174984

গর্ভবতী মায়েদের কাছে সিজার এখন ফ্যাশন

বাংলাদেশে সিজারের সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে। চিকিৎসা বিজ্ঞানে সিজারের সংখ্যা সর্বোচ্চ ১৫ শতাংশ পর্যন্ত স্বাভাবিক বলে মনে করা হয়। কিন্তু বাংলাদেশে এই সংখ্যা ৩৫ শতাংশ পেরিয়ে গেছে।

স্যার সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজ ও মিটফোর্ড হাসপাতালের স্ত্রী রোগ ও প্রসূতি বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান এবং বর্তমানে ইন্টারন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতালের স্ত্রী রোগ ও প্রসূতি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. নাসিমা বেগমের একটি সাক্ষাৎকার প্রকাশ করেছে ডয়চে ভেলে।

ডয়চে ভেলের সঙ্গে আলাপকালে ডা. নাসিমা বলেছেন, বাংলাদেশে গর্ভবতী মা এবং তাঁদের পরিবারের সদস্যরা কোনো ধরনের ঝুঁকি নিতে চান না। ফলে সবাই সহজেই সিজারের দিকে ঝুঁকে পড়ছেন। এমনকি অনেকক্ষেত্রে সিজার মেয়েদের কাছে ফ্যাশনেও পরিণত হয়েছে।

তিনি বলেন, অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও সিজারিয়ান অপারেশন অনেক বেড়ে গেছে। গত ৩০ বছরে এর ব্যাপক প্রসার হয়েছে। এর অনেকগুলো কারণ আছে। প্রধান কারণ হলো মানুষের সচেতনতা।

আগের চেয়ে রোগী এবং তাঁর স্বজনদের সচেতনতা বৃদ্ধি পেয়েছে। আমাদের দেশে গ্রামে এখনো ১৮ বছরের আগে মেয়েরা গর্ভবতী হয়। এতে করে তাঁর পেলভিস বা যোনি পথের বৃদ্ধি ঠিকমতো হয় না। অল্প বয়সে গর্ভবতী হওয়ার কারণে মেয়েদের মধ্যে ভয় বা ভীতি থেকে যায়। এখন মেয়েরা এসেই বলেন, ‘আমার সিজার কবে করবেন?’ তাঁরা নরমাল ডেলিভারির জন্য প্রস্তুতিই নিতে চান না। মেয়েদের এমন ‘অন ডিমান্ড’ সিজারের প্রবণতা বৃদ্ধি পেয়েছে। যাঁরা লেখাপড়া শিখে ২৫ বছরের পর বিয়ে করছেন, তাঁদের সমস্যা আবার অন্যরকম। অনেক সময় তাঁদের প্রসবজনিত জটিলতা বৃদ্ধি পায়। কিছু কিছু ক্ষেত্রে উচ্চ রক্তচাপ বা ডায়াবেটিসও ধরা পড়ে তাঁদের। বাচ্চারও অনেক সময় জটিলতা দেখা দেয়।

সিজারের উপকার ও ক্ষতির বিষয়ে ডা. নাসিমা বলেন, ক্ষতিকর দিক হলো, স্বাভাবিক জন্মদানের ক্ষমতা কমে যাওয়া। এখন মেয়েরা অনেক সময় অধৈর্য্য হয়ে যান। তাঁরা স্বাভাবিক জন্মদানের প্রস্তুতি নিতে চান না। এরাই ‘অন ডিমান্ড’ দাবি করে বসেন যে, সিজার করে দিন। তখন ডাক্তারকে বাধ্য হয়ে সেদিকে যেতে হয়। সিজারের একটা জটিলতা তো আছেই। অনেকের ইনফেকশন হতে পারে, রক্তপাতও হতে পারে। তাছাড়া বাচ্চার জটিলতা বেড়ে যেতে পারে। শ্বাস-প্রশ্বাসের জটিলতা বা নিউমোনিয়া হতে পারে। অজ্ঞান করার জটিলতাও বেড়ে যেতে পারে। আসলে একটা ‘রিস্ক’ নিয়েই সিজার করতে হয়।

ক্ষতির দিক বেশি তারপরও ডাক্তাররা কেন সিজার করান প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আসলে আমাদের সচেতনতা বৃদ্ধি, অল্প বয়সে বিয়ে বা বেশি বয়সে বিয়ে এর প্রধান কারণ। আগে তো মেয়েরা গর্ভকালীন চেকআপে আসতেন না। এখন ৭০ ভাগ নারী গর্ভকালীন চেকআপে আসেন। ফলে সমস্যাগুলো আগেই ধরা পড়ে এবং সিজারের ‘ইন্ডিকেশন’ তৈরি হয়। এটাও একটা কারণ। তাছাড়া মেয়েরা ইচ্ছে করেই সিজার করাচ্ছেন। আর একবার সিজার হলে বারবার সিজার করতে হয়।

সিজারের পরে মায়ের কী ধরনের সমস্যা হতে পারে? এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, অধিকাংশ ক্ষেত্রে একবার সিজার করলে মায়ের প্রতিবারই সিজার করাতে হয়। আমরা তিনবারের বেশি সিজার করি না। কোনো কোনো ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ চারবার সিজার করি আমরা। এখানে মায়ের জরায়ুর ইনফেকশন হতে পারে। পেটের মধ্যে নানা ধরনের জটিলতা হয়ে পরবর্তীতে মাসিকের সমস্যাও হতে পারে।

সিজারের ফলে সন্তানের উপকার হয় না ক্ষতি হয় প্রসঙ্গে তিনি বলেন, মায়ের স্বাস্থ্যের কথা চিন্তা করে বা সন্তারের সুবিধার জন্য যখন সিজারের দরকার হয়, তখন সিজার করতেই হবে। অর্থাৎ সেটাই ভালো। কিন্তু যখন ইচ্ছে করে সিজার করানো হয় বা ডাক্তাররা করতে বলছেন বলে করানো হয়, তখন সেটাকে খারাপ বলতে হবে।

সিজারের প্রতি গর্ভবতী মায়ের আগ্রহ কমা না বাড়া উচিত? এমন প্রশ্নের উত্তরে ডা. নাসিমা বলেন, আগ্রহটা কোনোভাবেই বাড়া উচিত না। সিজারটা এখন অনেকটা নেশার মতো বা গর্বের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। যদি নর্মাল হওয়ার সুযোগ থাকে, তাহলে সেটাই করা উচিত।

ad

পাঠকের মতামত