173101

‘যৌনকর্মীরা আমাদের মা’

১৫ কিশোরীর একটি দল। ভারতের মুম্বাইয়ের বিখ্যাত যৌনপল্লীতেই যাদের জন্ম; বেড়ে উঠেছেন সেখানেই। অন্ধকার এক দুনিয়ার গল্প শুনিয়েছেন এই কিশোরীরা। তারা বলছেন, যৌনপল্লীগুলোকে অন্ধকারাচ্ছন্ন করে রেখেছেন সভ্য সমাজের মানুষগুলোই।

মুম্বাই রেড লাইট ডিস্ট্রিক্টের কামাঠিপুরায় বেড়ে উঠা বেশ কয়েকজন কিশোরী বর্তমানে দেশটির বেসরকারি একটি সংস্থার সহায়তায় হোটেল বসবাস করছেন। জীবনের গল্প শোনাতে স্কটল্যান্ডের এডিনবার্গ ফ্রিঞ্জ ফেস্টিভ্যালে অংশ নিয়েছেন তারা।

তাদের একজন সন্ধ্যা। বয়স ২১ বছর। তিনি বলেন,‘আমাদের নিজস্ব কমিউনিটিতে বেড়ে ওঠাটা ছিল চমৎকার। সেখানকার যৌনকর্মীরা আমাদের মা। বাইরের সমাজ এই জায়গাটাকে অন্ধকারাচ্ছন্ন, কালো করেছে।’

 

সন্ধ্যা বলেন, ‘অনেকেই বলেন, রেড লাইট এলাকায় তোমার যাওয়া ঠিক হবে না, কারণ এই স্থান নিরাপদ নয়। কিন্তু আমি মনে করি, পৃথিবীতে আমার জন্য সবচেয়ে নিরাপদ স্থান এটি।’

সন্ধ্যার জীবনের গল্প উল্টো দিকে মোড় নেয় যখন সে স্কুলে যাওয়া শুরু করে। সন্ধ্যা বলেন, ‘আমি অনেক বছর ধরে ঘৃণার শিকার হয়েছি এবং এটি বারবার হচ্ছিল।’ এই কিশোরীর জীবনের কালো অধ্যায়ের শুরু হয়েছিল মাত্র ১০ বছর বয়সে। বলেন, ‘আমি মাত্র ১০ বছর বয়সে ধর্ষণের শিকার হয়েছিলাম।’

‘গায়ের রঙয়ের কারণে আমি বৈষম্যের শিকার হয়েছিলাম, কারণ আমি কালো। কালো চামড়ার ভারতীয় তরুণী, যে এসেছে মুম্বাইয়ের রেড লাইট এলাকা থেকে। একজন যৌনকর্মীর মেয়ে। ক্লাসে সবসময় একাই বসতাম।’

১৫ কিশোরীর এই দলের দায়িত্ব নিয়েছে দেশটির বেসরকারি সংস্থা ক্রান্তি। ভারতীয় এই সংস্থাটি সমাজের পিছিয়ে পড়া ও প্রান্তিক কিশোরীদের শিক্ষা ও ক্ষমতায়নে কাজ করছে।

 

এদেরই একজন রানি। বয়স ১৬। সে বলে, আমার বয়স যখন ১১ বছর তখন বাবা মারা যান। এসময় মায়ের আচরণে আমি বিপর্যস্ত হয়ে পড়ি। কারণ বাবা যেদিন সকালে মারা যান, সেদিন সন্ধ্যায় নতুন একজন পুরুষকে বাসায় আনেন মা। মা বলেন, তিনি তোমার নতুন বাবা।

‘পরের দুই বছর আমাকে প্রতিনিয়ত মারধর করেন নতুন বাবা, সঙ্গে মাও। প্রায় প্রত্যেকদিন। এর পর আমি ক্রান্তিতে চলে আসি। কিন্তু আমার মা এখনো এ ধরনের সহিংসতা মোকাবেলা করছেন। ক্রান্তিতে রয়েছে সাংস্কৃতিক চর্চার সুযোগ। সেখানেই তাদের জীবনের কঠিন মুহূর্তগুলো তুলে ধরছেন এই কিশোরীরা।’

রানি বলেন, ‘আপনি কি জানেন, কোন বিষয়টি আমাকে সফল করছে? সেটি হচ্ছে আমার ক্ষোভ; আমার মা এবং সৎ বাবার প্রতি ছিল। যা আমি বিসর্জন দিয়েছি। এখন আমি মনে করি যে তারাও মানুষ। জীবনের জন্য তারা সর্বোচ্চটুকুই করছেন।’

 

‘তবে তাদের কিছু সীমাবদ্ধতাও আছে। আমি শিখেছি, আপনি মানুষকে এবং নিজেকে সবচেয়ে বড় যে উপহারটি দিতে পারেন সেটি হচ্ছে ক্ষমা।’

সন্ধ্যা বলেন, ‘এই বিশ্বের সকলেই বিভিন্নভাবে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন। সেখানে আশা আছে। আমি হয়রানির শিকার হয়েছিলাম, কিন্তু আমি যা করতে চাই সেটি থেকে আমাকে দমাতে পারবে না।’

‘আমার অতীত কখনোই আমার দুর্বলতা হতে পারে না। আমরা সবসময় বলি, অতীতই আমার শক্তি। রেড লাইট এলাকায় যদি আমার জন্ম এবং বেড়ে উঠা না হতো, তাহলে আজ আমি এখানে আসতে পারতাম না।’

সুতরাং এখন যা হচ্ছে সবই অামার অতীতের কারণে। এছাড়া ভবিষ্যতে যা ঘটবে সেসবও- বলেন সন্ধ্যা।

বিবিসি অবলম্বনে

ad

পাঠকের মতামত