গাছের তলায় ‘এক রাতের বাসর ঘর’ নিয়ে অপেক্ষায় রুপা
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের গুলিস্তান পার্ক। বেলা তখন ১০টা। পার্কটির ভেতর তখন চলছে ভবঘুরে ও ছিন্নমূল মানুষের সকালের নাস্তা।
ভেতরে ঢুকে দেখা গেল, পার্কের ভেতরের বেঞ্চগুলোতে লোকজন শুয়ে আছে। কেউ কেউ আবার সিগারেটে ফুঁক মারছে। রান্না, ধোয়ামোছা থেকে শুরু করে সংসারের সব কাজই চলছে এখানে। চারদিকে রয়েছে ময়লা-আবর্জনার ভাগাড়, আছে মলমূত্রের দুর্গন্ধ।
একটু ভেতরে গেলেই জটলা বেঁধে বসে মাদক সেবনের দৃশ্য। প্রকাশ্যেই চলছে মাদক কেনাবেচা। এছাড়া অনেককেই মাতাল অবস্থায় উদ্যানের ভিতরে চলাচলের রাস্তায় শুয়ে বা ঘুমিয়ে থাকতে দেখা গেল। ভবঘুরে ও ছিন্নমূল মানুষের নিরাপদ স্থানে পরিণত হয়েছে পার্কটি।
কিছু দূর যাওয়ার পর দেখা মিলল কয়েকজন মহিলাকে। জটলা বাধিয়ে গল্প করছেন তারা। কিছুটা সামনে যাওয়ার পর কথা হলো একজন হকারের সাথে।
তার নাম ইউসুফ মিয়া। বাড়ি রংপুর। থাকেন জুরাইন রেলগেট বস্তিতে। গুলিস্তানে হকারি করছেন ৭ বছর যাবৎ।
তার সাথে কথা হলো ওই মহিলা গুলোর ব্যাপারে। সে প্রতিবেদককে সাবধান করে বলল, ভাই তাদের কাছে যাইয়েন না। তারা ভালো না।
এ কথা বলে সে খারাপ একটা শব্দ উচ্চারন করলো। যার অর্থে বোঝা গেল মহিলা গুলোই হচ্ছে রাজধানীর ভাসমান নিশিকন্যা।
সে আরো জানায়, এরা রাত হলেই নেমে যায় দেহব্যবসায়। এদের স্পট ভাগ করা থাকে। কেউ কেউ আশেপাশেই ব্যাবসা করে আবার কেউ কেউ শাহবাগসহ অন্যান্য স্পটে চলে যায়।
তিনি আরো অভিযোগ করে বলেন, একটি প্রভাবশালী মহলের ছত্রচ্ছায়ায় এসব কর্মকাণ্ড হচ্ছে।
অনেকক্ষণ চেষ্টার পর হকারকে দিয়ে ব্যবস্থা করিয়ে এক নিশিকন্যার সাথে কথা বলার সুযোগ মেলে প্রতিবেদকের।
নাম তার রুপা। এটা তার আসল নাম না। এটা ছদ্মনাম।
প্রশ্ন করলাম কোথায় থাকেন। জবাবে বলল থাকি আশে পাশেই। প্রথমে কথা বলতে না চাইলেও রুপা শোনাল ওর গল্প।
তার আসল নাম খাদিজা বেগম। দেহ ব্যবসার কাজে নেমেছে ১৫ বছর বয়সে। গ্রামের বাড়ি ময়মনসিংহে। ১২ বছর বয়সে বিয়ে হয় তার। বিয়ের এক বছরের মাথায় তার স্বামী তাকে নির্যাতন শুরু করে। এরপর বিয়ের তিন বছরের মাথায় স্বামী তাকে দেহ ব্যবসার কজে নামতে বাধ্য করে। স্বামী এখন তার সাথে থাকে না। দ্বিতীয় বিয়ে করে এখন সেই স্ত্রীর সাথে থাকেন।
শাহবাগ এলাকায় তার স্পট। সেখানেই গাছের তলায় খদ্দেরের অপেক্ষায় বসে থাকেন সে সহ আরো কিছু ভ্রাম্যমান পতিতা। তার পেছনেই কাপড় দিয়ে বানানো এক রাতের বাসর ঘর।
দু’টি গাছে আড়াআড়ি করে কাপড় বেঁধেই ঘর বানায় তারা। রাস্তাজুড়েই কয়েক হাত পরপর অমন ঘর চোখে পড়ে। ও ঘরেই খদ্দেরকে আনন্দ দেয় রুপাসহ অন্যান্য পতিতারা।
প্রশ্ন করা হল আপনার সন্তান সন্ততি কয়টা? উনি বললেন, আমার এক মেয়ে। কোথায় থাকে সে জানতে চাইলে বলেন, আমার সাথেই থাকে। পড়াশোনা করে। মেয়েটারে মাদ্রাসায় দিছি। ক্লাস ফাইভে পড়ে। দোয়া কইরেন।
কেন করেন এসব কাজ, জানতে চাইলে সিগারেটে ফুঁক দিয়ে দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছেড়ে বলে, পেটের জ্বালায় করি এসব। আমাদের কেউ চাকরি দেয় না। অন্য কোনো উপায় না থাকায় এই পথ বাছে নিয়েছি। মেয়েটারে মানুষের মত মানুষ বানাবো, তাই করি এত কষ্ট।
ওড়নায় চোখ মুছতে মুছতে বলেন, ‘ওরে গর্ভে নিয়ে পাচঁ মাস রাস্তায় এই কাজ করেছি। ওর ভালোর জন্যই করি এই কাজ। পেটের দায়েই আমাকে এটি করতে হয়। কারণ বাচ্চা আছে। আমার না হয় বেঁচে থাকার তাগিদ নেই, ভবিষ্যৎ নেই। কিন্তু ওরতো আছে। তাই আমার সবকিছু করতে হবে।
এসব কথা বলেই দূরে চলে গেল রুপা। একা বসে আছেন নিস্তব্ধ মুর্তির মত। হয়ত একা বসে বসে কাদঁছেন। কে জানে কবে তার এই কষ্টের শেষ হবে।
সূত্র:বিডি২৪লাইভ