মিয়ানমার কেন কাউকে পাত্তা দেয় না
ইচ্ছে ছিল হজব্যবস্থাপনা নিয়ে লিখব। এবারের হজযাত্রার দুর্ভোগ-দুর্গতি নিয়ে লেখার জন্য মানসিক প্রস্তুতি নিয়ে কথামালা গোছাচ্ছিলাম পবিত্র ভূমি মক্কা-মদিনা থেকেই। কারণ, পবিত্র হজব্রত নির্ভুল ও নিখুঁতভাবে পালনের জন্য আমি সবরকম মানসিক, শারীরিক ও আর্থিক প্রস্তুতি শুরু করেছিলাম প্রায় মাস ছয়েক আগে থেকেই। এই উদ্দেশ্যে আমি সংসারজীবনের নৈমিত্তিক কাজকর্মেও সাময়িক বিরতি দিয়েছিলাম। সম্প্রতি আমার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কর্মগুলোর মধ্যে প্রধানতম কর্ম হলোÑ কয়েকটি জাতীয় দৈনিকে নিয়মিত লেখালেখি। অন্যান্য সময় জরুরি প্রয়োজনে বিদেশে কিংবা অন্য কোথাও ভ্রমণের জন্য ঢাকা ত্যাগের আগে আমি আমার পাঠকদের কথা চিন্তা করে পত্রিকাগুলোকে অগ্রিম লেখা দিয়ে যাই। কিন্তু এবারের হজ উপলক্ষে লেখালিখিও বাদ দিয়েছিলাম।
হজ নিয়ে আমার যেরূপ মানসিক প্রস্তুতি ছিল সে রকম বাংলাদেশের অন্যান্য হজযাত্রীর প্রস্তুতিও কোনো অংশে কম ছিল না বলেই আমার বিশ্বাস। যে পবিত্র অনুভূতি, প্রগাঢ় ধর্মানুরাগ ও আল্লাহর কাছে প্রবলভাবে আত্মসমর্পণ করার দৃঢ়তা নিয়ে যারা মক্কার কাফেলার সাথে একীভূত হওয়ার বাসনায় সব কিছু বিসর্জন দেন সেই সম্মানিত হজযাত্রীরা যেসব মুনাফাখোর, ধান্দাবাজ ব্যবসায়ী, দুর্নীতিবাজ সরকারি কর্মকর্তা এবং টাউট রাজনীতিবিদদের নির্বিচারে লুটপাটের শিকারে পরিণত হন তার বাস্তব অভিজ্ঞতার ঝুলি থেকে সামান্য কিছু পাঠকদের জানানোর জন্য ইচ্ছে পোষণ করেছিলাম। কাউকে হেয় করা বা কারো বাড়া ভাতে ছাই না দিয়ে কেবল আগামী দিনের হজযাত্রীদেরকে সতর্ক করার জন্যই এমনটি লিখতে চেয়েছিলাম। কিন্তু বাংলাদেশে ফেরার পর রোহিঙ্গা শরণার্থী সমস্যা, পরিবেশ ও পরিস্থিতি দেখার পর মনে হলো বিষয়টি নিয়ে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে আলোচনা করা দরকার।
রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে বাংলাদেশের সাথে প্রতিবেশী মিয়ানমারের সমস্যা দীর্ঘ দিনের। সমস্যাটি রাষ্ট্রীয়পর্যায়ে প্রথম দৃশ্যপটে আসে ১৯৭৬-৭৭ সালে। ১৯৭৮ সালে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের সাথে একটি সমঝোতামূলক দ্বিপক্ষীয় চুক্তির মাধ্যমে সমস্যাটির শান্তিপূর্ণ সমাধান হয়। পরবর্তীতে এরশাদ সরকারের আমলে দু’টি রাষ্ট্রের সম্পর্ক রীতিমতো উষ্ণ হয়ে ওঠে। প্রেসিডেন্ট এরশাদ রাষ্ট্রীয়ভাবে তৎকালীন বার্মা সফর করেন এবং ক্ষমতাসীন বার্মিজ সামরিক শাসক এবং তার মন্ত্রিপরিষদের সদস্যদের সাথে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে দু’টি দেশের পারস্পরিক সম্পর্ক বাড়ানোর ব্যাপারে উভয় পক্ষই আন্তরিকতা প্রদর্শন করে। এভাবেই চলে যায় বহু বছর। বিএনপি সরকার দ্বিতীয় মেয়াদে অর্থাৎ ২০০১ সালে ক্ষমতায় আসার পর বার্মা ও ভারত উভয় দেশের সাথে বাংলাদেশ সীমান্তে বিরোধ দেখা দেয়। রাষ্ট্রীয় গোপন তথ্য বাদ দিলে পত্রপত্রিকার প্রকাশিত প্রতিবেদনে আমরা জানতে পেরেছিলাম যে, উভয় দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী আমাদের তৎকালীন বিডিআর-এর হাতে ভয়ানকভাবে নাজেহাল হয়েছিল।
বিডিআর হত্যাকাণ্ডের পর আমাদের সীমান্তের বীরত্বগাথার খবর আগের মতো পত্রপত্রিকায় আসছে না। অধিকন্তু সীমান্তে ভারতীয় বর্ডার গার্ড এবং সাবেক বার্মা বা ইদানীং মিয়ানমারের নাসাকা বাহিনীর তাণ্ডব, হত্যাকাণ্ড এবং অপমানজনক আচরণের হাজারো সংবাদ পেতে পেতে আমরা ধরেই নিয়েছি যে, ওসব আমাদের নিয়তি অথবা নিত্যকার পুষ্পমাল্য, যা না পেলে আমাদের অনেকের সম্মান বাড়ে না।
ফলে ভারত ও মিয়ানমারের ওপার থেকে এসব দেশের কলকারখানার বর্জ্য, ওদের দেশে তৈরী মাদক, নিন্মমানের ভোগ্যপণ্য যেভাবে অবাধে আমাদের দেশের অভ্যন্তরের আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে পড়ছে তাতে মনে হচ্ছে সব কিছুর জোগান, বিতরণ ও নিয়ন্ত্রণ ওরাই করছে। ওরা ইচ্ছেমতো ইয়াবা, ফিনসিডিল, দুর্বল ও রোগাক্রান্ত গরু ইত্যাদি ঢুকিয়ে দিচ্ছে এবং আমাদের দেশ থেকে মূল্যবান স্বর্ণ, পেট্রল, ডলার, টাকা, আমদানি করা দামি ইলেকট্রনিক সামগ্রী নির্বিবাদে নিয়ে যাচ্ছে। তারা ইচ্ছেমতো তাদের দেশের লোকজন, অপরাধী পুশব্যাক অথবা পুশইন করাতে গিয়ে ঝামেলায় পড়েছিল এমন খবর আমরা শুনিনি।
সম্প্রতি রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ হঠাৎ করে টর্নোডোর গতিতে ঘটলেও এমনতরো ঘটনার প্রেক্ষাপট রচনা হয়েছে বহু দিন আগে থেকেই। আমরা আবেগবশত কেবল শরণার্থী রোহিঙ্গাদের অবর্ণনীয় দুঃখ-দুর্দশা, তাদের পুনর্বাসন ইত্যাদি নিয়ে নিজেদের ব্যস্ত রাখার পাশাপাশি মিয়ানমারের বৌদ্ধ সম্প্রদায় এবং সেই দেশের রাজনৈতিক নেত্রী সু চির চৌদ্দগোষ্ঠী উদ্ধার করছি। আমাদের মধ্যে কিছু আবেগপ্রবণ লোক সামাজিক মাধ্যম, পত্রপত্রিকা এবং টেলিভিশন টকশোগুলোতে মনগড়া তথ্য পরিবেশন করে আমাদের দেশের জনসাধারণকে প্রতিনিয়ত বিভ্রান্ত করে তুলছি। এতে করে সমস্যার সমাধান তো দূরের কথা, বরং উল্টো পরিস্থিতিকে জটিল ও কূটিল বানিয়ে ফেলছি।
বাংলাদেশে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ঢল নামার শুরু থেকেই ক্ষমতাসীন দল রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশের ব্যাপারে নেতিবাচক প্রচার-প্রপাগান্ডা চালিয়ে আসছিল। অন্য দিকে সরকারবিরোধীরা সীমান্ত খুলে দিয়ে রোহিঙ্গাদের আশ্রয়-প্রশ্রয় এবং পুনর্বাসনের জন্য দাবি করে আসছিল। তরুণ ও যুবক সম্প্রদায়সহ সাবেক কিছু সামরিক কর্মকর্তা মিয়ানমারের বিরুদ্ধে সামরিক ব্যবস্থা নেয়ার পক্ষে জোর প্রচারণা শুরু করেছিল। এরই মধ্যে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট-পত্নী ঝটিকা সফরে এসে কক্সবাজারের কয়েকটি শরণার্থী শিবির পরিদর্শন করলেন। তিনি মানবিক আবেদন জানালেন বিশ্ববাসীর প্রতি অশ্রুসজল নয়নে, যাতে সবাই রোহিঙ্গাদের সাহায্য-সহযোগিতায় এগিয়ে আসেন। তিনি তাৎক্ষণিকভাবে বেশ কিছু ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করেন এবং বৃহত্তর পরিসরে ব্যাপকভাবে তুর্কি সরকারের পক্ষ থেকে ত্রাণ এবং পুনর্বাসনের ব্যাপারে সার্বিক সহযোগিতার আশ্বাস দিলেন।
তুর্কি ফার্স্টলেডির বাংলাদেশের রোহিঙ্গাশিবির সফর এবং অসহায় রোহিঙ্গাদের জড়িয়ে ধরে তার কান্নার ছবি দেশী-বিদেশী সব গণমাধ্যমের লিড নিউজে পরিণত হলো। বিদায়বেলায় তিনি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করলেন। এর পর থেকেই রোহিঙ্গাদের প্রতি যেন বাংলাদেশ সরকারের সব সিদ্ধান্ত আল্লাহর রহমতস্বরূপ নাজিল হতে থাকল। প্রধানমন্ত্রী হঠাৎ করে সিদ্ধান্ত নিলেন, তিনিও কক্সবাজারের রোহিঙ্গাশিবির পরিদর্শনে যাবেন। প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার সাথে সাথে সরকারি দলের নেতাকর্মীদের রোহিঙ্গাসংক্রান্ত সুর পাল্টে গেল। তারা তাদের দলীয় প্রধানের মনোভাব আন্দাজ করার চেষ্টা করলেন।
রোহিঙ্গাশিবিরে গিয়ে আমাদের প্রধানমন্ত্রী তুুর্কি ফার্স্টলেডির চেয়েও অধিক আন্তরিকতা নিয়ে শরণার্থীদের সঙ্গে কথা বললেন, জড়িয়ে ধরলেন এবং আবেগাপ্লুত হয়ে অশ্রু বিসর্জন করলেন। প্রধানমন্ত্রীর সফরের সেইসব আবেগঘন দৃশ্যের ছবি দেশী-বিদেশী গণমাধ্যমে অত্যন্ত গুরুত্বসহকারে ছাপল। রোহিঙ্গাদের দুঃখ-দুর্দশা দেখে প্রধানমন্ত্রী সীমান্ত খুলে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন এবং অসহায় শরণার্থীদের আশ্রয় ও পুনর্বাসনের জন্য তার সরকারের সর্বোচ্চ শক্তি নিয়োগ করার আশ্বাস দিয়ে বললেন- যদি ১৬ কোটি লোককে খাওয়াতে পারি, তবে সাত লাখ রোহিঙ্গাকেও খাওয়াতে পারব।
প্রধানমন্ত্রী ঢাকা ফেরার পর তার মানবিকতা, উদারতা ও সাহসী নেতৃত্বের অনুপম গুণাবলির কথা কল্পনা করতে করতে সরকারসমর্থক লোকজন প্রবলভাবে আবেগতাড়িত হয়ে পড়লেন। তারা দশমুখে প্রচার শুরু করলেন, এবার নিশ্চয়ই নোবেল কমিটি প্রধানমন্ত্রীকে নোবেল শান্তি পুরস্কার না দিয়ে রেহাই পাবে না। একদল সরকারসমর্থক আরো একটু আবেগপ্রবণ হয়ে বলতে শুরু করল, প্রধানমন্ত্রীর ইমেজ, ব্যক্তিত্ব, সুনাম এবং মর্যাদা এমন উচ্চতায় পৌঁছে গেছে, সেখানে তাকে নোবেল পুরস্কারে ভূষিত করা হলে নোবেল কমিটি হারানো গৌরব ফিরে পাবে এবং তাদের পুরস্কারের মান ও শান বাড়ে।
উল্লিখিত টইটম্বুর ভাবাবেগের ভালোবাসায় সিক্ত হয়ে আমাদের প্রধানমন্ত্রী বিশাল এক রাজকীয় বহর নিয়ে মার্কিন মুলুকের নিউ ইয়র্ক শহরে গেলেন জাতিসঙ্ঘ সাধারণ পরিষদে যোগদানের জন্য। ইতোমধ্যে খবর বেরোল যে, মিয়ানমারের নেত্রী সু চি এবং ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবারের জাতিসঙ্ঘ সাধারণ পরিষদে যোগদানের পূর্বসিদ্ধান্ত বাতিল করেছেন। আবেগপ্রবণ বাঙালি বলতে শুরু করল যে, তারা জনরোষের ভয়ে আমেরিকা যাননি। সরকারসমর্থকেরা বললেন- আমাদের প্রধানমন্ত্রীর মুখোমুখি হওয়ার দুঃসাহস ও দুর্বুদ্ধি তাদের হয়নি। কারণ এবারকার অধিবেশনে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীই থাকবেন সব আলোচনা এবং আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু।
বাঙালির চিরায়ত ভাবাবেগ এবং চিত্তচাঞ্চল্যের অনুপম অভ্যাসের কবলে পড়ে রোহিঙ্গা সমস্যা কি বাড়ছে না কমছে তা দেখার মতো লোকের সংখ্যা এ দেশে যে খুব বেশি নেই তা বেশ দিব্যি করেই বলা চলে। সমস্যাটির সাথে কী কী আঞ্চলিক সমস্যা এবং কী কী আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক কূটচালের সুদূরপ্রসারী চক্রান্ত রয়েছে তা যদি অবিলম্বে চিহ্নিত না করে শুধু আবেগ দিয়ে রাজ্যের সব ত্রাণ কক্সবাজারে জড়ো করা হয়, তবে পরিস্থিতির উন্নতি হবে না।
দেশ-বিদেশের খবর রাখেন এমন পাঠক নিশ্চয় লক্ষ করেছেন, মিয়ানমার সরকার কোনো কিছুকেই পাত্তা দিচ্ছেন না। তারা সুদীর্ঘকাল ধরে জাতিসঙ্ঘ এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা শক্তির রাজনৈতিক ও বাণিজ্যিক অবরোধ মোকাবেলা করে এসেছে অনেকটা উত্তর কোরিয়া এবং ইরানের মতো। কিন্তু কোনো অবরোধই তাদের টলাতে পারেনি। কারণ, আঞ্চলিক রাজনীতিতে শক্তিশালী প্রতিবেশীদের সঙ্গে সে এমন একটি কূটনৈতিক এবং কৌশলগত সামরিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক গড়ে তুলেছে যার ফলে রাষ্ট্র চালাতে তাদের কোনো অসুবিধা হয়নি। ভারত, চীন, লাওস, থাইল্যান্ড, ভুটান এবং একটু দূরের ভিয়েতনামের সঙ্গে রয়েছে তাদের চমৎকার দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক। যেসব দেশ সামরিক অস্ত্র ও সরঞ্জামাদি বিক্রয় করে সেসব দেশের সাথেও তাদের দ্বিপক্ষীয় কূটনৈতিক সম্পর্ক অত্যন্ত মজবুত।
তাদের নিয়মিত সেনাবাহিনীর সংখ্যা প্রায় সাড়ে পাঁচ লাখ। বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্স এবং প্যারা মিলিটারি শক্তির সংখ্যা আরো তিন লাখ। বিমানবাহিনীর যুদ্ধবিমান রয়েছে ২৪৯টি। ট্যাংক প্রায় ৬০০ এবং অন্যান্য যুদ্ধবাহনের সংখ্যা প্রায় দেড় হাজার। অন্য দিকে নৌবাহিনীতে রয়েছে ১৫৫টি অত্যাধুনিক ও সুসজ্জিত যুদ্ধজাহাজ।
মিয়ানমারের অর্থনীতি বিদেশনির্ভর নয়। অন্য দিকে তাদের যে দুর্লভ বনজ ও খনিজসম্পদের বিশাল ভাণ্ডার রয়েছে, যার জন্য পশ্চিমা বিশ্ব বিভিন্ন ছল ও ছুতোয় মিয়ানমারের সাথে সম্পর্ক স্থাপনের পাঁয়তারা করে আসছে বহু দিন থেকে। পশ্চিমারা এক দিকে সু চিকে নোবেল পুরস্কারে ভূষিত করেছে, অন্য দিকে সামরিক শাসকদের তাঁবেদারি করে গেছে সমানতালে। তারা নিরাপত্তা পরিষদের মাধ্যমে কোনো দিন মিয়ানমারের বিরুদ্ধে যেমন কার্যকর ব্যবস্থা নেয়নি, তেমনি অনাগত দিনেও এমনটি হবে বলে আশা করার কোনো কারণ দেখছি না। যেসব আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক প্রতিদ্বন্দ্বী দেশগুলো পরস্পরের সাথে দ্বন্দ্ব-ফ্যাসাদ, ঝগড়াঝাঁটি অথবা প্রতিনিয়ত যুদ্ধের হুমকি দিয়ে চলেছে তারাও মিয়ানমার প্রসঙ্গে সমস্বরে কথা বলছেন।
বাংলাদেশের কূটনৈতিক ব্যক্তিবর্গকে অবশ্যই বিবেকের সর্বশক্তি প্রয়োগ করে ভাবতে হবে, কেন চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ও পারস্পরিক শত্রু বলে বিবেচিত ভারত-পাকিস্তান, চীন-ভারত, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র-চীন, যুক্তরাষ্ট্র-রাশিয়া, যুক্তরাষ্ট্র-উত্তর কোরিয়া, উত্তর কোরিয়া-দক্ষিণ কোরিয়া, উত্তর কোরিয়া-জাপান প্রভৃৃতি রাষ্ট্রশক্তি একই ভাষায় কথা বলছে! বাংলাদেশের তথাকথিত বন্ধু বলে পরিচিত ভারত কেন রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশের পাশে দাঁড়াচ্ছে না। এমনকি আমাদের প্রধানমন্ত্রীর পারিবারিক বন্ধু ভুটান বাংলাদেশের ব্যাপারে একটুও নড়ছে না। এসব বিবেচনা করলে বাংলাদেশে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের ভূত-ভবিষ্যৎ নিয়ে আতঙ্কিত না হয়ে উপায় নেই।
আমরা নিকট অতীতে কোনো দিন মিয়ানমারের সাথে বেয়াদবি করিনি। আমাদের বিজিবি সদস্যদের ধরে নিয়ে যাওয়ার পরও আমরা আমাদের সীমানার গহিন অরণ্যে অনুপ্রবেশ করে পথ হারানো নাসাকা বাহিনীর সদস্যদের খুঁজে বের করে জামাই-আদরে তাদের দেশে ফেরত পাঠিয়েছি। আমরা তাদের ইয়াবা অর্থনীতিকে সর্বশক্তি দিয়ে বাঁচিয়ে রেখেছি এবং তাদের দেশের প্রায় আট লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দেয়ার পরও যাতে তারা রাগ না করে এ কারণে দুই লাখ টন পিঠা-পায়েস তৈরি করার উপযুক্ত অপ্রয়োজনীয় আতপ চাল আমদানির উদ্যোগ নিচ্ছি। তারপরও কেন তারা সীমান্তের ওপারে সামরিক মহড়া চালাচ্ছে- কেন তাদের সামরিক হেলিকপ্টার গত কয়েক দিনে ১৯ বার আকাশসীমা লঙ্ঘন করে আমাদের দেশে ঢুকে চোখরাঙিয়ে যাচ্ছে এবং কেন তারা আমাদেরকে একটু পাত্তা তো দূরের কথা- জিজ্ঞেসও করছে না?
সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় আমার বারবার শুধু প্রয়াত সৈয়দ সামসুল হকের পরানের গহীন ভিতর কবিতার প্রথম তিনটি লাইন মনে পড়ছে। কবি বলেন-
‘আমি কার কাছে গিয়া জিগামু সে দুঃখ দ্যায় ক্যান,
ক্যান এতো তপ্ত কথা কয়, ক্যান পাশ ফিরা শোয়,
ঘরের বিছন নিয়া ক্যান অন্য খ্যাত রোয়’
সূত্র: এমটিনিউজ২৪.কম