173742

প্রতি রাতেই কুমারী রত্না’র ঘরে আসত মমিনুর

প্রতি রাতেই কুমারী – মা বাবাহীন বুদ্ধি প্রতিবন্ধি শান্তা খাতুন রত্না (২২) এক ছায়লা টিনের একটি খুপড়ি ঘরে একাই বসবাস করে আসছে।

দিনের বেলা প্রতিবেশীদের বাড়িতে ঝিয়ের কাজ করে দু’বেলা দু’মুঠো ভাতের সন্ধ্যান হলেই যেন বিশ্বজয় করার আনন্দ ফুটে উঠে মুখায়বে।

রত্না লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার দক্ষিণ বালাপাড়া ব্রমত্তর গ্রামের মৃত মাহাতাব উদ্দিনের মেয়ে। জন্ম থেকেই বুদ্ধি প্রতিবন্ধি।

বাবা মায়ের মৃত্যুর পর জ্যাঠা সাবেক ইউপি সচিব আফতাব উদ্দিনের উঠানের এক কর্ণারে স্থানীয়দের সহযোগিতায় এক ছায়লা খুপড়ি ঘরেই বসবাস করত। শিশু, কৈশোর পাড়িয়ে যৌবনে পা রাখলেও সেদিকে খেয়াল ছিল না কারই।

হঠাৎ তার শরীরে পরিবর্তন দেখে কানা ঘোষা শুরু হয় পাড়া জুড়ে। প্রশ্ন উঠে কে করেছে তার এ সর্বনাশ। কোন উত্তর মেলাতে পারে নি প্রতিবেশীরা। অবশেষে বৈঠক বসে স্থানীয়দের আয়োজনে।

বৈঠকে রত্না জানায় জানান, তার ঘরে প্রতি রাতে আসত প্রতিবেশী দবিয়ার রহমান মঞ্জু’র ছেলে দুই সন্তানের জনক মমিনুর রহমান (২৯)।

তাকে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে প্রতি রাতেই তার ঘরে আসত মমিনুর। বৈঠকে মমিনুরকে ডাকা হলে তিনি বাড়ি ছেলে পালিয়ে যান চট্রগ্রামে। শেষে বৈঠকে আগতরা আর্থিক সহায়তা দিয়ে রত্নার দায়িত্ব নেন।

বৃহস্পতিবার বিকেলে হঠাৎ পেটের ব্যাথায় ছটফট করতে থাকে প্রতিবন্ধি রত্না। স্থানীয়রা তাকে নিয়ে আসেন আদিতমারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। ভর্তি রেজিষ্টারে স্বামীর নাম লিখা নিয়ে বিতর্ক বাঁধলেও স্থানীয় সংবাদকর্মীদের সহায়তায় বাবার পরিচয়ে ভর্তি করানো হয় তাকে।

সেখানে রাতে একটি ফুটফুটে ছেলে সস্তান প্রসব করেন রত্না। সস্তান প্রসব করেই রত্না তার সস্তানকে আগলে রাখছেন। সস্তান আঘাত পাবে ভয়ে বিছানায় শুয়ে থাকতেও চায় না। দাড়িয়ে দাড়িয়ে সস্তানেকে পাহাড়া দিচ্ছে।

অপরিচিত কাউকে সস্তানের পাশে চাপতেও দিচ্ছেন তিনি। তার দৃষ্টির আড়াল করতে পারছেন না কেউ। শত চেষ্টা করেও তাকে বাথরুমেও নিতে পারেন নি হাসপাতালের দায়িত্বরতরা। অবশেষে তার সস্তানকে সাথে নিয়েই বাথরুমে নেয়া হয় তাকে। তার মাতৃত্ব বোধ নিয়ে খোদ নার্স ও চিকিৎসকরাও হতভম্ব।

চিকিৎসকরা জানান, গাইনী ওয়ার্ডে মা ছেলে দু’জনে সুস্থ রয়েছেন। তবে নবজাতকের সুস্থতার জন্য রত্নাকে যত্ন ও পুষ্টিকর খাবার দেয়া দরকার।

টাকার অভাবে কতটুকু পুরন হবে রতœার পুষ্টিকর খাবার। কে যত্ন নিবে রত্না ও তার সস্তানের। স্থানীয়দের দেয়া বাসা বাড়ির পুরাতন জামা কাপড় দিয়েই সস্তানের ও তার শরীর আবৃত করার চেষ্টা করছেন রত্না।

যত্ন নেয়া যতটা প্রয়োজন ততটাই প্রয়োজন রত্নার সস্তানের পিতৃপরিচয় নেয়া। স্থানীয় সংবাদকর্মীদের কাছে শুনে রাতেই হাসপাতালে আসেন আদিতমারী থানা ওসি হরেশ্বর রায়।

রত্নার কাছে বিস্তারিত শুনেই তার জ্যাঠাত ভাই আনোয়ারুলের স্ত্রী আর্জিনা বেগমকে বাদি করে মমিনুরের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করেন ওসি হরেশ্বর রায়।

আদিতমারী হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. গোলাম আম্বিয়া আদিল জানান, বুদ্ধি প্রতিবন্ধি হলেও তার মাতৃত্ব বোধ অনেক প্রখর।

পুরো হাসপাতাল হতভম্ব হয়ে পড়েছি তার মাতৃত্বে। তার যত্ন ও পরিচর্যার জন্য সবারই সহায়তার হাত বাড়ানো উচিৎ বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

মামলাটির তদন্ত চলছে জানিয়ে আদিতমারী থানার ওসি হরেশ্বর রায় বলেন, এ ঘটনায় অভিযুক্ত কাউকে ছাড় দেয়া হবে না। মমিনুরকে গ্রেফতার করতে পুলিশী অভিযান অব্যহত রয়েছে।

ad

পাঠকের মতামত