174003

খোলামেলা ছবি দিয়ে নারীদের…

প্রতীকী ছবি ই-মেইল ওপেন করতেই চমকে উঠেন তিনি। একদম খোলামেলা ছবি। তাও তার নিজের ছবি। না, ফেইক না। প্রকৃত ছবিই। অচেনা একটি ই-মেইল থেকে সেন্ট করা হয়েছে তাকে। নিজের এমন ছবি দেখে থ হয়ে যান। শরীর কাঁপছিল। তার নতুন সংসার। কারা করছে এটি। তাদের উদ্দেশ্যটা কি। ছবিটা ভাইরাল করে সমাজে তাকে হেয়প্রতিপন্ন করতে চায়? নতুন সংসার ভাঙতে চায়?

কি করবেন ভেবে পাচ্ছিলেন না। বিয়ে হয়েছে সবেমাত্র বছর কেটেছে। ছবিগুলো যদি তার স্বামী-স্বজনদের কাছে এভাবে সেন্ট করা হয়। কি ভাববে সবাই! তার কথা ক’জন বিশ্বাস করবে। ক’জনকে ব্যাখ্যা দেবেন তিনি। ছবি যেই সেন্ট করুক ওই নারীর বুঝতে বাকি নেই ছবিটির উৎস কোথায়। ভুক্তভোগী ওই নারীর অভিযোগের প্রেক্ষিতেই ভয়ঙ্কর এই চক্রের সন্ধান পেয়েছে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। তাদের মধ্যে হাসিবুল হাসান সেতু ও সুব্রত কুমার পাল নামে দুই যুবককে গ্রেপ্তার করেছে ডিবি।

নারীদের খোলামেলা ছবি, ভিডিও সংগ্রহ করা তাদের কাজ। তারপর এই ছবি দিয়েই শুরু হয় বাণিজ্য। প্রথমে সংশ্লিষ্ট নারী ও তার স্বজনদের কাছে চাঁদা দাবি। চাঁদা না দিলে তা ভাইরাল করে দেয়ার হুমকি। এখানেই শেষ না। দাবিকৃত চাঁদা না পেলে ওই ছবি বা ভিডিও বিক্রি করে দেয়া হয় পর্নো সাইটে। এরকম অনেক নারীকে জিম্মি করেছে এই চক্রের সদস্যরা। ডিবি পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, অসৎ উদ্দেশ্যে নিজের প্রাক্তন স্ত্রীর খোলামেলা ছবি সংগ্রহ করেছিলেন হাসিবুল হাসান সেতু। সেই ছবি দিয়ে বাণিজ্য করতে গিয়েই ফেঁসে গেছে সেতু ও তার বন্ধু সুব্রত। তানভীর খান জুয়েলসহ চক্রের অন্যান্য সদস্যদের গ্রেপ্তার করতে অভিযান চালাচ্ছে ডিবি।

গ্রেপ্তারকৃত সেতুর প্রাক্তন স্ত্রী প্রথম শ্রেণির একজন সরকারি কর্মকর্তা। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়ার সময় সহপাঠী সেতুর সঙ্গে গড়ে উঠেছিলো ভালোবাসার সম্পর্ক। ওই সম্পর্কের পরিণতি হিসেবেই ২০১০ সালে পরিবারের অজান্তেই বিয়ের বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিলেন তারা। রাজশাহীতে বাসা নিয়ে স্বামী-স্ত্রী হিসেবে বসবাস করতেন। ওই সময়ে ঘুমন্ত অবস্থায় স্ত্রীর কিছু খোলামেলা ছবি নিজের ক্যামেরায় ধারণ করেন সেতু। পরবর্তীতে বিষয়টি জানার পর স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে কলহ সৃষ্টি হয়। বিষয়টি জানাজানি হয় দুই পরিবারের মধ্যে। ওই নারী জানিয়েছেন, একপর্যায়ে ছবিগুলো রিমোভ করেছে বলে জানায় সেতু। ছবি ছাড়াও নানা কারণে সেতুর সঙ্গে দুরত্ব সৃষ্টি হলে ২০১৪ সালে দুজনের সম্মতিতেই ডিভোর্স হয় তাদের। ততদিনে নন ক্যাডার হিসেবে একটি মন্ত্রণালয়ে চাকরিতে যোগ দেন ওই নারী। ২০১৫ সালে নতুন করে সংসার গড়েন তার এক সহকর্মীর সঙ্গে। নতুন সংসারে এক বছর পেরুতেই ঘটতে থাকে ঘটনাগুলো। ওই নারীর দ্বিতীয় স্বামীর ফেসবুকের ম্যাসেঞ্জারে আপত্তিকর নানা কথা লিখে বার্তা পাঠান হাসিবুল হাসান সেতু।

গত ২৪শে আগস্ট ওই নারীর মেইলে একটি অচেনা ই-মেইল থেকে তার নিজের কিছু খোলামেলা ছবি পাঠানো হয়। ওই ই-মেইলের সূত্রধরে জানা গেছে, তা তানভির খান জুয়েল নামে এক যুবকের ই-মেইল। শুধু তাই না। ছবিগুলো পাঠিয়ে ৩ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করা হয়। চাঁদা না দিলে ছবিগুলো ওই নারীর স্বামী ও তার সহকর্মীদের কাছে পাঠানোর হুমকি দেয়া হয়। বুঝতে বাকি নেই- এই ছবিগুলো ওই নারীর প্রাক্তন স্বামী সেতুর ধারণকৃত। ভুক্তভোগী নারীর অভিযোগের প্রেক্ষিতে গত ২৮শে আগস্ট রাজধানীর বেইলি রোডের কেএফসির সামনে থেকে গ্রেপ্তার করা হয় সেতুকে। পরে তথ্য-প্রযুক্তি ব্যবহার করে অবস্থান নিশ্চিত হয়ে মানিকগঞ্জ থেকে গ্রেপ্তার করা হয় সুব্রতকে। গ্রেপ্তারকৃত সুব্রত’র ল্যাপটপ থেকে আরো ছয় নারীর ছবি ও ভিডিও জব্দ করা হয়েছে। এরমধ্যে একটি ভিডিওতে এক নারীর সঙ্গে অন্তরঙ্গ মুহূর্তে সুব্রতকে দেখা গেছে। জিজ্ঞাসাবাদে সেতু জানিয়েছে, তার প্রাক্তন স্ত্রীর ছবিগুলো রিমোভ না করে সুব্রতকে সংরক্ষণ করতে দিয়েছিলো সেতু। পরে সুব্রত ও তার বন্ধু তানভির খান জুয়েল এই ছবি দিয়ে বাণিজ্য করতে গিয়ে শেষ পর্যন্ত ফেঁসে যায়। প্রাপ্ত অন্যান্য নারীর ছবি ও ভিডিও অনুসারে তদন্ত সংশ্লিষ্টরা ধারণা করছেন, আরো অনেক নারীকে জিম্মি করে অর্থ আদায় করেছে এই চক্র। ইতিমধ্যে তদন্ত করে দেখা গেছে, খোলামেলা ছবিগুলো একটি পর্নো সাইটে বিক্রির চেষ্টা করছিলো তারা।

গ্রেপ্তারকৃত হাসিবুল হাসান সেতুর বাড়ি মাগুরা জেলার মোহাম্মদপুর থানার খালিয়া গ্রামে। সে একটি সরকারি ব্যাংকের শাখা ব্যবস্থাপক। গ্রেপ্তারকৃত সুব্রত কুমার পাল একটি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার কর্মকর্তা। তার বাড়ি পাবনার ঈশ্বরদীর আরামবাড়ীয়াপূ্‌র্বপাড়া। তাদের বন্ধু পলাতক তানভির খান জুয়েল মূলত বেকার যুবক। তার বাড়ি মানিকগঞ্জের নবগ্রামের বৈকণ্ঠপুরে। এ বিষয়ে তথ্য প্রযুক্তি আইনে রমনা মডেল থানায় মামলা করেছেন ভুক্তভোগী নারী। এ ব্যাপারে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের সিনিয়র সহকারী কমিশনার গোলাম সাকলায়েন মানবজমিনকে বলেন, তদন্তে অভিযোগের প্রমাণ পাওয়া গেছে। সেতু নিজেই সুব্রতকে তার প্রাক্তন স্ত্রীর ছবি পাঠিয়েছিল। সুব্রত কুমার পাল ও তানভির খান জুয়েলের বিরুদ্ধে আরো অনেক অভিযোগ রয়েছে। তাদের কাছ থেকে খোলামেলা আরো ছবি জব্দ করা হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে খোলামেলা ছবি দিয়ে তারা অনৈতিকভাবে বাণিজ্য করে। পলাতক তানভির খান জুয়েলকে গ্রেপ্তার করতে তৎপরতা চালানো হচ্ছে বলে জানান তিনি। উৎস : মানবজমিন।

ad

পাঠকের মতামত