয়সী বা সহপাঠীদের দ্বারা এমন ঘটনার শিকার হলে সেক্ষেত্রে বিস্তারিত কিছুই বলা হয় নি।
রেইচল দাবি করেন যে এবিষয়টিও ঠিক ততটাই গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করা উচিৎ এবং প্রয়োজনীয় নিতিমালা প্রণয়ন করা উচিৎ।
নারীর প্রতি সহিংসতা রোধে কাজ করে এমন একটি সংস্থা ‘এন্ড ভায়োলেন্স এগেইনস্ট উইমেন’ এর সহ পরিচালক রেইচল ক্রাইস বলেন যে , স্কুলগুলো মেয়েদের জন্য ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করতে ব্যর্থ হচ্ছে।
তিনি বলছেন, “একজন প্রাপ্ত বয়স্ক ব্যক্তির অপরাধ আর একজন অপ্রাপ্ত বয়সী কারোর অপরাধ একই রকমের জটিল একটা বিষয়। সরকারে উচিৎ স্কুলগুলোর জন্য সুনির্দিষ্ট নীতিমালা ঠিক করে দেয়া”
যুক্তরাজ্যের শিক্ষা বিভাগ বলছে যে তারা বিষয়টা নিয়ে কাজ করছে এবং একটি যথাযোগ্য নির্দেশনামা তৈরিতে বিশেষজ্ঞদের মতামত নিয়ে অগ্রসর হচ্ছে।
দেশটির শিশু ও পরিবার বিষয়ক মন্ত্রী রবার্ট গুডউইল বলছেন, “নিঃসন্দেহে সহপাঠীদের দ্বারা নির্যাতনের ক্ষেত্রে স্কুলগুলোতে শিশুদের সুরক্ষা বিষয়ক সুনির্দিষ্ট নীতিমালা থাকা উচিৎ। এক্ষেত্রে স্কুলগুলোকে সহায়তা করার লক্ষ্যে বিভিন্ন অংশীদার আর বিশেষজ্ঞদের মতামত নেয়ার মাধ্যমে আমরা কাজ করে যাচ্ছি”।