174075

শাবনূর যা করছিলো সেটা মেনে নেওয়া যায় না : সামিরা

মাত্র ২৭টি চলচ্চিত্রে অভিনয় করে খ্যাতির শিখরে পৌঁছে গিয়েছিলেন সালমান শাহ। বৃহস্পতির তুঙ্গে থাকা অবস্থায় ১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর রহস্যজনকভাবে মৃত্যুবরণ করেন তিনি। সালমান শাহর পরিবার দাবি করছেন তাকে হত্যা করা হয়েছে। তাদের সন্দেহের আঙুল সালমান পত্নী সামিরার দিকে। আর সামিরা বলছেন, সালমান আত্মহত্যাই করেছেন। এই রহস্যের জট আজো খোলেনি। তবে সাধারণ মানুষের কাছে সামিরাই ভিলেন। গত ২০ বছরে সামিরা এ বিষয়ে কোন কথাই বলেনি। তবে সম্প্রতি তিনি বিভিন্ন গণমাধ্যমে বলেছেন সালমান বিষয়ে। আজ সালমান শাহর ২১তম প্রয়ান দিবস। এই দিনে সামিরা বলেছেন সালমান-শাবনূর বিষয়ে কিছু কথা।

২৭ সিনেমার মধ্যে শাবনূরের সঙ্গেই ইমন (সালমান শাহ) কাজ করেছে ১৪টিতে। তখন সালমান-শাবনূরকে নিয়ে পত্রপত্রিকায় বিভিন্ন খবর প্রকাশিত হয়। বিষয়গুলো আমি মেনে নিতে পারিনি। এ নিয়ে আমাদের মধ্যে প্রায়ই ঝগড়া হতো। এক পর্যায়ে আমি রাগ করে চট্টগ্রাম বাবার বাসায় চলে যাই। আড়াই মাস পর ইমন আমাকে আনতে যায়। তখন আমি বলেছিলাম, শাবনূরের সঙ্গে সিনেমা করলে আমি তোমার সঙ্গে যাব না। তোমার সঙ্গে থাকব না। হয় তুমি আমাকে ডির্ভোস দিয়ে দাও, না হয় শাবনূরের সঙ্গে সিনেমা করা বাদ দাও। ইমন বলেছিল, আমি তোমাকে ছাড়া থকবো না। তুমি আমার সঙ্গে চলো। আমি শাবনূরের সঙ্গে আর কোনো সিনেমা করব না। যেসব সিনেমার টাকা নিয়েছি সেগুলোর কাজ শেষ করে, নতুন কোনো সিনেমায় তার সঙ্গে জুটি হয়ে কাজ করব না। আর শাবনূরের সঙ্গে কাজ করার সময় তুমি আমার সঙ্গে থাকবে।

এই কথা শুনেই আমি ইমনের সঙ্গে ঢাকা চলে আসি। ঢাকায় আসার দুদিন পরে (৫ সেপ্টেম্বর) বিকালে ইমনের সঙ্গে এফডিসিতে ডাবিং দেখতে যাই। ইমন তখন রেজা হাসমতের ‘প্রেম পিয়াসী’র ডাবিং করছিল। এই সিনেমায়ও তার বিপরীতে ছিল শাবনূর। ডাবিংয়ের মধ্যেই শাবনূর বার বার ইমনের সঙ্গে কানে কানে কথা বলার চেষ্টা করছিল। সে ইমনকে চুমু খাচ্ছিল, জড়িয়ে ধরছিল। এগুলো দেখে আমার ভালো লাগেনি। আর এক মুহূর্তও সেখানে থাকি নি। ইমন বিষয়টা খেয়াল করছিলো। সে যখন দেখল আমি উঠে গেলাম, তখন বুঝতে পেরেছিল আমি রাগ করেছি। সে আমার পেছন পেছন আসছিল আর বলছিল, কী হয়েছে? কী হয়েছে? আমি অন্য কিছু না বলে ‘বাসায় যাব’ বলে গাড়িতে উঠে বসলাম। ইমন তখন রেজা ভাইকে বলল, আমার শরীর খারাপ লাগছে। ডাবিং প্যাকআপ করেন। তখন ডাবিং প্যাকআপ হয়ে গেল। ইমন শাবনূরের কাছ থেকে বিদায় না নিয়েই আমাদের সঙ্গে দ্রুত গাড়িতে উঠল। আমি কোনো কারণে ভীষণ রেগে গিয়েছি বুঝতে পেরে ইমন পরিচালক বাদল ভাইকেও সঙ্গে নিয়ে গাড়িতে উঠল। গাড়িতে আমি বাঁ দিকে বসে জালানা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে ছিলাম। ইমন বার বার বলছিল, বাদল ভাই আমার বউটা রাগ করে ফেলল! বাদল ভাই সান্ত্বনা দিচ্ছিল, আরে না ঠিক হয়ে যাবে। আমাদের লক্ষ্মী ভাবী।

ইমন আমাকে স্বাভাবিক করার চেষ্টা করছিল। বাসায় এসে ইমন বলল, খাবার দাও। আমি দিলাম। কিন্তু আমি খাচ্ছিলাম না। ইমন রাতে আমার হাতে খেত। সে খুব আহ্লাদি ছিল। বাদল ভাই তখন বলল, আমি কি একা খাব? তোমরা কেউ খাচ্ছ না! ইমন বলল, আমার বউ তো আমাকে খাইয়ে দিচ্ছে না। আমি কীভাবে খাব? বাদল ভাই তাকে আবার সান্ত্বনা দিয়ে বলল, আজ ভাবীর মনটা ভালো নেই, তাই হয়ত খাইয়ে দিচ্ছে না। ইমন বলল, না, আমি আর তাহলে খাবোই না। যেহেতু খাবে না তাই বাধ্য হয়ে আমি প্লেটটা হাতে তুলে নিলাম। তারপর একবার ওকে খাওয়াতে লাগলাম আর নিজেও খেতে শুরু করলাম। এভাবেই সেদিন আমরা রাতের খাবার শেষ করি।

প্রথমে আমরা বেড রুমে বসেছিলাম। ইমনের ঘাড়ে ব্যথা ছিল তাই শুয়ে শুয়ে কথা বলছিল। আর বাদল ভাই চেয়ারে বসে ছিলেন। সে সময় পপির সঙ্গে যে কাজটা হবে সেটা নিয়ে কথা হচ্ছিল। বাদল ভাই যাওয়ার সময় একটা কথা আমাকে বলে গিয়েছিল- ভাবী, এ নিয়ে আর কিছু বলবেন না। ইমন শাবনূরের সঙ্গে আর ছবিই করবে না।

এরপর আমরা ওয়াশরুমে গিয়ে ফ্রেশ হলাম। এর মধ্যে ইমনের মোবাইল ফোন বেজে উঠল। ফোনটা কেটে দিল ইমন। আবার সেকেন্ড টাইম ফোন এলো। তখন লাফ দিয়ে উঠে সে ফোন নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেল। আমি তখন ফোনের ওপাশ থেকে একটা মেয়ের কণ্ঠ শুনেছিলাম। মেয়েটা বলছিল- এভাবে কেন আমাকে না বলে চলে গেলে? ইমন বিষয়টি নিয়ে উচ্চস্বরে কথা বলছিল। আমি রুমে বসেও তখন শুনতে পাচ্ছিলাম।

বিষয়টি আমার খুব খারাপ লেগেছিল। দুদিন হলো বাবার বাসা থেকে এসেছি। এর মধ্যেই আবার এভাবে ফোন! ডাবিংয়ে গেলাম সেখানেও নিজের চোখে দেখলাম, শাবনূর এক ফোটাও চেঞ্জ হয়নি। বিষয়টি মেনে নিতে না পেরে আমি একদম এগারো তলা থেকে সোজা নিচে চলে এলাম। সিদ্ধান্ত নিলাম, আর না। বনানী ফুফুর বাসায় চলে যাব। দারোয়ানকে বললাম, ট্যাক্সি ডেকে দিতে। এর মধ্যে ইমন বাথরুম থেকে বের হয়ে রুমে আমায় না দেখে নিচে চলে এসেছে। সে তখন চিৎকার করে বলতে থাকে- তোমরা যদি তোমার ভাবীকে ট্যাক্সি ডেকে দাও তাহলে গুলি করে উড়িয়ে দেব। ফলে ওরা ট্যাক্সি ডেকে দিলো না। আমিও আর পা বাড়ালাম না। আমি উপরে উঠে এলাম। ইমন রাতেই মোবাইলটা ভেঙে ফেলল।
খবর : রাইজিংবিডি.কম

সংসারে অশান্তির জন্য শাবনূরকেই দায়ী করছেন সামিরা। ছবিতে সালমান-শাবনূরের সঙ্গে ছিলেন সোনিয়া, তার মাথায় বসানো হয়েছে সামিরার ছবি [এডিট]

ad

পাঠকের মতামত