175373

যে রোগ হলে মা তার সন্তানকে শত্রুভেবে মেরে ফেলতে পারে!

রেহেসন্তান জন্ম হল সবাই খুশি । খুশি নয় একমাত্র মা। কিন্তু সন্তান জন্ম দেওয়ার কারণে সবচেয়ে বেশি খুশি হওয়ার কথা তার। মাযের এই অস্বাভাবিক আচরণের পিছনে রয়েছে এক ভয়ঙ্কর মানসিক রোগ। সাধারণত বাচ্চা জন্মদানের প্রথম দু’সপ্তাহের মধ্যে মায়ের ভেতর এরকম অস্বাভাবিক আচরণ লক্ষ করা যায়। একে পোস্টপারটাম সাইকোসিস বা প্রসব-পরবর্তী মনোব্যাধি বলা হয়।

অনেক ক্ষেত্রে এই রোগকে মাতৃকালীন ডিপ্রেশনের সাথে তুলনা করলেও দুটি বিষয় এক নয়। পোস্টপারটাম সাইকোসিসকে এক প্রকারের বাইপোলার ডিসঅর্ডার বলা চলে। এই রোগের কারণে মায়ের মনে হবে সন্তান তার শত্রু। এমনকি সন্তানকে মেরেও ফেলতে পারে। খুবই কম সংখ্যক মহিলা যারা মা হয়েছেন তাদের ভেতর এই মনোব্যাধি দেখা যায়। নগণ্য হলেও মারাত্মক এই মানসিক রোগে নতুন মা হওয়া ১,০০০ জনের ১/২ জনের মধ্যে দেখা যায়।

লক্ষণসমূহ: চেহারার কোনো আবেগের অভিব্যক্তি ঘটবে না। আগের মতো ক্ষুধা-তৃষ্ণা অনুভব করবে না। সবকিছুতে সিদ্ধান্তহীনতা কাজ করবে। ক্ষোভ এবং হঠাৎ রেগে যাওয়া। আত্মহত্যার চেষ্টা করে। কারণ তিনি ভাবেন অন্যদের বা বাচ্চার তাকে দরকার নেই। ঘুমে ব্যাঘাত ও অস্থিরতা। স্বাভাবিক কারণে মায়েদের ঘুমে যেমন ব্যাঘাত ঘটে তেমনটা নয়। অকারণেই ভয় পাওয়া। ডিপ্রেশনে থাকা; কারও সাথে কথা বলবে না, অকারণেই কাঁদবে বা উদ্বিগ্ন থাকবে।

এই রোগের কারণ সমূহ: এখনো পোস্টপারটাম সাইকোসিসের নির্দিষ্ট কোনো কারণ বের করা সম্ভব হয়নি। তবে যেগুলোকে এর জন্য দায়ী করা হয় সেগুলো হলো:

বাচ্চা জন্মের সময় হঠাৎ হরমোন নিঃসরণে যে পরিবর্তন আসে তার প্রভাব। নিজের কোনো মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা থাকলে, বিশেষ করে বাইপোলার ডিজঅর্ডার বা সিজোফ্রেনিয়ার রোগী হয়ে থাকলে। পরিবারের কোনো সদস্যের মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা থাকলে, বিশেষ করে পোস্টপারটাম সাইকোসিস থাকলে। বাচ্চা প্রসবের সময় কোনো ভীতিকর পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়ে থাকলে, যেমন- প্রচন্ড বেদনা বা দীর্ঘ গর্ভকালীন অবস্থা ইত্যাদি। আশানুরূপ বাচ্চা না হওয়া (গায়ের রঙ বা লিঙ্গ ইত্যাদি)। এছাড়া পূর্বে গর্ভধারণের সময় হতেই পোস্টপারটাম সাইকোসিসে আক্রান্ত হয়ে থাকলে।

চিকিৎসা: পোস্টপারটাম সাইকোসিসের ক্ষেত্রে খুব দ্রুত চিকিৎসার আওতায় আনা জরুরি। মারাত্মক মানসিক রোগ হওয়া সত্ত্বেও এটি সারিয়ে তোলা সম্ভব। প্রয়োজনে হাসপাতালে ভর্তি করাও লাগতে পারে। থাকতে হতে পারে ওষুধ গ্রহণের কড়া নিয়মের মধ্যে। তিন ধরনের ওষুধের যেকোনো একটি বা দুটি বা সবক’টি লাগতে পারে:

১।অ্যান্টিডিপ্রেসেন্ট বা বিষন্নতারোধক ওষুধ (ডিপ্রেশন লেভেল কমাতে)

২।অ্যান্টিসাইকোটিক (ম্যানিয়া বা বিভ্রম এবং হ্যালুসিনেশন হলে)

৩।মুড স্ট্যাবিলাইজার (ঘনঘন মুড পরিবর্তন হওয়া কমাতে)

ঔষুধের পাশাপাশি থেরাপিও খুব গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়া চিকিৎসার পাশাপাশি সামাজিক সহযোগিতা খুবই দরকারি একজন পোস্টপারটাম সাইকোসিসে আক্রান্ত মায়ের জন্য।

ad

পাঠকের মতামত