‘ব্লু হোয়েল গেমে মৃত্যু’ হওয়ার পরও মেধাবী কিশোরী স্বর্ণার ফোন এসেছিল
অপূর্বা বর্ধন স্বর্ণার মোবাইল ফোন এখনো খোলা। শুক্রবার মধ্যরাতেও কল এসেছিল স্বর্ণার মোবাইলে।
একটি দুটি নয়, পরপর পাঁচটি। ফোন রিসিভ করেন স্বর্ণার মা সানি বর্ধন। কলার সবাই পরিচয় দিয়েছেন তারা স্বর্ণার ফেসবুক ফ্রেন্ড। এসব তথ্য জানিয়ে স্বর্ণার বাবা সুব্রত বর্ধন বলেন, স্বর্ণার ফেসবুক বন্ধু পরিচয় দিয়ে একজন বলেছেন, ‘স্বর্ণা তো ডেথ গেমসে ঢুকে পড়েছিল। ’ এরপর তার বিস্তারিত পরিচয় জানতে চাইলেই তারা সংযোগ কেটে দেন। অ্যানড্রয়েড মোবাইল ব্যবহারের পাশাপাশি মৃত্যুর আগে তার নানা আচরণ এবং আত্মহত্যার আলামতে সে ‘ব্লু হোয়েল’র শিকার এমন ধারণা স্বর্ণার বাবা সুব্রতের।
কিন্তু ‘ব্লু হোয়েল’র শিকার হয়ে এক মেধাবী কিশোরীর আত্মহত্যার চতুর্থ দিনেও অন্ধকারে পুলিশ। তবে স্বর্ণার মৃত্যুর দ্বিতীয় দিনে ব্লু হোয়েল নিয়ে লেখালেখির পর বিষয়টি জানতে পেরেছেন বলে জানিয়েছেন পুলিশের একাধিক কর্মকর্তা। তারা বলছেন, বিষয়টি এদেশে প্রথম। গুরুত্বের সঙ্গে বিষয়টি দেখা হচ্ছে।
এদিকে, জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের অধ্যাপক তাজুল ইসলাম বলেন, ব্লু হোয়েলের বিষয়টি জানার পর তা ফেসবুক ওয়ালে শেয়ার করি। দুজন অভিভাবক তাদের সন্তান ব্লু হোয়েলের শিকার বলে জানিয়েছেন। তার ম্যাসেঞ্জারে ছবিও পাঠিয়েছেন। এদের মধ্যে একজনের অবস্থা খুবই গুরুতর। বৃহস্পতিবার সকালে রাজধানীর নিউমার্কেট থানার সেন্ট্রাল রোডের ৪৪ নম্বর বাড়ির ৫/বি ফ্ল্যাট থেকে স্বর্ণার ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। তার কয়েক ঘণ্টা আগে মধ্যরাতে সুকৌশলে তার কক্ষ থেকে ঘুমন্ত পিতাকে জাগিয়ে অন্য কক্ষে সরিয়ে দেয়। এরপর আত্মহত্যা করে স্বর্ণা।
মৃত্যুর আগেই বড় হরফে ‘আমার আত্মহত্যার জন্য কেউ দায়ী নয়’ বলে চিরকুট লিখে গেছে। তার নিচে এঁকেছে হাসির চিহ্ন। এরপর ওই দিনই সন্ধ্যায় রাজধানীর পোস্তগোলা শ্মশানে মৃতদেহের সত্কার করা হয়েছে। এরপর থেকে তার ‘ব্লু হোয়েল’র শিকার হওয়ার বিষয়টি সামনে আসে। পুলিশ আত্মহত্যার ক্লু খুঁজতে স্বর্ণার মোবাইল ফোন খোলা রাখার পরামর্শ দেয়। স্বর্ণার বাবা সুব্রতও তা খোলা রাখার সিদ্ধান্ত নেন। শুক্রবার মধ্যরাতে স্বর্ণার ফেসবুক ফ্রেন্ড পরিচয় দিয়ে পাঁচটি ফোন আসে। বলেছিল, আমি যদি হঠাৎ মারা যাই। তোরা কি আমাকে দেখতে যাবি? স্বর্ণার বাবা সুব্রত বর্ধন বলেন, আমার আদরের মেয়ে ‘ব্লু হোয়েল’র ফাঁদে পড়ে আত্মহত্যার নানা আলামত পাচ্ছি।
পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের সাইবার সিকিউরিটি অ্যান্ড ক্রাইম বিভাগও তাদের ফেসবুক পেজে ব্লু হোয়েল গেম নিয়ে সতর্ক করে বলেছে, অনলাইনে ব্লু হোয়েলে গেম খেলা বা এই গেমের লিংক দেওয়া-নেওয়া বা সে চেষ্টা দণ্ডনীয়। যারা এগুলোর যে কোনো একটি করবেন, তাদের বিরুদ্ধে সাইবার পুলিশ ব্যবস্থা নেবে।