173647

চলন্ত বাসে ধর্ষণের পর হত্যা : বাসের চালক ও সুপারভাইজারের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি

টাঙ্গাইলের মধুপুরে চলন্ত বাসে এক ছাত্রীকে ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনায় বুধবার আরও দু’জন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। তারা হলেন- বাসের চালক হাবিবুর রহমান ও সুপারভাইজার ছবর আলী ওরফে গেন্দু।

এ নিয়ে গ্রেফতারকৃত পাঁচ আসামির সবাই দোষ স্বীকার করে জবানবন্দি দিলেন। পুলিশ আসামিদের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী ওই তরুণীর মোবাইল ফোন ও ভ্যানেটি ব্যাগ উদ্ধার করেছে।

মধুপুর থানার পরিদর্শক কাইয়ুম খান সিদ্দিকী জানান, গ্রেফতারকৃত ছোঁয়া পরিবহনের চালক হাবিবুর রহমান এবং সুপারভাইজার ছবর আলী ওরফে গেন্দু আদালতে জবানবন্দি দিতে রাজি হন। তাদের বুধবার দুপুরের পর টাঙ্গাইল বিচারিক হাকিম আদালতে আনা হয়। পরে তারা ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।

সিনিয়র বিচারিক হাকিম রুপন কুমার দাস চালক হাবিবুর রহমানের এবং অপর সিনিয়র বিচারিক হাকিম শামসুল আলম সুপারভাইজার ছফর আলীর জবানবন্দি লিপিবদ্ধ করেন।

আদালত ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, এ দুজন জবানবন্দিতে ধর্ষণ ও হত্যায় অংশ নেননি বলে জানিয়েছেন। তবে মধুপুর বন এলাকায় লাশ ফেলতে তারা সহায়তা করেছেন।

মঙ্গলবার আদালতে দেয়া ছোঁয়া পরিবহনের চালকের সহকারী শামীম, আকরাম ও জাহাঙ্গীরের জবানবন্দি থেকে জানা যায়, ওই দিন রুপা ছাড়াও মাত্র পাঁচ/ছয়জন যাত্রী বাসে ছিল। রুপা ছাড়া অন্য সব যাত্রীরা সিরাজগঞ্জ মোড় এবং বঙ্গবন্ধু সেতুর পশ্চিম প্রান্তে নেমে যায়। বঙ্গবন্ধু সেতু পার হওয়ার সময় রুপা একাই বাসে ছিলেন।

বাসটি টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলার কাছাকাছি এলে বাসের হেলপার শামীম রুপাকে জোর করে বাসের পেছনের আসনে নিয়ে যায়।

এ সময় রুপা তার কাছে থাকা পাঁচ হাজার টাকা ও মোবাইলফোন শামীমকে দিয়ে তাকে ধর্ষণ না করতে অনুরোধ করে। কিন্তু শামীম জোরপূর্বক প্রথমে রুপাকে ধর্ষণ করে। পরে অপর হেলপার আকরাম ও জাহাঙ্গীর তাকে ধর্ষণ করে।

বাসটি ঘাটাইল উপজেলা এলাকা অতিক্রম করার সময় রুপা কান্নাকাটি ও চিৎকার করা শুরু করলে তারা তিনজন মুখ চেপে ধরে।

একপর্যায়ে ঘাড় মটকে রুপাকে হত্যা করা হয়। পরে মধুপুর উপজেলা সদর অতিক্রম করে বন এলাকা শুরু হলে পঁচিশ মাইল নামক একটি জায়গার রাস্তার পাশে লাশ ফেলে রেখে চলে যায়।

তাদের তিনজনের জবানবন্দিতেই জানা গেছে, হত্যা ও লাশ ফেলে দেয়ার পর ওই তরুণীর দেয়া পাঁচ হাজার টাকা থেকে দুই হাজার টাকা করে নেন শামীম ও আকরাম এবং এক হাজার টাকা নেন জাহাঙ্গীর।

পরে শুক্রবার রাতে ওই তরুণীর লাশ উদ্ধার হওয়ার পর শনিবার টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতাল মর্গে তার ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়। পরে ওই দিনই টাঙ্গাইল কেন্দ্রীয় গোরস্থানে বেওয়ারিশ লাশ হিসেবে তাকে দাফন করা হয়।

এদিকে টাঙ্গাইল কেন্দ্রীয় গোরস্থান থেকে তরুণীর লাশ তুলে গ্রামে নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে পরিবার। নিহতের বড় ভাই হাফিজুল ইসলাম প্রামানিক লাশ তুলে নিয়ে যাওয়ার জন্য পুলিশের কাছে আবেদন করেছেন।

মধুপুর থানার ওসি আবেদনটি জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে পাঠিয়েছেন।

জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও জেলা প্রশাসক খান মো. নুরুল আমিন যুগান্তরকে জানান, লাশ উত্তোলনের জন্য একটি আবেদন পাওয়া গেছে। একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ করে পুলিশ ও ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে বাদীর আবেদন অনুযায়ী কবর থেকে লাশ উত্তোলনের ব্যবস্থা নেয়া হবে।

টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার মো. মাহবুব আলম বুধবার বিকালে তার সভাকক্ষে এ বিষয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। তিনি জানান, সঠিকভাবে তদন্ত করে এক মাসের মধ্যে এ মামলার চার্জশিট দেয়া হবে। অপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তির জন্য যা যা করা দরকার সব করা হবে।

ad

পাঠকের মতামত