175726

আশুরার দিনে রোজা রাখার ফজিলত!

ইসলামিক পঞ্জিকা অনুযায়ী মুহররম মাসের দশম দিনকে আশুরা বলা হয়। এটি ইসলাম ধর্ম অনুসারীদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ দিন। সুন্নি মতানুযায়ী ইহুদীরা মুছা আ. এর বিজয়ের স্মরণে আশুরার সওম পালন করত। তবে শিয়া মত এ ইতিহাসকে প্রত্যাখ্যান করে এবং তারা আশুরাকে কারবালার বিষাদময় ঘটনার স্মরণে পালন করে।

এই দিনটি শিয়া মুসলমানদের দ্বারা বেশ আনুষ্ঠানিকভাবে পালন করা হয়ে থাকে। এ উপলক্ষে তারা বিভিন্ন ধরনের মিছিল, মাতম ও শোকানুষ্ঠান আয়োজন করে। তবে একটি ক্ষুদ্র অংশ ততবীর পালন করে থাকে। শিয়া সংখ্যাগরিষ্ঠ অঞ্চলগুলোতে এসব অনুষ্ঠান চোখে পড়ার মত। যেমন- পাকিস্তান, আফগানিস্তান, ইরান, ইরাক, লেবানন ও বাহরাইন।

আয়েশা রা: হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রমজান মাসের রোজা ফরজ করার আগে মুসলমানেরা আশুরার দিন রোজা রাখত। আর এ দিন কাবাঘরের গিলাফ পরানো হতো। যখন রমজানের রোজা ফরজ করা হলো তখন রাসূল সা: এ ঘোষণা দিলেন, তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি ইচ্ছা করে এ দিনের রোজা রাখার সে রোজা রাখবে। আর যে রোজা পরিহার করতে চায় সে তা পরিহার করবে (বুখারি-১৫১৫, ১৭৯৪) আশুরার দিনে রোজা রাখার বিশেষ ফজিলত হচ্ছে, রাসূল সা:কে এ দিনের রোজা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, ‘এ দিনের রোজা পালন গত এক বছরের গুনাহগুলোর কাফফারাস্বরূপ’ (সহি মুসলিম-১১৬২)।

ইবনে আব্বাস রা: থেকে বর্ণিত অপর এক হাদিসে এসেছে, আশুরার দিবসের রোজা প্রসঙ্গে তাকে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, ‘আমার জানা নেই রাসূল সা: এ দিন ছাড়া অন্য কোনো দিন ফজিলতের উদ্দেশ্যে রোজা পালন করতেন। আর এ মাস অর্থাৎ রমজান ছাড়া অন্য কোনো মাসে তিনি রোজা পালন করতেন।’

সহি মুসলিমের অপর বর্ণনায় এসেছে, রাসূল সা: এরশাদ করেছেন, ‘আশুরার দিবসের রোজা পালনে আমি গত বছরের গুনাহের কাফফারা হিসেবে আশা পোষণ করি’ (সহি মুসলিম-২৮০৩)।

সহি বুখারি ও মুসলিমে সালামাহ ইবনে আকওয়া রা: হতে বর্ণিত, নবী সা: বনি আসলাম গোত্রের এক লোককে নির্দেশ দিলেন সে যেন লোকদের মাঝে এ ঘোষণা করে দেয়, যে আজ সকালে খেয়েছে সে যেন দিবসের বাকি অংশ রোজা পালন করে, আর যে ব্যক্তি কিছু খায়নি সে যেন রোজা রাখে। কেননা আজকের এ দিন আশুরার দিন।

হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, মহানবী (সা.) মদিনায় এসে ইহুদিদের আশুরার রোজা রাখতে দেখে জিজ্ঞাসা করলেন, তোমরা এটা কিসের রোজা রাখ? তারা উত্তরে বলল, আশুরা একটি বড় দিন। এ দিনে আল্লাহতায়ালা হজরত মুসা (আ.) ও তার সম্প্রদায়কে মুক্তিদান করে ফেরাউন ও তার সম্প্রদায়কে ধ্বংস করেছিল। ফলে মুসা (আ.) ওই দিন রোজা রেখেছিলেন। আর আমরা তার অনুকরণ করে এ রোজা রেখে থাকি। মহানবী (সা.) তাদের বললেন, তোমাদের তুলনায় মুসা (আ.)-এর ব্যাপারে আমাদের হক বেশি। অতএব, মহানবী (সা.) নিজে আশুরার রোজা রাখলেন এবং অন্যদেরও রাখার নির্দেশ দিলেন। (মিশকাত) অধিকাংশ উলামার মতে, রমজানের রোজা ফরজ হওয়ার আগে আশুরার রোজা ফরজ ছিল। পরবর্তীতে রমজানের রোজা ফরজ হওয়ায় আশুরার রোজা রহিত হয়ে যায়। তবে নফল রোজা হিসেবে এর অনেক ফজিলত রয়েছে। অর্থাৎ আশুরার রোজার ফলে অতীতের এক বছরের সমস্ত সগিরা গুনাহ ক্ষমা করা হয়। উলামাদের মতে, শুধু আশুরার দিন একটি রোজা রাখা মাকরুহ। কেননা, এতে ইহুদিরাও রোজা রাখে বিধায় তাদের সাদৃশ্য হয়ে যায়। আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, মহানবী (সা.) যখন আশুরার রোজা রাখা শুরু করলেন এবং সাহাবাদেরও রাখতে বললেন, তখন সাহাবারা আরজ করলেন, ইয়া রসুলুল্লাহ! এ দিনটিকে ইহুদিরা বড় মনে করে থাকে। উত্তরে মহানবী (সা.) বললেন, আমি যদি আগামী বছর বেঁচে থাকি তাহলে ১০ তারিখের সঙ্গে ৯ তারিখও রোজা রাখব। (মিশকাত) মহানবী (সা.) আরও বলেন, তোমরা আশুরায় রোজা রাখ এবং ইহুদিদের বিরোধিতা করে এর আগে এবং পরে একটি করে রোজা রাখ। (মা সাবাতা বিস সুন্নাহ)।

আল্লামা ইবনুল হুমাম (র.) বলেন, ১০ তারিখের সঙ্গে আগের এক দিন অথবা পরের একদিন মিলিয়ে রোজা রাখা মুস্তাহাব। শুধু ১০ তারিখের রোজা রাখা মাকরুহ। (মিরকাত)। বায়হাকিতে বর্ণিত আছে, যে ব্যক্তি আশুরার দিন পরিবার-পরিজনের জন্য প্রশস্ত হাতে খরচ করবে, আল্লাহ তাকে সারা বছর সচ্ছল এবং প্রশস্ত রাখবেন। (মিশকাত)।

ad

পাঠকের মতামত