173724

শামীম ডাক নাম, আসল নাম মোশাররফ তাহলে করিম আসলো কি করে?

বেশির ভাগ মানুষ ছোটবেলায় ঢাকা থেকে গ্রামে যেত ঈদ করতে। কিন্তু আমার বেলায় ঘটেছে উল্টো ঘটনা। ছোটবেলায় বেশির ভাগ সময় গ্রামের বাড়ি থেকে ঈদ করতে ঢাকায় আসতাম। ১৯৮০ থেকে ৮৬ সাল অবধি এমনটা চলেছে। আমার কৈশোরের ঈদ উপভোগের ওটাই ছিল সেরা সময়। তাই বলা যায়, ঢাকার ঈদের স্মৃতিগুলো বেশি মনে আছে আমার। আর ঢাকায় ঈদ করতে আসার কারণ হলো, বাবা ও বড় ভাইয়েরা এখানে থাকতেন। তাঁদের সঙ্গে ঈদ করতে বাড়ির সবাই মিলে ঢাকায় আসতাম। ঢাকায় ঈদ করার মজা ছিল, হঠাৎ করে স্বাধীনতা পেয়ে যেতাম আমি। তখন একটা রিকশা ভাড়া করে সারা শহর ঘুরতে পারতাম। যা খুশি তা-ই করতে পারতাম।

কিশোর বয়সের আগে-পরে গ্রামের বাড়িতে ঈদ করেছি। গ্রামে ঈদের যদি কোনো স্মৃতি আমার কাছে জানতে চান তবে বলব ঈদের দিন ভোরবেলা আড়িয়াল খাঁ নদে গোসলের কথা। এটা অবশ্য শুধু ঈদের দিন না, যেকোনো সময় আমি গ্রামে গেলেই ভোরে আড়িয়াল খাঁ নদে গোসল করি।
গ্রামের স্মৃতি নিয়ে একটু বলি তাহলে। আমার জন্ম ঢাকায়। জন্মের কয়েক বছর পর ঢাকা থেকে গ্রামের বাড়ি বরিশালের গৌরনদী থানার বোরাদী গরঙ্গলে চলে যাই। গ্রামের পাশেই পিংলাকাঠি স্কুল ও বাজার। পিংলাকাঠি স্কুলে পড়েছি আমি। যেটা বলছিলাম, ওই বয়সে গ্রামে গিয়ে হঠাৎ করে মানিয়ে নিতে আমার বেশ সমস্যা হয়। কিছুই ভালো লাগত না। পরে বুঝেছি, শহরের চেয়ে গ্রামের সবকিছু একটু ধীরগতিতে চলে। তবে আমি বছরখানেকের মধ্যে মানিয়ে নিয়েছিলাম। এবং মানিয়ে নেওয়ার পর আমার দারুণ সময় কেটেছে। আমার কাছে মনে হয়, যেকোনো মানুষ বিশেষ করে শিশুদের একটানা ৫-৬ বছর গ্রামে থাকা উচিত। কারণ, গ্রামে একজন মানুষ যা দেখে সেটা খাঁটি। যেমন অমাবস্যা, পূর্ণিমা, জোছনা, বৃষ্টি, চৈত্র মাস সব খাঁটি দেখে। খাঁটি রোদ, বাতাস ও ঝড় পায়।

প্রকৃতির যে রূপ, ষড়ঋতুর যে সৌন্দর্য, সেটা গ্রামে না থাকলে এবং টান না থাকলে বোঝা ও উপভোগ করা যাবে না। এদিক থেকে আমি সৌভাগ্যবান যে আমি টানা কয়েক বছর গ্রামে থেকেছি। তা-ও আবার একদম কিশোর বয়সে। গ্রামে আমাকে সবাই ডাকত শামীম বলে। আমাদের বংশ খলিফা। মোশাররফ আমার ভালো নাম। অভিনয় করতে এসে মনে হলো, আমার নামের সঙ্গে বাবার নামটা থাকা দরকার। তাই বাবার করিম নামটা আমার নামের সঙ্গে যুক্ত করে ‘মোশাররফ করিম’ হয়ে গেলাম।

গ্রামে ঈদ করার চেয়ে গ্রামের জীবনযাপন আমার বেশি মনে পড়ে। এই যেমন, কুয়াশামাখা ভোরে বেরিয়ে পড়া। যখন-তখন আড়িয়াল খাঁ নদে ঝাঁপিয়ে পড়া। বন্ধুদের সঙ্গে এ গ্রাম থেকে আরেক গ্রামে দাপিয়ে বেড়ানো। এ রকম আরও অনেক ঘটনা আছে। একটা স্মৃতি মনে পড়ছে এই মুহূর্তে। আমি যখন গ্রামে থাকি, তখন আমাদের পিংলাকাঠি গ্রামে একটা মাত্র চায়ের দোকান ছিল। যত দূর মন পড়ে, চায়ের দোকানদারের নাম ছিল জয়ন্ত সাহা, তাঁর বাবার নাম বিনয় সাহা। তো সেই দোকানে গুড়ের চা পাওয়া যেত। বাবার হাত ধরে ভোরবেলা ওই চা খেতে যেতাম। কী যে অদ্ভুত স্বাদ ছিল! এখন, এই সময়ে এসে ওই চা খুব মিস করি।

অভিনয় জীবনের প্রায় ১২ বছর কাটিয়ে দিলাম। এই এক যুগ কীভাবে গেল আমি টের পেলাম না। সত্যি কথা হলো, এই সময়টা আমি উপভোগ করতে পারিনি। এখন সময়কে বিক্রি করতে হয়। সারাক্ষণ ব্যস্ত থাকতে হচ্ছে। তা ছাড়া আমার বড় দুর্বলতা হলো, আমি মোটেও ভবিষ্যৎমুখী লোক না। মানে ভবিষ্যৎ দেখতে পাই না। এ কারণে পরিকল্পনা করে জীবন চালানো আমার হয় না। আমি সম্ভবত গড়পড়তা মানুষের মতোই। আমার অতীত জীবনযাপন, অতীতের ভালো লাগাগুলো বেশি মনে পড়ে।

আবার এমনও হতে পারে, অভিনয় ছেড়ে দিলে হয়তো এই জীবনটার কথাই বেশি মনে পড়বে। বেশি হাহাকার লাগবে। সূত্র : প্রথম আলো

ad

পাঠকের মতামত