175043

মেহেজাবিনের রুপের জালে প্রাণ গেল লাবিবের

গত এক সপ্তাহ ধরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের আলোচিত ঘটনা প্রেমিকা মেহেজাবিন কর্তৃক অপমানের খেসারতে আদমজী ক্যান্টনমেন্ট কলেজের মেধাবী ছাত্র লাবিব (১৭) আত্মহত্যার বিষয়টি। এ বিষয়ে দেশের প্রথম সারির জাতীয় দৈনিক যুগান্তরের অপরাধবিষয়ক পাতা প্রতিমঞ্চের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রহস্যময়ী মেহেজাবিনের প্রেমের ফাঁদে পড়েই প্রাণ গেছে লাবিবের।

মঙ্গলবার প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে মেহেজাবিন নামের রহস্যময়ী এক সুন্দরীর প্রেমের ফাঁদে পা দিয়ে শেষ পর্যন্ত নিজের জীবনের খেসারত দিতে হয়েছে লাবিবকে। লাবিবের পরিবার এবং সহপাঠীদের অভিযোগ, মেহেজাবিন তার রূপ-যৌবন পুঁজি করে প্রতারণা ফাঁদে ফেলে আত্মহত্যায় বাধ্য করেছে লাবিবকে।

জানা গেছে, প্রেমিকা মেহেজাবিনের লোকজনের হাতে পিতামাতাসহ নিজে আহত হওয়ার মানসিক যন্ত্রণা সইতে না পেরে আত্মহত্যা করেন লাবিব। ১২ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার ভোর রাতে মিরপুর ডিওএইচএসের ১২ নম্বর সেকশনের ৭ নম্বর সড়কের ৪০১ নম্বর বাড়িতে অনাকাঙ্ক্ষিত আত্মহত্যার ঘটনাটি ঘটে। এ ঘটনায় বহুরূপী ‘প্রেমিকা’ মেহজাবিনের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছে লাবিবের পরিবার ও তার বন্ধুরা।

লাবিবের বাবা ব্যবসায়ী আনিসুল ইসলাম বলেন, ‘গত রমজান মাস থেকে লাবিব বদলে যেতে শুরু করে। ঘনঘন টাকার জন্য চাপ দেয়। পরে খোঁজ নিয়ে দেখি মেহেজাবিন নামে তার প্রেমিকার জন্য উপহার, দামি পোশাক আর হাত খরচের জন্য লাবিবের এই বাড়তি টাকা চাওয়া। ‘

তিনি বলেন, ‘অবস্থা বেগতিক হলে আমি মেয়েটির মগবাজার টিএ্যান্ডটি কলোনির বাসায় যাই। তার পরিবারের সঙ্গে আলোচনা করে আমার ছেলের কাছ থেকে মেয়েটিকে দূরে থাকতে বলি। এরপরও মেহেজাবিন আমার ছেলের সঙ্গে যোগাযোগ রাখে। হয়তো আমার ছেলেও চাইতো। মেয়েটি মাঝে মাঝেই লাবিবের কাছে টাকা চাইতো। পরে আবারো মেহেজাবিনের সঙ্গে যোগাযোগ করি। এরপর মেহেজাবির সরাসরি কথা বলার জন্য আমার স্ত্রী এবং লাবিককে শান্তিনগরের স্কাইভিউ রেস্টুরেন্টে দেখা করতে বলে। ‘

লাবিবের বাবা বলেন, ‘গত সোমবার সন্ধ্যা ছয়টার দিকে আমরা সেখানে যাই। কিন্তু সামান্য কথাতেই মেহজাবিন চিৎকার-চেঁচামেচি করে ব্যাপক শোরগোল করে। এরপর লাবিবকেও চেনে না বলে চিৎকার করে। ঠিক সে সময় সেখানে আগে থেকেই থাকা মেহজাবিনের অন্তত ২০ জন সহযোগী আমাকে, আমার স্ত্রী, লাবিব এবং সঙ্গে থাকা লাবিবের বন্ধু শিহাবকে ব্যাপক মারধর করে। পরে বাসায় আসার পর রাতভর এ বিষয়ে আলাপ-আলোচনা এবং অশান্তির পর ভোর চারটার দিকে লাবিব তার রুমেই আত্মহত্যা করে। ‘

কে এই মেহেজাবিন: মেহেজাবিন খুঁজতে অনুসন্ধানে উঠে এসেছে ভয়ংকর আর চাঞ্চল্যকর নানারকম তথ্য। মগবাজারের হায়াত মাহমুদ মুনিরের চার মেয়ের মধ্যে সবার ছোট আশা। যে ফেসবুক, হোয়াটস অ্যাপসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যেম মেহেজাবিন নামে পরিচিত। ‘

জানা গেছে, কয়েক বছর আগে মগবাজার নয়াটোলা চেয়ারম্যান গলির মুখে ৫৬৯নং বাড়িতে আশা-তৃষা ভ্যারাইটিজ স্টোর নামে একটি মুদি দোকান চালাত তাদের মা মৃত মাহমুদা মুনির। সেটি দেখভাল এবং নিয়মিত বসতো পিঠাপিঠি বোন আশা-তৃষা এবং তাদের বড় বোন খুশি। অল্প বয়স থেকেই ধনীর দুলালদের সঙ্গে প্রেম শুরুর মাধ্যমে টাকা হাতিয়ে নেয়ার ফাঁদ পাতে আশা। তথ্য আছে, বহু প্রেমিকেতর কাছ থেকে রুপ যৌবনকে পুঁজি করে লুটে লুটে নিয়েছেন বিপুল অর্থকড়ি। অভিযোগ আছে, আশা ওরফে মেহেজাবিনের সর্বশেষ প্রেমিক লাবিবের কাছ থেকে চার লক্ষাধিক টাকা হাতিয়ে নেয়া হয়েছে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, আশার টার্গেটই হচ্ছে ধনীর দুলালদের প্রেমের ফাঁদে ফেলে টাকা হাতিয়ে নেয়া। ব্লাকমেইলিং করা। লাবিবের বড় বোন বলেন, ‘লাবিবকেও ব্লাকমেইলিং করা হচ্ছিল। ‘ তিনি আরো বলেন, ‘লাবিব যেন সবসময় মেহেজাবিনের সঙ্গেই প্রেম করতে বাধ্য থাকে। সে লাবিবের গোপন জায়গায় মেহেজাবিন লেখা একটি স্থায়ী ট্যাটুও করিয়েছে। ‘

বহু প্রেমে বিশ্বাসী আশার একাধিক বয়ফ্রেন্ড থাকার প্রমাণ রয়েছে। একাধিক ছেলের সঙ্গে আপত্তিকর ছবি ও অশ্লীল চ্যাটও যুগান্তরের কাছে সংরক্ষিত রয়েছে বলে পত্রিকাটি জানিয়েছে। সিসি টিভি ফুটেজ দেখে লাবিবের বাবার অভিযোগের বিষয়ে সত্যতা পাওয়া গেছে।

তবে অভিযুক্ত মেহেজাবিনকে মুঠোফোনে একাধিকবার কল দিলে নাম্বারটি বন্ধ পাওয়া যায়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আশা ওরফে মেহেজাবিনের খালা বলেন, ‘উগ্র চলাফেরার কারণে ভাগ্নিদের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক ভালো না। আশার মায়ের মৃত্যুর পর তাদের সঙ্গে আমাদের কোন যোগাযোগ নেই। ‘

এদিকে লাবিবকে আত্মহত্যার প্ররোচনার অভিযোগে গত শুক্রবার পল্লবী থানায় একটি মামলা করেন মৃত লাবিবের পিতা আনিসুল ইসলাম। মামলায় আশা, সাগর, হাফসা মাহমুদ তৃষা ও আকাশসহ অজ্ঞাত কয়েকজনের নাম উল্লেখ করা হয়। লাবিবের পিতা থানায় দায়েরকৃত অভিযোগপত্রেও রিপোর্টে বর্ণিত বিষয়াদি উল্লেখ করেন। পল্লবী থানার ওসি (তদন্ত) মঈনুল কবির জানান, এই ঘটনায় এখনো কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়নি। তদন্ত চলছে।

ad

পাঠকের মতামত