‘নাড়ির টানে আপনাদের মাঝে চলে এসেছি’
রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বলেছেন, ‘সকল ক্ষমতার উৎস জনগণ। তাই জনপ্রতিনিধিদের আচরণ জনবান্ধব হওয়া উচিত। তাদের সবসময় জনগণের ভালো-মন্দ দেখতে হবে। প্রকৃত জনপ্রতিনিধি কখনই অন্যের স্বার্থ জলাঞ্জলি দিয়ে নিজের স্বার্থ আদায় করবেন না। জনগণকে নিয়ে নিষ্ঠা ও আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করতে হবে।’
রোববার (৮ অক্টোবর) বিকেলে নিজ উপজেলা মিঠামইনে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় রাষ্ট্রপতি এসব কথা বলেন। রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ মিলনায়তনে এ মতবিনিময় সভা হয়। চার দিনের সফরে রাষ্ট্রপতি দুপুরে কিশোরগঞ্জের নিজ জন্মস্থান মিঠামইনে আসেন।
চৈত্রের আগাম বন্যায় ক্ষয়-ক্ষতির কথা উল্লেখ করে রাষ্ট্রপতি বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা যাতে নতুনভাবে বোরো ধান চাষাবাদ করতে পারে সে লক্ষ্যে সার, বীজ, কীটনাশকসহ সম্ভাব্য সব ধরনের সহায়তা সরকার দেবে। প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্তরা যাতে সরকারি সহায়তা পায়, তা নিশ্চিত করতে তিনি সরকারি কর্মকর্তা ও জনপ্রতিনিধিদের নির্দেশ দেন।
তিনি বলেন, ‘ভিন্ন মত ও আর্দশের জন্য কেউ যেন সাহায্য-সহযোগিতা থেকে বাদ না পড়ে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।’
হাওরের সার্বিক উন্নয়ন কর্মকান্ড, বিশেষ করে শিক্ষা অবকাঠামোর কথা তুলে ধরে আবদুল হামিদ বলেন, ‘শুধু ভবন নির্মাণ করলেই এলাকার উন্নয়ন হবে না। শিক্ষার্থীরা যাতে প্রতিযোগিতামূলক অবস্থায় নিজেদের যোগ্য করে তুলতে পারে এবং অর্জিত শিক্ষাকে কাজে লাগিয়ে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে পারে, সে ব্যাপারে শিক্ষক ও অভিভাবকদের সজাগ থাকতে হবে।’
বক্তব্যের শেষ পর্যায়ে আবেগাপ্লুত হয়ে রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘আগামী তিন দিন বাজিতপুর, কটিয়াদী ও জেলা শহরে আমার কর্মসূচি রয়েছে। মূলত এসব কর্মসূচিতেই যোগদান করতে এসেছি। তবে নাড়ির টানে আপনাদের মাঝে চলে এসেছি। চৈত্রের আগাম বন্যায় কৃষকদের দেখতে এসেছিলাম। হাওর আমাকে টানে, হাওরের ঋণ শোধ করা কঠিন। তাই হাওরের দুর্দিন-দুঃসময়ে আসতে মন চায়। আপনাদের দেখতে, কথা বলতে চলে এসেছি।’
মতবিনিময় সভায় সভাপতিত্ব করেন মিঠামইন কলেজের অধ্যক্ষ আবদুল হক নূরু। বক্তব্য রাখেন স্থানীয় সংসদ সদস্য মো. রেজওয়ান আহম্মদ তৌফিক, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট মোঃ জিল্লুর রহমান, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আবদুস সাহীদ, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সমীর কুমার বৈষ্ণব প্রমুখ।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন রাষ্ট্রপতি কার্যালয়ের সচিব সম্পদ বড়ূয়া, রাষ্ট্রপতির প্রেস সচিব মো. জয়নাল আবেদীন, কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসক মো. আজিমুদ্দিন বিশ্বাস, পুলিশ সুপার মো. আনোয়ার হোসেন খান, মিঠামইন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাসলিমা আহমেদ পলি প্রমুখ।
সোমবার (৯ অক্টোবর) দুপুর ১২টা ৫ মিনিটে মিঠামইন থেকে হেলিকপ্টারযোগে বাজিতপুর উপজেলার উদ্দেশ্যে যাত্রা করবেন। দুপুর সাড়ে ১২টায় বাজিতপুর সরারচর হেলিপ্যাডে অবতরণ করবেন। সেখান থেকে মোটরকেডযোগে তিনি দুপুর ১২টা ৫০মিনিটে বাজিতপুর কলেজ মাঠে উপস্থিত হয়ে গার্ড অব অনার গ্রহন করবেন। দুপুর ১টায় বাজিতপুর কলেজে সাময়িক বিশ্রাম শেষে দুপুর ২টা ১৫ মিনিটে ডাকবাংলো মাঠে স্মৃতিসৌধ নির্মানের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন, মুক্তিযোদ্ধা চত্বর ও চারটি ব্রিজ উদ্বোধন করবেন।
পরে দুপুর আড়াইটায় রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ বাজিতপুর কলেজের সূবর্ণ জয়ন্তী অনুষ্ঠানে যোগদান করবেন। কলেজের সূবর্ণ জয়ন্তী অনুষ্ঠান শেষে বাজিতপুর থেকে হেলিকপ্টারযোগে বিকাল সোয়া ৫টায় কিশোরগঞ্জ জেলা শহরের শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম স্টেডিয়ামে অবতরণ করবেন। অবতরণের পর সার্কিট হাইজের উদ্দেশ্রে যাত্রা করবেন এবং সেখানে গার্ড অব অনার গ্রহন করবেন। পরে রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ সন্ধা ৭টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের সাথে মতবিনিময় করবেন। মতবিনিময় শেষে তিনি কিশোরগঞ্জ জেলা শহরের খরমপট্টি এলাকায় নিজ বাসভবনে রাত্রিযাপন করবেন।