175144

এবার অশ্লীলতা নিয়ে মুখ খুললেন মুনমুন

মুখ খুললেন মুনমুন – মুনমুন। বাংলা চলচ্চিত্রে অশ্লীলতার জন্য বিভিন্ন সময়ে কম আলোচিত হননি এ নায়িকা। যদিও এখনকার প্রেক্ষাপট অনেকাংশেই ভিন্ন। এক যুগ আগেও যারা নিয়িমিত সিনেমা হলগুলো চষে বেড়াতেন তাদের কাছে মুনমুন নতুন কিছু নয়। তার বিরুদ্ধে অশ্লীলতার অভিযোগ থাকলেও তা মানতে নারাজ মুনমুন। তার ভাষ্য ভিন্ন কিছু…

মুনমুনের বিরুদ্ধে অশ্লীলতার কেন এই অভিযোগ? কারা এই অশ্লীল চলচ্চিত্রের নির্মাতা? এমন অনেক বিষয়ে এক সন্ধ্যায় কথা বলেন মুনমুন। পাঠকদের জন্য তুলে ধরছি সেই আলোচনা।

উধাও ছিলেন কেন?

হঠাৎ করে বাংলা সিনেমায় অশ্লীলতা শুরু হয় যার জন্য আমি কাজ বন্ধ করে দেই। তখন চিন্তা করি আপাতত কাজ বন্ধ রাখি। বিয়ে করি পরে ভালো কাজ পেলে করবো।

কিন্তু দর্শক আপনাকে অশ্লীল ছবির নায়িকা হিসেবেই জানেন, এটা কিভাবে দেখছেন?

আপনারা সাংবাদিকরা অনেকে জানেন আবার অনেকে না জানার ভান ধরেন। ২০০৩ সালে আমি ফিল্ম ছেড়ে চলে গেলাম। এর পরের চারটা বছর অশ্লীলতায় ঘিরে ছিলো বাংলাদেশের ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি। এটার জন্য আপনি কয়জন শিল্পীকে দায়ী করবেন। যখন অশ্লীল সিনেমা শুরু হয় আমি তখন কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছিলাম। আমাকে কেউই কখনো বলেনি আমি অশ্লীল চলচ্চিত্রের নায়িকা।

আমার ছবি আপনারা দেখেন আমি যে ড্রেসগুলো পরেছি আমি যেসব সিন করেছি তা কি অন্য নায়িকারা করেনি? শাবনুর দেখায়নাই? পপি দেখায়নি? সবাই এমন পোশাক পরছে। দোষ কেন মুনমুনের একার হবে? মুনমুন কি বাথরুমে গিয়া ঘষাঘষি করছে অন্য নায়িকাদের মতো? তাহলে ওদের তালিকায় আমার নাম কেন? কেন ওদের দোষ না দিয়ে আমাকে দোষ দেয়া হয়?

আমি এটার জন্য অপমানিত হচ্ছি। পরে পরিচালক সমিতি, শিল্পী সমিতি, প্রযোজক সমিতি সবাই আমার পক্ষে কথা বলছে। আজ ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির সবাই আমাকে ওয়েলকাম করছে। কারণ আমি অনেক লক্ষ্মী নায়িকা ছিলাম। কারণ আমি কোনো দাম দেখাইনি। সবাই আমাকে অনেক পছন্দ করেন।

তাহলে আশ্লীল চলচ্চিত্রের জন্য দায়ী কারা?

অশ্লীলতা শুরু করলো এনায়েত করিম’রা। অশ্লীলতা পরিচয় করিয়েছে কিছু পরিচালক। তারপর আমরা যখন দেখলাম পরিবেশ খারাপের দিকে যাচ্ছে তখন আমি দূরে চলে যাই।

আপনারা বলুন শিল্পীরা কী ছবি বানায়? শিল্পীরা কী ড্রেস বানায়? যারা অর্থলগ্নি করছে তারা এটার সঙ্গে জড়িত ছিলো। যারা পরিচালক ছিলো তারা হেল্প করতো। কিছু শিল্পী এটার সঙ্গে আপোস করতো। আর শিল্পীরাতো বড়লোক না, ফিল্ম ছেড়ে অন্য কিছু করে চলতে পারবে না। তাদের আপোস করে চলতে হয়। আমার মতোযারা পরেনি, তারা ফিল্ম ছেড়ে চলে গেছে। অনেকে টাকা দিয়ে সাংবাদিকদের মুখ বন্ধ করে দিয়েছে আর যারা টাকা দেয়নি তাদের নামে বদনাম ছড়ানো হয়েছে।

২০০৭ সালে যখন আমি আবার চলচ্চিত্রে ফিরে আসি তখন অনেক পলিটিক্সের মধ্যেও দুইটা ছবির কাজ করেছি। আমাকে অনেকে অনেকভাবে চেষ্টা করছে চলচ্চিত্র থেকে দূরে সরাতে। কিন্তু বর্তমানে আমি কাজ করতেছি।আমাকে যারা সরিয়ে দিতে চাইছে তারা কিন্তু কেউ নেই। আমি মুনমুন কিন্তু ফিরে আসছি।

বিষয়টা কি এমন, আপনার উপর দোষ চাপিয়ে অন্যরা আড়াল হচ্ছেন?

হিরোদের সঙ্গে রোম্যান্টিক সিন করতেও ভয় পেতাম, কারণ করবো একটা, স্ক্রিনে না আবার অন্য কিছু দেখায়! কাউকে বিশ্বাস করতে পারছি না। যার কারণেই ওই সময়ে ফিল্ম ছেড়ে চলে যাওয়া। ব্যাপারটা এমন না, আমি জোর করে চলে গেছি। আমি ভাবলাম, এ মুহূর্তে ফিল্ম থেকে দূরে থাকি। পরে ভালো হলে আবার ফিরে আসবো।

আমি যখন ফিরে আসলাম তখন দেখলাম আমার এতো শত্রু, যা আমি কল্পনাও করিনি। আমি খুব সহজ সরল ছিলাম, অনেক কিছুই বুঝতাম না। যে যেভাবে কাজ করতে বলেছে ওই ভাবে করছি। আপনারা হয়তো বলবেন, আপনি অনেক রাগী ছিলেন শো-আপ করছেন।আমাকে পরিচালক শো-আপ করতে বলছে, শাবনুর যে ধরনের চরিত্রে কাজ করতো আমাকে তোওই ধরনের চরিত্র দেয়নি।আমাকে পরিচালক হাতে অস্ত্র নিয়ে মানুষ মারতে দিয়েছে। আমাকে যে ধরনের চরিত্রে কাজ করতে দিছে পরিচালক আমি করছি। আমি তো শুধু অভিনয় করেছি কিন্তু এর জন্য আমার ব্যক্তি জীবনে বদনাম করে ক্ষতি করার কী মানে?

আপনার মতে, আপনি এক ধরনের দৃশ্যে অভিনয় করতেন অথচ পর্দায় হতো অশ্লীল কিছু। এমনটা হতো কিভাবে?

ফিল্মে সহশিল্পী চরিত্রে যারা কাজ করে যেমন ফাইটিংয়ের জন্য যাদের আনা হয়েছে; এদের দিয়ে রেপ সিন গুলোতে কাপড় খুলে দৃশ্যগুলো নিতো। আমি প্রায় দেখতাম শুটিং চলাকালে আশেপাশে কিছু মেয়ে ঘোরাঘুরি করছে, আমি জানতাম না এদের দিয়ে কি করানো হয়। একদিন আমাকে মেকাপের একটা ছেলে বলেন, আপু জানেন এদের দিয়ে কি কাজ করানো হয়?

আমি বললাম, না আমি তো জানিনা।কি আর করানো হবে ফাইটের দৃশ্য করানো হয়? ওই ছেলে বলে, না আপা ওদের দিয়ে খোলানো হয়। আপনার রেপ সিন হইতেছে আপনি তো এই শর্ট দিবেন না। আপনার কাপড়টা ওদের পড়িয়ে পুরা খোলানো হয়। এগুলো পরে হলে প্রদর্শন করে। যখন এসব একের পর এক শুনতে থাকলাম বিভিন্ন জনের কাছে, আমি তো আর গ্রামে ছবি দেখতে জেতাম না।যদি দেখতাম তাহলে বুঝতাম ছবিতে কি কি যোগ করা হচ্ছে। এরপর সিদ্ধান্ত নিলাম ফিল্ম ছেড়ে চলে যাবো।

আপনি সিন করলেন একটা হলে চললো অন্যটা। সেন্সর বোর্ডের চোখে পড়েনি?

আসলে যারা এ ছবি বানিয়েছে তাদেরযদি জিজ্ঞাসা করতে পারেন সব চেয়ে ভালো হতো। তারাই জানে সেন্সরকে টেক্কা দিয়ে কিভাবে হল পর্যন্ত নিয়ে গেছে। আর তারাই বলতে পারবে এ ছবিগুলো দিয়ে কেমন ব্যবসা করছে। আমি ওই সময়ছিলাম না।

প্রতিবাদ করেননি?

প্রতিবাদ কে করবে? পানিতে থেকে কুমিরের সাথে লড়াই করবেন। আমি আর পপি একসাথে চলচ্চিত্রে আসি। পপি একটু সেক্সি, সুন্দরী ছিলো। এখন আপনারা যদি এটাকে অশ্লীল চোখে দেখেন, তাহলে অশ্লীল, না দেখলে ভালো। ওর আর আমার একই ধরনের ইমেজ ছিলো। ওর ফিগার, হাটাচলার ধরন, অভিনয় সব কিছু।

নতুন যারা আসছেন তারা কী কুমিরের শিকার?

নতুনরা আর কি শিকার হবে? ওরা তো খুলেই আসে। আমি দেখলাম না কেউ একজন ঢেকে আসতে চায়। ঢেকে রাখাতো এখন অযোগ্যতার ব্যাপার। এখন যুগ বদলাচ্ছে। আগে আমি চুল লাল করছি ওইটা মানুষের কাছে খারাপ লাগছে। এখনতো ঘরে ঘরে মেয়েরা চুল লাল করে। এখন মেয়েরা শর্ট প্যান্ট পরলে খারাপ ভাবে নেয়না। কিন্তু তখন আমি শর্ট প্যান্ট পরলে মানুষ আমাকে খারাপ বলতো। এখনতো সে যুগ নেই তাই এ প্রশ্নই আসেনা।

যখন ‘অশ্লীল’ নায়িকার আখ্যা পান, তখন কেমন ছিল আপনার অবস্থান?

আমি কখনো শুনিনি। আমার যত ফেসবুক ফ্রেন্ড আছে, যারা আমার ভক্ত তারা কখনোই আমাকে অশ্লীল নায়িকা বলেনি। আমার সহকারী ছেলেটিও আমার অনেক ভক্ত ওরা বলতে পারবে মুনমুন আপা কি অশ্লীল কাজ করেছে? কেউ বলতে পারবেনা মুনমুন আশ্লীল কাজ করছে। আমরা দর্শকদের থেকে সব সময়ই পজেটিভ দিক পাই। নেগেটিভ বলতো কিছু সাংবাদিক আর ফিল্মের কিছু লোক যারা আমার সামনে আমার প্রশংসা করে কিন্তু পেছনে অন্য কথা বলে।তাদের আমি চিনি না।

নায়িকা হওয়ার স্বপ্ন কখন থেকে?

আমার কখনো নায়িকা হওয়ার ইচ্ছে ছিলো না। আমাকে এহতেসাম দাদু ফিল্মে এনেছে। দাদু যে সব নায়িকাকে ফিল্মে এনেছেন তাদের চেয়ে প্রায় পাঁচ ছয় কেজি ওজন বেশি ছিলো আমার। আমি দাদুর সহকারী হতে গেলাম দাদু আমাকে দেখে বললেন তুমি আমার ছবির নায়িকা। আমি বললাম এ স্বাস্থ্য নিয়ে কিভাবে। তিনি বলেন, এটা কোনো সমস্যা না কমিয়ে ফেলো। তুমি পারবা। ওনার একটা নিয়ম ছিলো উনি যাকে দেখে একবার বলছে তুমিও নায়িকা হবা সে কিন্তু শেষ পর্যন্ত নায়িকা হইছে। প্রথম দেখায় উনি আমাকে ওই কথা বলায় আমার ভিতর একটা সাহস চলে আসে। সে কারণে হয়তো নায়িকা হওয়ার স্বপ্ন তখন থেকে।

এখনো কিছু হলে আপনার সিনেমা চলে। আপনি যখন কোনো প্রোগ্রামে যান এ বিষয় নিয়ে কেউ কিছু বলে কি?

এখনো চলে। আমি কোনো জায়গায় গেলে মানুষ আমাকে বলে এখনতো আগের মতো মানুষ হলে যায়না। আমি বলি কেন এখনতো সব উন্নত মানের, ড্রেস ভালো এখন কেন আপনারা যান না। তারা বলে ভালো লাগে না।

মূল কথা কি জানেন? চলচ্চিত্রের জায়গাটা ছোট হতে হতে এতো ছোট হইছে আপনি ইউটিউব খুললেই তো সিনেমা দেখতে পারছেন। সারাদিন ফেসবুকে পড়ে থাকে। আমার কথাই বলি আমি নেটে ঢুকলে যে মজার বিষয়গুলো থাকে ওগুলো দেখার পর আর অন্য দিকে মন বসে না। আমার মতো কি আর ১০ জনের এটা হচ্ছে না।

আইটেম গান নিয়ে কি বলবেন?

বাংলাদেশ চিরকালই কলকাতাকে নকল করে আসছে। আমার মতে, ভারতে এটা হচ্ছে তার প্রভাব আমাদের উপর পড়ছে। তা দেখে দেখে আমাদের দেশের ছবিতে আইটেম গান রাখা হচ্ছে।

আপনার কাছে কি এগুলো রুচি সম্পন্ন মনে হয়?

দেখেন কোনটা রুচি সম্পন্ন আর কোনটা অরুচি সম্পন্ন এটা নিয়ে শুধু আলোচনা করেন তা হলে আমাদের ফিল্মটা মনে হয় বেশিদিন বাঁচবে না। ফিল্মটাকে বাঁচাতে হলে আপনারা এর খারাপ দিকগুলো নিয়ে আলোচনা না করে ভালো দিক নিয়ে আলোচনা করেন। তা না হলে আমাদের ফিল্ম বাঁচবে না। আর ফিল্ম না বাঁচলে আমাদের অনেক শিল্পী না খেয়ে মরবে। কারণ একজন শিল্পীকে কেউ চাকরিতে নিতে চায়না। শিল্পীকে কেউ ব্যবসায় নিতে চায় না

ad

পাঠকের মতামত