177090

এবার দেশান্তরী হেলালের স্ত্রী ও কন্যা নিখোঁজ, বাসায় পুলিশের তল্লাশী

কাশেম উদ্দিন (ফরিদপুর প্রতিনিধি) : সরকারি দল আওয়ামী লীগের অমানুষিক নির্যাতনের কারণে দেশ ছেড়ে নিজের জীবনটা বাঁচালেও, এবার আর রক্ষা হলো না জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)’র এক সময়ের তুখোর নেতা হেলাল শেখের স্ত্রী ও কন্যার।
গতকাল আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী এক নেতার নির্দেশে হেলাল শেখের স্ত্রী ও কন্যাকে তার নিজ বাড়ি থেকে উঠিয়ে নিয়ে যায় একদল সন্ত্রাসী। তার পর থেকে তাদের আর কোনো সন্ধান পাওয়া যাচ্ছে না।

পরিবারের অন্যসদস্যরা থানায় জিডি করতে গেলে কর্তব্যরত কর্মকর্তারা জিডি গ্রহণ করতে অপারগতা প্রকাশ করে। তারা কোন ধরনের সহযোগীতা তো করেই নি, উল্টো হুমিকি দেয় এ বিষয়ে ঘাটাঘাটি করলে ফলাফল ভালো হবে না এবং চুপ থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়। ঘটনা এখানেই শেষ নয়, ক্ষমতাসীনদের ইন্ধনে হেলাল শেখের বাড়িতে এসে ফরিদপুর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল আলিমুদ্দিনের নেতৃত্বে পুলিশের একটি ফোর্স তল্লাশী চালায়। তারা হেলাল শেখ, তার স্ত্রী ও কন্যার অবস্থান সম্পর্কে জানতে চায়।

এদিকে প্রতিপক্ষের জুলম,, অত্যাচার ও অমানুষিক নির্যাতনে অসহ্য হয়ে পরেন হেলালের পরিবার। এই অমানুষিক নির্যাতনের পরেও তারা শুধু কোনোভাবে বাঁচতে চেয়ে ছিলেন। কিন্তু শেষ রক্ষা আর হলো না। প্রভাবশালী ও ক্ষমতাসীন দলের ইন্ধনে একদল সন্ত্রাসী হেলাল শেখের পরিবারের অন্যান্য সদস্যদেরকে শারিরীক ও মানসিকভাবে অপদস্ত ও লাঞ্ছিত করে বলে হেলালের বাড়ির প্রতিবেশীরা জানায়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক প্রতিবেশী জানায়, হেলালের স্ত্রী ও মেয়ে নিখোঁজ হওয়ার পূর্বে সন্ত্রাসীরা তাদেরকে শারিরীকভাবে হেনস্তা ও অপদস্ত করে।

হেলালের এক আত্মীয় জানায়, প্রতিপক্ষ হায়েনাদের কুনজরে পরে যাওয়ায় এবং অপমান ও লজ্জা সহ্য করতে না পেরে হেলালের স্ত্রী মোছাঃ রুমি আক্তার এবং কন্যা নাজনিন নাহার হ্যাপি বাড়ি ছেড়ে চলে যায়। তাদের সন্ধান আজও কেউ জানতে পারে নি। কেউ কেউ বলছেন, তারা গুমের শিকার হয়েছেন।

অপরদিকে, এ খবর শুনে দেশান্তরী হেলাল শেখ মানসিক ও শারিরীকভাবে অসুস্থ্য হয়ে পরেন। টেলিফোনে হেলাল শেখ আমাদের প্রতিনিধিকে বলেন, আমার আপনজন আর কেউ রইল না। আমি মরে গেলেই বেঁচে যাই। আল্লাহ যেন আমার মত অসহায় কাউ না করে। তিনি আরো বলেন, আমি আমার এবং আমার পরিবারের উপর এই অত্যাচারের বিচার বিশ্ববাসীর কাছে দিলাম। কারণ দেশে তো কোনো বিচার পাবো না। হেলাল শেখ আরো বলেন, পৃথিবীর সকল মানবতাবাদী মানুষদের কাছে একটাই চাওয়া, তারা যেন এই অমানবিকতার প্রতিবাদ জানায়।

ইতোপূর্বে, ২০০৯ সালের জানুয়ারি মাসের শেষ সপ্তাহে মো. মজিদ শেখের ছোট ছেলে যুবদলের সহ-সভাপতি মো. হেলাল শেখের ওপর গ্রামে একটি মেলা চলাকালে প্রকাশ্য দিবালোকে আওয়ামী লীগ সমর্থিত সন্ত্রাসীরা আচমকা ধারালো অস্ত্র নিয়ে হামলা করে। সরকারি দলের ওই সন্ত্রাসীদের এলোপাথাড়ি কোপে একপর্যায়ে তিনি জ্ঞান হারিয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। এরপরও অস্ত্রধারীরা তাকে ছাড় দেয়নি। হেলালের একটি হাতের রগ কেটে দেওয়ার পর হেলাল নিস্তেজ হলে পড়ে থাকলে তারা নিশ্চিত হয় যে, হেলাল মারা গেছেন। এরপর তারা হামলাস্থল থেকে বীরদর্পে সরে পড়ে। হামলাকারীরা চলে যাওয়ার পর স্থানীয় লোকজন এসে তাকে উদ্ধার করে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে যায়। অবস্থার অবনতি দেখে হেলালকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানোর পরামর্শ দেন সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকরা। ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে আসার পর তাকে ঢাকা পঙ্গু হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। পঙ্গু হাসপাতালে কয়েকদিন চিকিৎসার পর শঙ্কামুক্ত হলেও দীর্ঘদিন তিনি ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। এরপর পুরোপুরি বিশ্রামের শর্তে হেলালকে হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র দেওয়া হলে তিনি বাড়িতে ফিরে আসেন। কিন্তু আসার পরপরই শাসকদলের সন্ত্রাসীরা আবার তাকে হামলার পরিকল্পনা করে।

 

পরিস্থিতি বেগতিক দেখে তিনি প্রাণে বাঁচার জন্য বাড়ি থেকে পালিয়ে যান। বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় থানায় মামলা করতে গেলে পুলিশ তার মামলা নেয়নি। উপরন্তু তার নামে ফরিদপুরের নগরকান্দা থানায় শাসকদল আওয়ামী লীগের প্ররোচনায় রাজনৈতিক কারণে মিথ্যা মামলা দায়ের করা হয় যার জিআর নং-১৪২/২০০৫। একদিকে সন্ত্রাসী হামলা, অন্যদিকে পুলিশের গ্রেপ্তার ও ক্রসফায়ারের ভয়ে তিনি শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশ ছেড়ে পালাতে বাধ্য হন।

আমাদের ফরিদপুরের স্থানীয় প্রতিনিধি আকমল হোসেন জানান, সরকারি দল আওয়ামী লীগের প্রভাবে হেলাল শেখের ব্যাপারে ফরিদপুরের কোনো মানুষই প্রকাশ্য কথা বলতে সাহস পান না। বিশেষ করে ফরিদপুর জেলার সদর থানা এলাকার গেরদা ইউনিয়নের মানুষ সরকারি দলের নেতাকর্মীদের হাতে জিম্মি হয়ে আছে। এই কারণে হেলাল শেখের দেশ ছাড়ার খবর ফরিদপুরে এলে তার পরিবারের ওপর নেমে আসে সরকারি দলের হুমকি। সঙ্গে যুক্ত হয় পুলিশের হয়রানি। হেলাল শেখকে দেশে ফিরিয়ে এনে পুলিশের হাতে তুলে না দিলে তার পরিবারের সদস্যদের মিথ্যা মামলায় ফাঁসানোর হুমকিও দিচ্ছে পুলিশ। হেলাল শেখের বাবাকে পুলিশের ফরিদপুর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল আলিমুদ্দিন এবং ওই থানার উপ-পরিদশক (এসআই) মো. নাজিম উদ্দিন হুমকি দিয়েছেন বলে শেখ হেলালের বাবা আব্দুল মজিদ শেখ জানান

 

ad

পাঠকের মতামত