173478

কী আছে ‘ধর্ষকগুরু’ গুরমিত সিংয়ের শেষ সিনেমায়?

‘ধর্ষকগুরু’ হিসেবে পরিচিতি পাওয়া ভারতের হরিয়ানা রাজ্যের কথিত ধর্মগুরু গুরমিত রাম রহিম সিংকে নিজের দুই নারী শিষ্যাকে ধর্ষণের দায়ে ১০ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। সোমবার আদালতের রায়ের পর রোহতক জেলার সুনারিয়া কারাগারে তার জেল জীবন শুরু হয়েছে।

বর্তমানে পুরো ভারতে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছেন স্বঘোষিত এই ধর্মগুরু। বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকা এ ধর্মগুরু শুধু ধর্মীয় ক্ষেত্রেই পরিচিত নন। তিনি সিনেমার পর্দায় নায়ক, গায়ক এবং পরিচালকও বটে।

২০১৪ সাল থেকে তিনি সিনেমা প্রযোজনা ও অভিনয়ে নামেন। তার প্রথম ছবি ‘মেসেঞ্জার অফ গড’ সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয়। ছবি মুক্তির প্রথম সপ্তাহেই ছবির বক্স অফিস কলেকশন ছিল ১০০ কোটি রুপি । যা সে সময়ে মুক্তি পাওয়া রনবীর কাপুরের ‘রয়’ ছবিকেও ছাপিয়ে যায়।

প্রথম ছবিতেই ‘অসামান্য’ সাফল্য পাওয়ায় একের পর এক ছবিতে অভিনয় করেন ধর্মগুরু রাম রহিম। এ পর্যন্ত তার পাঁচটি ছবি মুক্তি পেয়েছে। এর মধ্যে মেসেঞ্জার অফ গড, দ্য লায়ন হার্ট, জয়তু ইঞ্জিনিয়ার অন্যতম।

আসুন জেনে নেই গুরমিত সিংয়ে সর্বশেষ মুক্তি পাওয়া ছবি ‘জয়তু ইঞ্জিনিয়ারে’ কী আছে-

সিনেমাটির অফিসিয়াল ট্রেলারের প্রথম দৃশ্যে দেখা যায়- বিস্তৃর্ণ মাঠে টয়লেট সারছেন অসংখ্য মানুষ। এদের মধ্যে একজন আবার একটু উঁচু ময়লার স্তুপে বসে সারছেন প্রাতকর্ম। অন্য দুইজন তাকে উদ্দেশ করে গান শুরু করে দিয়েছে।

গানের কথাগুলো এরকম- ‘তেরে স্বপ্নকো রানি কব আয়ে গা? যায়ে গি তো সাম, তব আয়ে গা?’ (তোর স্বপ্নের রানি কবে আসবে? সন্ধ্যা শেষ হলে তবেই কি আসবে?’) এখানে ওই ব্যক্তির শৌচকর্মে ধীর গতির কারণে আসলে তাকে ব্যঙ্গ করা হয়েছে। গানে গানে একপর্যায়ে তাকে ‘জোর’ লাগাতেও বলছে ওই দুই ব্যক্তি।

একজন আবার ওই অবস্থাতেই সেলফি তুলছেন। অবশেষে চলে আসে শৌচকর্মে লিপ্ত ব্যক্তির ‘স্বপ্নের রানি’ (হালকা হওয়ার অশ্লীল শব্দ)।

বির্তকিত ধর্মগুরু গুরমিতের এই সিনেমার ট্রেলারে আরও দেখা যায়- একটি বাইকে করে আসছেন গ্রামের স্কুলের হেডমাস্টার (গুরমিত)। তার পেছনে পেছনে ছুটছে গ্রামের ছেলেমেয়েরা।

ছেলেমেয়েদের স্কুলে আসার জন্য মাইকে ঘোষণা দেয়া হয়। কিন্তু ছেলেমেয়েরা স্কুলে না গিয়ে পাশের পুকুরে লাফিয়ে পড়ে গোসল করায় ব্যস্ত। ছেলেমেয়েদের পরিবর্তে একপাল গরুকে স্কুলে ঢুকতে দেখা যায়।

এরপর দেখা যায় বস্তাপচা অশ্লীল অ্যাকশন দৃশ্য।

চার মিনিট এক সেকেন্ডের এই ট্রেলারটি গুরমিত রাম রহিমের ভেরিফাইড ইউটিউব চ্যানেল (Saint MSG) থেকে নেয়া হয়েছে।

ট্রেলারে আরও দেখা যায়- হেডমাস্টারের থাকার কোয়ার্টার ব্যবহৃত হচ্ছে মুরগির খোয়াড় হিসেবে।

মাস্টার মশায় আবার হাডুডু খেলাও পারদর্শী। সে দৃশ্যও আছে ট্রেলারে।

আছে হলি খেলার দৃশ্য, যেখানে মাস্টার মশায় (গুরমিত) একটি কম বয়সী মেয়ে নজরে আসে হেডমাস্টার সাহেবের। তিনি বিশেষভাবে রাঙিয়ে দেন সেই মেয়েকে।

এছাড়া, গ্রামের মুখিয়াকে চড় মারা, ক্ষেতে কাজ করা, অলস গ্রামবাসীকে কর্মঠ বানানো ইত্যাদি দৃশ্যও আছে ওই ট্রেলারে।

প্রসঙ্গত, ১৯৬৭ সালে ১৫ আগস্ট রাজস্থানের গঙ্গানগরে শ্রীগুরুসর মৌদিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন গুরমিত রাম রহিম সিং। মাত্র সাত বছর বয়স থেকেই বাড়ি ছেড়ে শিখ ধর্মের এক গুরুর কাছে প্রতিপালিত এবং শিখ ধর্মের দীক্ষিত হতে থাকেন। সেখানে থেকেই শিক্ষা গ্রহণ করে ১৯৯০ সালে ২৩ সেপ্টেম্বর ডেরা সৌদার প্রধান হিসাবে নিযুক্ত হন এবং সর্বধর্ম সমন্বয়ক হিসেবে নিজের প্রচার শুরু করেন।

মূলত দলিত ও পিছিয়ে পড়া মানুষই তাকে নিজেদের গুরু হিসাবে মনে করতে শুরু করেন। প্রথম দিকে তেমন জনপ্রিয়তা না পেলেও পরবর্তীতে আস্তে আস্তে নিজের অবস্থান পাকা করতে শুরু করেন। এর কারণ হচ্ছে, তিনি বিভিন্ন রক্তদান শিবির করতেন, যৌনকর্মীদের পুনর্বাসন করতেন, অর্থাভাবে পড়াশোনা করতে না পাড়া ছেলেমেয়েদের পড়ানোর খরচ বহন করতেন। হরিয়ানা ও পাঞ্জাবে যেখানে সরকারি পরিসেবা নেই সেখানে তার অর্থ সাহায্যে হাসপাতাল, বাজার ও পরিবহনও চলতো প্রায় বিনামূল্যে। বৃক্ষরোপণ নিয়েও রাম রহিমের সারা বছরই কর্মসূচি চলে। রক্তদান শিবির ছিল তার ডেরার প্রধান কাজ।

২০০৩ সালে পৃথিবীর বৃহত্তম রক্তদান শিবির করে গিনেজবুক অব রেকর্ড-এ নাম লিখিয়েছেন রাম রহিম সিং ইনসান। হরিয়ানার সারদায় ৮০০ একর জমির ওপর তৈরি হওয়া কর্মসংস্থান প্রকল্পে প্রায় ২০ হাজার কর্মীর কর্মসংস্থান করেছেন। সেখানে অর্গ্যানিক মধু ও নুডলস তৈরি হয়। হরিয়ানা ও পাঞ্জাবে তার ডেরা সৌদার প্রায় পাঁচ হাজার ক্যাম্প অফিস আছে। আর সেই ক্যাম্প অফিসের নথিভুক্ত ভক্তের সংখ্যা পাঁচ কোটি।

এতো বড় ভক্ত-অনুগামী থাকায় স্বাভাবিকভাবেই রাজনৈতিক নেতা-নেত্রীদের চোখে ভোটের মধু খেতে ‘প্রিয়পাত্র’ হয়ে উঠেছিলেন গুরুমিত। যদিও নিজে কংগ্রেস আদর্শে বিশ্বাস বলে দাবি করতেন। কিন্তু ২০১৪ সালে বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপিকে সমর্থন করায় হরিয়ানায় বিজেপি জয় পেয়েছিল। একইভাবে ২০১৫ সালে দিল্লি বিধানসভা নির্বাচনেও প্রকাশ্যে রাম রহিম সিং ইনসান সমর্থন জানিয়েছিল বিজেপিকে। সেখানে জয় হয়েছিল বিজেপিরই। এমন কি বিহার বিধানসভা নির্বাচনেও প্রকাশ্যেই বিজেপির হয়ে ভোট ভিক্ষা করেছিলেন গুরমিত রাম রহিম সিং।

ad

পাঠকের মতামত