সাকিব-মিরাজের ঘূর্ণিতে দিশেহারা অস্ট্রেলিয়া!

মিরপুর টেস্টে কি বোলারদের জয় হতে যাচ্ছে? এক দিনের কম সময়ে অলআউট হয়ে গেছে বাংলাদেশ। প্রথম ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে এখন মহাবিপদে পড়েছে সফরকারী অস্ট্রেলিয়া! ফিরে গেছেন তিন টপ অর্ডার ব্যাটসম্যান ডেভিড ওয়ার্নার (৮), উসমান খাজা (১) এবং নাথান লায়ন (০)। ধ্বংসযজ্ঞের দুই নায়ক সাকিব আল হাসান এবং মেহেদী হাসান মিরাজ। বাংলাদেশের প্রথম ইনিংসে ২৬০ রানের জবাবে ৩ উইকেটে ১৮ রান তুলে প্রথম দিন শেষ করেছে সফরকারীরা।

অজিদের দূর্গে প্রথম আঘাত হানেন তরুণ অল-রাউন্ডার মেহেদী হাসান মিরাজ। রিভিউ নিয়েও শেষ পর্যন্ত বাঁচতে পারলেন না অজি সহ অধিনায়ক ওয়ার্নার। মিরাজের পরের বলে এলবিডাব্লিউ হয়েই ফিরতে হলো তাকে। বাংলাদেশের প্রথম সাফল্য আসে অজিদের দলীয় ৯ রানে। স্কোরবোর্ডে ৫ রান যোগ হতে না হতেই আবারও আঘাত! সাকিবের বলে রান আউট হয়ে যান উসমান খাজা (১)। ৫ বল পরেই বিশ্বসেরা অল-আউন্ডারের বলে এলবিডাব্লিউ হয়ে যান নাথান লায়ন (০)। দিনের বাকী কয়েকটি বল অধিনায়ক স্টিভেন স্মিথ (৩) এবং ম্যাট রেনশ (৬) নিরাপদে কাটিয়ে দেন।

এর আগে মিরপুর শের-ই-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজের প্রথম ম্যাচে টসে জিতে ব্যাটিংয়ে নেমে ২৬০ রানে অলআউট হয়ে যায় বাংলাদেশ। স্বাগতিকদের ব্যাটিং শুরুতেই দুমড়ে-মুচড়ে দেন অজি পেসার প্যাট কমিন্স। দিনের দ্বিতীয় ওভারে দলীয় ১০ রানে সৌম্য সরকারের উইকেট হারায় বাংলাদেশ। দুটি বাউন্ডারির সাহায্যে তিনি ৮ রান করেন। কমিন্সের প্রথম ওভারের পঞ্চম বলে গালিতে থাকা পিটার হ্যান্ডসকম্বের হাতে ধরা পড়েন এই তরুণ ওপেনার।

চতুর্থ ওভারে আবারো বল হাতে আসেন কমিন্স। যথারীতি তার করা পঞ্চম বলে উইকেটকিপার ম্যাথু ওয়েডের গ্লাভসে ক্যাচ দেন ইমরুল কায়েস (০)। পরের বলেই সেই ওয়েডের গ্লাভসবন্দি হয়ে কমিন্সের তৃতীয় শিকার হন সাব্বির রহমান (০)। ১০ রানে ৩ উইকেট হারানো দলের হাল ধরেন দুই বন্ধু তামিম ইকবাল এবং সাকিব আল হাসান।

দুজনের দারুণ ব্যাটিংয়ে ৩ উইকেটে ৯৬ রান নিয়ে লাঞ্চে যায় বাংলাদেশ। লাঞ্চ শেষে ৬৫ বলে ৭ বাউন্ডারিতে ক্যারিয়ারের ২৭তম হাফ সেঞ্চুরি পূরণ করেন বিশ্বসেরা অল-রাউন্ডার। অন্যপ্রান্তে ধীরস্থিরভাবে অসাধারণ ব্যাটিং করছেন তামিম ইকবাল। ৫০ রান করতে তিনি খেলেছেন ১১৯ বল। ২ চারের পাশাপাশি হাঁকিয়েছেন ৩টি ছক্কা।

তামিম ওপেনিংয়ে নামলেও রান তোলার দিকে তাকে ছাড়িয়ে যান সাকিব। পাশাপাশি গড়ে ফেলেন একটি রেকর্ড। বাংলাদেশের প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে ৫০তম টেস্টে ফিফটি করলেন তিনি। এর আগে মোহাম্মদ আশরাফুল ১২ রান করেছিলেন। সেটাই এতদিন বাংলাদেশের কোনো ক্রিকেটারের সর্বোচ্চ ছিল।

তবে হাফ সেঞ্চুরিটাকে সেঞ্চুরিতে পরিণত করতে পারলেন না তামিম ইকবাল। ১৪৪ বলে ৫ চার ৩ ছক্কায় ৭১ রান করে অফস্পিনার গ্লেন ম্যাক্সওয়েলের বলে ওয়ার্নারের হাতে ধরা পড়লেন তিনি। তামিমের বিদায়ের সাথে শেষ হলো দলীয় ১০ রানে ৩ উইকেট হারানোর পর সাকিব আল হাসানের সঙ্গে ১৫৫ রানের অসাধারণ জুটি।

সাকিবও বেশিক্ষণ টিকতে পারলেন না। সেঞ্চুরির আশা জাগিয়ে নাথান লায়নের ঘূর্ণিতে অধিনায়ক স্টিভেন স্মিথের তালুবন্দী হলেন। শেষ হলো ১৩৩ বলে ১১ বাউন্ডারিতে ৮৪ রানের ইনিংসটি। ক্যারিয়ারের ৫০তম টেস্টের প্রথম ইনিংসে দুই বন্ধুর কেউই সেঞ্চুরির দেখা পেলেন না। দুই তারকাকে হারিয়ে আবারও বিপদে পড়ে বাংলাদেশ। ভরসা ছিলেন অধিনায়ক মুশফিকুর রহিম আর দীর্ঘদিন পর টেস্ট দলে ফেরা নাসির হোসেন। কিন্তু ভাগ্য যেন আজ টাইগারদের পক্ষে ছিল না।

৫০ বলে ১৮ রান করে ৪ বছর পর অজি দলে ফেরা স্পিনার অ্যাস্টান অ্যাগারের শিকার হলেন টাইগার ক্যাপ্টেন। রিভিউ নিয়েও লেগ বিফোর উইকেটের সিদ্ধান্ত ফেরানো গেল না। অপর প্রান্তে লড়তে থাকা নাসির হোসেনের সঙ্গী হলেন তরুণ অল-রাউন্ডার মেহেদী হাসান মিরাজ। এমন সময় হানা দিল বৃষ্টি। আধঘণ্টার মত খেলা বন্ধ থাকার পর আবার শুরু হয়।

বৃষ্টি শেষে ১৮ রান করে নাথান লায়নের শিকার হন মেহেদী মিরাজ। পারেননি নাসিরও। ২৩ রান করে অ্যাস্টনে অ্যাগারের শিকার হন তিনি। আম্পায়ার প্রথমে এলবিডাব্লিউয়ের আবেদনে সাড়া না দিলেও রিভিউ নিয়ে নাসিরকে ফেরায় অজিরা। নাথান লায়ন ফেরান তাইজুলকে (৪)।

ad

পাঠকের মতামত