173021

রাজ্জাকের মৃত্যুতে যা বললেন তার প্রথম নায়িকা সুচন্দা

চলে গেলেন বাংলাদেশের কিংবদন্তি নায়করাজ রাজ্জাক। গতকাল সোমবার (২১ আগষ্ট) সন্ধ্যা ৬টা ১৩ মিনিটে রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেন এই মহা নায়ক। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৬ বছর।

রাজ্জাক ১৯৪২ সালের ২৩ জানুয়ারি পশ্চিমবঙ্গের কলকাতার টালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। স্কুলে থাকার সময়ে মঞ্চ নাটক দিয়ে অভিনয়ের শুরু। দেশভাগের পরে ১৯৬৪ সালে সেইসময়ের পূর্বপাকিস্তানে চলে আসেন সপরিবারে। টেলিভিশনে ‘ঘরোয়া’ নামের একটি নাটকে অভিনয় করে দর্শকপ্রিয়তা অর্জন করেন। সিনেমায় অভিনয়ের আগে সহকারী পরিচালনা করেছিলেন আবদুল জব্বার খানের অধীনে।

জহির রায়হানের সুনিপুণ হাতের ছোয়ায় অসাধারন লক্ষ্মীন্দর হয়ে দর্শকেদের সামনে প্রথম উপস্থিত হয়েছিলেন রাজ্জাক। তার বিপরীতে অভিনয় করেছে অপূর্ব সুন্দরী বেহুলারূপী সুচন্দা।

বেহুলা ছবিটি ১৯৬৬ সালে মুক্তি পায়। দর্শকের কাছে তার প্রথম ছবিটি সুপার হিট হয়। এরপর আর ফিরে থাকাতে হয়নি তাকে। রাজ্জাক থেকে হয়ে উঠেন বাংলাদেশি চলচ্চিত্রের নায়করাজ রাজ্জাক।

বাংলা চলচ্চিত্রের সেই কিংবদন্তি অভিনেতা নায়করাজ রাজ্জাক চলে গেলে। হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে সোমবার সন্ধ্যায় রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তার বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর। তার চিরবিদায়ে এক বিশাল শূন্যতা তৈরি হলো চলচ্চিত্রাঙ্গনে। তাকে নিয়ে স্মৃতিচারণ করেছেন ঢালিউডে নায়করাজের প্রথম ছবির নায়িকা সুচন্দা।

সুচন্দা বলেন, ‘এ সংবাদ শোনার জন্য আমি মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না। আমি স্বপ্নেও ভাবিনি আজ এমন একটা সংবাদ শুনতে হবে। তবে সত্যি হলো, শেষ পর্যন্ত রাজ্জাক আমাদের ছেড়ে চলে গেলেন। এটি শুধু আমার একার জন্য কষ্টের নয়, বাংলাদেশের প্রত্যেক মানুষের জন্য এটি সমান কষ্টের। অনেকদিন ধরে তার সঙ্গে কাজ করেছি, সেই ‘বেহুলা’ থেকে কত কত ছবি। জহির রায়হান নিজেও তাকে প্রচণ্ড ভালোবাসতেন। সেই থেকেই আমাদের পরিবারের সঙ্গে রাজ্জাকের পরিবারের একটা ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল।’

ষাট দশকের এই রোমান্টিক নায়িকা বলেন, ‘ও ঠিক আমার বন্ধু ছিল না, কিন্তু আমাদের অদ্ভুত সুন্দর একটা সম্পর্ক ছিল। আমি মনে করি, রাজ্জাক চলচ্চিত্রের একজন কিংবদন্তি, তিনি চলচ্চিত্রের একটি প্রতিষ্ঠান। তার এই চলে যাওয়ায় যে শূন্যতা তৈরি হলো, তা কখনও পূরণ হবে কি-না আমি নিশ্চিত নই। তার যে অবস্থান ও জনপ্রিয়তা, তা ছিল অসীম। আমার মনে আছে, চিত্রালীর রামেদুন জামান চৌধুরী তাকে নায়করাজ উপাধি দিয়েছিলেন। এ উপাধির যোগ্য লোক ছিলেন তিনি। কারণ, তিনি আমাদের কাছে ছিলেন এক অসাধারণ দৃষ্টান্তের নাম। তিনি ছিলেন চলচ্চিত্রের অভিভাবক।’

উল্লেখ্য, ১৯৬৫ সালের দিকে জহির রায়হানের সহকারী পরিচালক হিসেবে যোগ দান করেন রাজ্জাক। আর তখন থেকেই তার ভাগ্য খুলে যায়। সহকারী হিসাবে কয়েকটি ছবি পরিচালনা করার পর হঠাৎ এক দিন তিনি নায়ক হওয়ার সুযোগ পান।

লোক কাহিনী নিয়ে জহির রায়হান তখন বেহুলা ছবির নির্মান কাজ করছিলেন। জহির রায়হান তাকে ডেকে বললেন আপনিই আমার ছবির নায়ক। ঐসময় রাজ্জাকের চেহারার মধ্যে কলকাতার বিশ্বজিৎ-এর ছায়া খুঁজে পাওয়া যেত। জহির রায়হানের সুনিপুণ হাতের ছোয়ায় অসাধারন লক্ষ্মীন্দর হয়ে দর্শকেদের সামনে উপস্থিত হলেন রাজ্জাক।

তার বিপরীতে অভিনয় করছিলেন তখনকার সময়ের অপূর্ব সুন্দরী বেহুলারূপী সুচন্দা। বেহুলা ছবিটি ১৯৬৬ সালে মুক্তি পায়। দর্শকের কাছে ছবিটি সুপার হিট হয়। এই ছবির মধ্যে দিয়েই বাংলাদেশ চলচ্চিত্র পায় আরেক জন নায়ক যিনি চলচ্চিত্র শিল্পের অপরিহার্য নায়ক ও পরবর্তিতে নায়করাজ হয়ে যান।

মহান এই অভিনেতার মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এক শোকবার্তায় প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের চলচ্চিত্র জগতে রাজ্জাকের অবদানের কথা স্মরণ করে বলেন, ‘তাঁর মৃত্যুতে দেশের চলচ্চিত্রশিল্পের জন্য একটি অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে গেল। তিনি ছিলেন বাংলা চলচ্চিত্রের উজ্জ্বল নক্ষত্র।’

শেখ হাসিনা নায়করাজের রুহের মাগফিরাত কামনা করেন এবং তাঁর শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা প্রকাশ করেন।

এ ছাড়া বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া, অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, বিমানমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রী ইয়াফেস ওসমান, জাকের পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তফা আমির ফয়সল মুজাদ্দেদী প্রমুখ গভীর শোক প্রকাশ করেন। পৃথক বার্তায় বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন কিংবদন্তি এই অভিনেতার মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছে।

বিডি২৪লাইভ

ad

পাঠকের মতামত