বিয়ে করতে দেড় বছর ধরে ময়ূরীকে খুঁজেছি !
চলচ্চিত্রের একসময়ের আলোচিত নায়িকা ময়ূরীর বিয়ে নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে এখন আলোচনার ঝড় বইছে। ময়ূরী সম্প্রতি বিয়ে করেছেন শফিক জুয়েল নামের এক যুবককে। ময়ূরীর দ্বিতীয় স্বামী শফিক জুয়েল জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের ৪১তম আবর্তনের শিক্ষার্থী।
ময়ূরীর সঙ্গে পরিচয়, তাকে বিয়ে করা, তাদের দাম্পত্য জীবনসহ নানা বিষয়ে একান্ত সাক্ষাৎকারে কথা বলেছেন শফিক জুয়েল।
প্রশ্ন : কেমন আছেন?
শফিক জুয়েল : ভালো আছি।
প্রশ্ন : নায়িকা ময়ূরীর সঙ্গে কীভাবে পরিচয় হলো?
শফিক জুয়েল : আমি তার ফোন নম্বর সংগ্রহ করে যোগাযোগ করি। তিনি পয়লা বৈশাখে (১৪ এপ্রিল) জাহাঙ্গীরনগর ক্যাম্পাসে এসে দেখা করেন। এরপর ফোনে কথা হতো অল্পস্বল্প। তারপর বিয়ে।
প্রশ্ন : বিয়ে হলো কবে?
শফিক জুয়েল : বিয়ে হয়েছে পরিচয়ের তিন-চার মাসের মাথায়। আমি ময়ূরীকে ২০১৭ সালের ২২ জুন বিয়ে করি। সেটি ২৭ রমজান ছিল। তবে বিয়ের কথা প্রকাশিত হয় জুলাই-আগস্টে। আসলে পারিবারিক ও সামাজিক প্রতিবন্ধকতার কারণে আমরা কিছুদিন পরে প্রকাশ করি বিয়ের কথা।
প্রশ্ন : অনেক সংবাদপত্রে আপনাকে তৃতীয় বিয়ে হিসেবে প্রকাশ করা হচ্ছে। এটা কি সত্য?
শফিক জুয়েল : না না, এটা মিথ্যা কথা। আপনার ভাবীর (ময়ূরী) প্রথম স্বামী মারা যাওয়ার পরেই আমার সঙ্গে বিয়ে হয়। তবে মাঝখানে অনেকেই তাকে বিয়ে করতে চেয়েছে। তাদের বিশ্বস্ত মনে না করায় লিজা (ময়ূরীর আসল নাম) সবাইকে ফিরিয়ে দেন।
প্রশ্ন : আপনার পরিবার সম্পর্কে বলুন।
শফিক জুয়েল : আমার বাড়ি কুড়িগ্রাম জেলার রাজিবপুর উপজেলায়। আমার বাবার নাম ইনসাফ আলী ও মা রাফেজা স্বপ্না। আমরা চার ভাই। কোনো বোন নেই আমাদের।
প্রশ্ন : বিয়ের ক্ষেত্রে আপনি কি পরিবার থেকে কোনো ধরনের বাধার সামনে পড়েছেন?
শফিক জুয়েল : হ্যাঁ, তা তো হয়েছিই। আমার পরিবারের সবাই বিষয়টি গ্রহণ করতে পারেনি। কারণ গ্রামীণ পরিবেশে এমন একটি সিদ্ধান্তকে প্রথমে মেনে নেওয়ার মতো সামাজিক পরিবেশ এখনো আমাদের দেশে তৈরি হয়নি। তবে আমার বাবা আমাদের জন্য দোয়া করেছেন, তিনি নিয়মিত আমাদের সঙ্গে কথা বলেন।
প্রশ্ন : আপনি দেশের একমাত্র আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে দর্শন বিভাগে পড়াশেনা করেন। তারা কীভাবে নিয়েছে আপনার এই বিয়েকে?
শফিক জুয়েল : আমি আসলে বিয়ের সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগেই ভেবেছি অনেক বাধা আসবে, কথা হবে। অনেকেই বিয়ের আগে আমাকে নিরুৎসাহিত করেছে। কিন্তু সমাজে পরিবর্তনের জন্য কিছু করতে হলে আপনাকে প্রতিবন্ধকতা জয় করেই করতে হবে। অনেকেই পেছনে অনেক কথা বলেছে, তবে সামনাসামনি কিছুই বলেনি।
ফেসবুকে প্রথমে আমাদের নিয়ে সমালোচনা হলেও এখন মানুষের বোধোদয় হয়েছে যে, কারো ব্যক্তিগত বিষয় নিয়ে এভাবে পাবলিক প্লেসে হাসিঠাট্টা করা উচিত নয়। অনেকেই আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছেন ভার্চুয়াল জগতে। তাদের প্রতি আমি ও আমার স্ত্রী কৃতজ্ঞ।
প্রশ্ন : ময়ূরীর আগের পক্ষের মেয়ে আপনাকে কীভাবে গ্রহণ করছে?
শফিক জুয়েল : সে আমাকে খুবই ভালোবাসে এবং মূলত এই বিয়েতে ওর ভূমিকাই বেশি। এর আগে আরো কেউ কেউ ময়ূরীকে বিয়ে করতে চাইছে। সেখানে তিনি (ময়ূরী) পাত্তা দেননি কাউকে, কারণ এঞ্জেল (ময়ূরীর মেয়ে) তাদের পছন্দ করেনি।
প্রশ্ন : একজন তরুণ হিসেবে ময়ূরীকে বিয়ে করার ত্যাগ বা সাহস কখন এল?
শফিক জুয়েল : আমি দেড় বছর ধরে তাকে (ময়ূরী) খুঁজছিলাম। যখন আমি সংবাদ দেখি যে, তার প্রথম স্বামী মারা গেছেন, তখনই আমি সিদ্ধান্ত নিই তাকে বিয়ে করার। তারপর নায়িকা হ্যাপি যখন তাবলিগ শুরু করলো তখন আমার মনে হয়েছে যে, আমি একটু ময়ূরীর সঙ্গে দেখা করি। তারপর ফেসবুকে তাকে খুঁজে আমি দেখা করি এবং যেভাবে ভেবেছি, আলহামদুলিল্লাহ, তারপর সব সেভাবেই হয়েছে। এই হচ্ছে কথা, অনেক মিথ্যা সংবাদ ছড়িয়েছে যা সত্য নয়।
প্রশ্ন : সংবাদমাধ্যম ও সাংবাদিকদের কিছু বলতে চান?
শফিক জুয়েল : আমরা নিউজ হতে চাইনি। পরিবার, আত্মীয়স্বজন, পরিচিতদের অনেক রকম বাধা, সমালোচনা সহ্য করেই বিয়েটা হয়েছে। কিন্তু, নিউজটা আমাদের অজান্তে ছড়িয়ে পড়ে। নিউজগুলোর অধিকাংশ তথ্যই ছিল মিথ্যা। সাংবাদিক ভাইদের প্রতি নিবেদন, আমাদের সাথে কথা বলে সংবাদ করুন।
আমার ও ময়ূরীর সঙ্গে কথা বলে আমাদের বক্তব্যটি সঠিকভাবে তুলে ধরে যেন সংবাদ করা হয়। যেমন, আমি মাদরাসার শিক্ষক নই, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। ময়ূরীর দ্বিতীয় বিয়ে এটি, তৃতীয় নয়। অসত্য বা উড়ো খবরের ওপর ভিত্তি করে সাংবাদিক কিংবা ইউটিউব ব্যবহারকারীদের উচিত নয় কোনো কিছু প্রকাশ করা। তারা যেন ছবি ব্যবহারের ক্ষেত্রেও অনুগ্রহ করে সংবেদনশীলতার পরিচয় দেন।
প্রশ্ন : ছবির ব্যবহার মানে?
শফিক জুয়েল : ময়ূরী চলচ্চিত্র ছেড়ে দিয়েছে প্রায় এক যুগ। এখন সে ব্যক্তিগত জীবনে একটি সন্তানের মা। আমার স্ত্রী। তার ভুল সময়ের ছবি দিয়ে কোনো কিছু প্রকাশ করলে তা তো আমাদের আহত করতে পারে। এখন আমাদের ছবি আছে, আমার সঙ্গে ওর বোরকা পরা ছবি আছে। সাংবাদিক ভাইরা চাইলে আমরা তা দিব। কিন্তু এমন কোনো ছবি যেন না ব্যবহার করেন যাতে একজন নারী যিনি সে সময়ের ভুল বুঝতে পেরে দূরে সরে মার্জিত জীবনযাপন করছেন, তিনি কষ্ট পান। এইটুকু বিনীত নিবেদন রইল মিডিয়ার প্রতি।
প্রশ্ন : ময়ূরীর নাম এলেই অশ্লীল চলচ্চিত্রের কথা তোলেন অনেকে। এ ব্যাপারে আপনার মতামত কী?
শফিক জুয়েল : আমার স্ত্রীকে অশ্লীল সিনেমার নায়িকা বলা হয়। কিন্তু এর জন্য দায়ী প্রযোজক, পরিচালক, সেন্সর বোর্ড। আর তার বিপরীতে যেসব নায়ক অভিনয় করেছে, তাদের অশ্লীল নায়ক বলা হয় না কেন? তার সময়ের এমন কোনো নায়ক নেই, যার সঙ্গে ময়ূরী কোনো সিনেমা করেনি। সমাজের চোখ কেন একজন নারী ময়ূরীর দিকেই পড়ে বারবার?
প্রশ্ন : ময়ূরী সম্পর্কে আপনাকে মূল্যায়ন করতে বললে কী বলবেন?
শফিক জুয়েল : আমার স্ত্রী আমৃত্যু আল্লাহর পথে চলতে চায়। সে অনেক বড় এবং ভালো মনের অধিকারী। নইলে সে কেন একজন বেকারকে বিয়ে করবে! কত টাকাওয়ালা লোকজন তাকে বিয়ে করার জন্য ঘুরেছে। কিন্তু, সে একজন সৎ ও ভালো মনের মানুষের জন্য অপেক্ষায় ছিল।
নায়িকা ময়ূরী তার আয় থেকে অনেককেই দুহাত ভরে সাহায্য করেছে।
আত্মীয়স্বজনদের বিদেশ পাঠানো, বিয়ে দেওয়া, চিকিৎসা, পড়ালেখা করানো, চাকরি পাইয়ে দেওয়াসহ লাখ লাখ টাকা মামা, খালা, কাজিন, এলাকার লোকজনের জন্য খরচ করেছে। এফডিসি, সার্কাস এসবের সাথে জড়িত অনেক স্টাফ ময়ূরীর টাকায় উপকার পেয়েছে। মানুষ দূর থেকে তাকে যা-ই ভাবুক না কেন, আমি তাকে কাছ থেকে দেখেছি, ভালোবেসেছি। অনেকেই তাকে কষ্ট দিয়েছে, প্রতারণা করেছে, টাকা মেরেছে, ঢাকায় জমি মেরে দিছে, আবার জমির টাকা নিয়ে জমি দেয়নি, উল্টাপাল্টা মিথ্যা নিউজ দিয়েছে। ময়ূরীকে ইউজ করে অনেকেই টাকা কামিয়েছে। ময়ূরী তার সব কথা যদি বলতে পারত, তাহলে মানুষ উপলব্দি করত তার মানবিক উদারতা। তাকে নিয়ে এভাবে মন্দ কিছু বলতে পারত না।
প্রশ্ন : আপনাদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?
শফিক জুয়েল : ইনশাআল্লাহ বাকি জীবন একসঙ্গে যেন সুখে থাকতে পারি সে চেষ্টাই করব। আপনারা দোয়া করবেন সবাই। আমরা গত আগস্ট মাসে তিন দিনের তাবলিগে গিয়েছি, এই মাসের শেষে (সেপ্টেম্বর) আবার যাব। আজ (২০ সেপ্টেম্বর) উত্তরায় নাইজেরিয়া থেকে একটি মহিলা তাবলিগ জামাত এসেছিল। আমরা সেখানেও সময় দিয়েছি। স্ত্রী, মেয়ে এঞ্জেল, শাশুড়ি ও আমি এখন টঙ্গীতে বাস করছি। দেশবাসীর কাছে আমরা দোয়া চাই।