৮৪ রোগীকে খুন ইঞ্জেকশন দিয়ে!
জার্মানিতে আদালতের নির্দেশে ব্যাপক সংখ্যক মরদেহ কবর থেকে তুলে পুনঃময়নাতদন্ত করার পর ৮৪ জনের দেহে প্রাণঘাতী ইঞ্জেকশনের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে।
এই ৮৪ রোগীকে নিলস হোজেল নামের একজন পুরুষ নার্স হত্যা করেছেন বলে অভিযোগ করেছে দেশটির পুলিশ। নিলস এরইমধ্যে ৩০ রোগীকে ইঞ্জেকশন দিয়ে খুন করার দায়ে যাবজ্জীবন কারাভোগ করছেন।
সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনে উত্তর জার্মানির ওল্ডেনবার্গ শহরের পুলিশ প্রধান জোহান কুয়েমি বলেন, আদালতের নির্দেশে অভিযুক্ত নিলসের মাধ্যমে চিকিৎসা পাওয়া ব্যাপক সংখ্যক রোগীর মৃতদেহ পুনঃময়নাতদন্ত করলে ৮৪ জনের শরীরে বিষাক্ত ওষুধ পাওয়া যায়।
কুয়েমি বলেন, পুলিশের ধারনা- নিলসের হাতে মৃত্যু বরণকারী রোগীর সংখ্যা অনেক বেশি হবে। তবে মারা যাওয়া অনেক রোগীকেই এরই মধ্যে দাহ করা হয়েছে।
এর আগে আদালতে শুনানিকালে ৪০ বছর বয়সী ওই নার্স স্বীকার করেছিলেন, উত্তর জার্মানির দুটি ক্লিনিকে তিনি রোগীদের শরীরে প্রাণঘাতি ইঞ্জেকশন পুশ করেছেন।
২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে নিলসকে একটি দ্বিতীয় মাত্রার হত্যাকাণ্ড (পূর্ব পরিকল্পনা ছাড়াই তাৎক্ষণিকভাবে সংঘটিত), দ্বিতীয় মাত্রার হত্যাচেষ্টা এবং রোগীদের দৈহিকভাবে ক্ষতি করার জন্য যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয় আদালত। ওই বিচারকালে অভিযুক্ত নার্স তার জবানবন্দিতে জানান, নার্স জীবনে তিনি আরও অনেক নার্সকে হত্যা করেছেন।
তার এই জবানবন্দির পর আদালত একটি বিশেষ কমিশন গঠন করে তিনি ওল্ডেনবার্গ এবং নিকটবর্তী ডেলমেনহর্স্টের যে দুই ক্লিনিকে কর্মরত ছিলেন সেখানে মারা যাওয়া রোগীদের মৃত্যুর বিষয়ে তদন্তের নির্দেশ দেয়।
কমিশন ক্লিনিক দু’টির কয়েকশ’ মেডিকেল প্রতিবেদন যাচাই এবং শতাধিক মৃতদেহ পুনঃময়নাতদন্ত করে এতে বিষাক্ত ওষুধ আছে কিনা পরীক্ষা করে দেখে।
এরপর ২০১৬ সালের জুন মাসে পুলিশ এবং প্রসিকিউটররা এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেন যে, নার্স নিলস ওল্ডেনবার্গের ক্লিনিকে ৩৩ জন নার্সকে হত্যা করেন।
নিলস যাদের শরীরে বিষাক্ত ইঞ্জেকশন পুশ করেছিলেন তারা হৃদযন্ত্র বন্ধ হয়ে বা হঠাৎ শরীরে রক্ত সঞ্চালন প্রবাহ বন্ধ হয়ে মারা যান।
পুলিশ জানিয়েছে, রোগীদের মৃত্যুর ঘটনায় দু’জন সাবেক সিনিয়র চিকিৎসক, ডেলমেনহর্স্ট ক্লিনিকের স্টেশন প্রধানের বিরুদ্ধে মানুষ হত্যায় জড়িত থাকার অভিযোগ আনা হয়েছে। তদন্তকারীরা বলেছেন, ওল্ডেনবার্গ ক্লিনিকের রোগীদের মৃত্যুর ঘটনা নিয়ে তাদের তদন্ত চলমান রয়েছে।
ওল্ডেনবার্গের ক্লিনিকটি অনিয়মের জন্য পরিচিত ছিল। ফলে এ অনিয়ম তদন্তের জন্য দায়িত্বপ্রাপ্তরা যদি দ্রুততার সঙ্গে কাজ করতেন তাহলে এত সংখ্যক রোগীর মৃত্যু ঠেকানো যেত বলে মনে করেন পুলিশ কর্মকর্তা কুয়েমি।