বাংলাদেশেও ‘ব্লু হোয়েল’, আত্মঘাতী কিশোরী
বাংলাদেশেও পৌঁছে গেছে মারণনেশার ‘ব্লু হোয়েল’ গেমস। আর এই নেশায় পড়ে রাজধানীতে আত্মঘাতী হয়েছে এক কিশোরী। গত বৃহস্পতিবার রাতে সেন্ট্রাল রোডের বাসায় নিজের পড়ার কক্ষে ফ্যানের সঙ্গে ঝুলন্ত অবস্থায় অপূর্বা বর্ধন স্বর্ণার লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।
সে (১৩) অ্যাডভোকেট সুব্রত বর্মনের মেয়ে এবং ফার্মগেটের হলিক্রস স্কুলের অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিল।
নিহতের পরিবার ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, স্বর্ণা বিদ্যালয়ের ফার্স্ট গার্ল হিসেবে পরিচিত ছিল। ওয়াইডব্লিউসিএ হাইয়ার সেকেন্ডারি গালর্স স্কুলে প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত সম্মিলিত মেধা তালিকায় তার অবস্থান ছিল প্রথম।
এরপর ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি হয় ফার্মগেটের হলিক্রস স্কুলে। সেখানে অষ্টম শ্রেণিতে পড়াকালীন বদলে যেতে থাকে স্বর্ণা। পড়াশোনার কথা বলে কয়েক বছর আগে থেকে সে অ্যানড্রয়েড মোবাইল ফোন ব্যবহার শুরু করে।
গত বৃহস্পতিবার রাতে এই গেমস খেলতে গিয়েই স্বর্ণা আত্মহত্যা করেছে বলে তার বাবা অ্যাডভোকেট সুব্রত বর্মনের সন্দেহ।
তিনি জানান, তার মেয়ে ইন্টারনেটভিত্তিক ডেথ গেম ‘ব্লু হোয়েলে’ ঢুকে পড়েছিল।
সুব্রত বর্মন জানান, স্বর্ণা কয়েক বছর ধরে কম্পিউটার ও অ্যানড্রয়েড মোবাইল ব্যবহার করছিল। পড়াশোনার বিভিন্ন বিষয় ইন্টারনেট থেকে ডাউনলোড করে সে পড়তো। ফেসবুকও ব্যবহার করত।
তিনি বলেন, ‘১৫ দিন আগে স্বর্ণার মোবাইল চেক করলে সে অভিমান করে। তারপর থেকেই আমাদের মনে সন্দেহ জাগে, সে কিছু একটাতে আসক্ত এবং তা পরিবারের কাছে গোপন করছে।’
সুব্রত বর্মন বলেন, ‘আত্মহত্যার আগ পর্যন্ত স্বর্ণা পরিবারের সবার সঙ্গে বেশ আন্তরিকতা দেখিয়ে যাচ্ছিল, যাতে আমরা তাকে সন্দেহ করতে না পারি। আত্মহত্যার আগে-পরের নানা আলামতে আমরা নিশ্চিত, স্বর্ণা ব্লু হোয়েলের বলি।’
তিনি এই গেমসের উদ্ভাবকের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ থাকলে তা করবেন বলে জানান।
পরিবারের কাছ থেকে খবর পেয়ে বৃহস্পতিবার নিউ মার্কেট থানার পুলিশ সেন্ট্রাল রোডের ৪৪ নম্বর বাসা ৫বি ফ্ল্যাট থেকে স্বর্ণার ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করে। এ সময় উদ্ধার করা হয় ব্লু হোয়েলের কিউরেটরের নির্দেশ মতো লিখে যাওয়া একটি চিরকুট।
এতে বড় করে ইংরেজিতে লেখা, ‘আমার আত্মহত্যার জন্য কেউ দায়ী নয়।’ চিরকুটের শেষে গেমসের নির্দেশনা মতো একটি হাসির চিহ্ন আঁকা রয়েছে।
প্রযুক্তি সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, ব্লু হোয়েল গেমসে ৫০টি ধাপ রয়েছে। একাধিক কিউরেটর এটি নিয়ন্ত্রণ করেন। তাদের নির্দেশেই গেমস এগিয়ে চলে। সেখান থেকে সহজে বের হওয়া যায় না। কেউ বের হতে চাইলেও তাদের চাপে রাখতে পরিবারকে মেরে ফেলার হুমকি পর্যন্ত দেওয়া হয়।
আর এই গেমেসের বিভিন্ন ধাপে রয়েছে ঝুঁকিপূর্ণ চ্যালেঞ্জ। যেমন: ব্লেড দিয়ে হাতে তিমির ছবি আঁকা, সারা গায়ে আঁচড় কেটে রক্তাক্ত করা, কখনও ভোরে একাকি ছাদের কার্নিশে ঘুরে বেড়ানো, রেল লাইনে সময় কাটানো, ভয়ের সিনেমা দেখা ইত্যাদি।
চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবেলা করে তার ছবি কিউরেটরকে পাঠাতে হয়। ২৭তম দিনে হাত কেটে ব্লু হোয়েলের ছবি আঁকতে হয়। সব ধাপ পার হওয়ার পর ৫০তম চ্যালেঞ্জ হলো আত্মহত্যা। আর সেখানেই গেমস জয়ের সমাপ্তি ঘটে। কিন্তু, যে ব্যক্তি এতক্ষণ খেললেন, তাকে আর পাওয়া যায় না।
সাধারণভাবে গোপন গ্রুপের মধ্যে অপারেট করা হয় এই গেমস। এক্ষেত্রে ফেসবুক, হোয়াটস অ্যাপের মতো জনপ্রিয় স্যোশাল প্লাটফর্মকে কাজে লাগায় কিউরেটরা।
রাশিয়ায় শুরু হলেও এই গেমের শিকার এখন এশিয়ার অনেক দেশ। ভারতে গত দু’মাস ধরে ব্লু হোয়েল নিয়ে চলছে শোরগোল।
স্যোশাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে থাকা ব্লু হোয়েল লিংক সরিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে দেশটির সরকার।
উল্লেখ্য, ২০১৬ সালে রাশিয়ায় ব্লু হোয়েল গেমের কিউরেটর সন্দেহে ফিলিপ বুদেকিনকে (২২) গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরে জেরায় তিনি বলেন, এই চ্যালেঞ্জের যারা শিকার, তারা এই সমাজে বেঁচে থাকার যোগ্য নন। তাদের মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়ে আমি সমাজ সংস্কারকের কাজ করছি।