172834

সাবধান! মোবাইল সার্ভিসিংয়ের নামে ভয়ঙ্কর ফাঁদ…

মোবাইল সার্ভিসিংয়ের নামে শতাধিক নারীর প্রায় ১৫ হাজার ব্যক্তিগত ছবি চুরি করে ব্ল্যাকমেইল করতো একটি চক্র। তারা ছবিগুলো ইন্টারনেটে ছেড়ে দেয়ার হুমকি দিয়ে ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে টাকা আদায় করতো। কোনো কোনো ক্ষেত্রে ভুক্তিভোগী নারীদের শারীরিক সম্পর্কে লিপ্ত হতে বাধ্য করতো।

রোববার রাতে মো. আলামিন শেখ ওরফে সবুজ ও শাহাদাত হোসেন ওরফে মধু নামে ওই চক্রের দুই সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে র‍্যাব-৩।
গ্রেপ্তার হওয়া দুজনের বাড়িই গোপালগঞ্জ জেলায়। তবে সবুজ ঢাকায় আর মধু গোপালগঞ্জে থাকতো। তাদের কাছ থেকে একটি ল্যাপটপ, একটি কম্পিউটার, নয়টি মোবাইল ফোন, প্রচুর অশ্লীল ভিডিও ও শতাধিক নারীর ১৫ হাজার ছবি উদ্ধার করা হয়।
সোমবার বিকালে কারওয়ান বাজারে র্যা বের মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে র‍্যাব-৩ এর পরিচালক লে. কর্নেল তুহিন মোহাম্মদ মাসুদ সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান।
তিনি বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তারকৃতরা তাদের অপরাধের কথা স্বীকার করেছেন। তারা মানুষের সরলতার সুযোগ নিয়ে ইমো অ্যাকাউন্ট মিরর করে হুবহু আরেকটি ইমো অ্যাকাউন্ট তৈরি করে নারীদের ব্যক্তিগত ছবি চুরি করতো। পরে তাদের ব্ল্যাকমেইল করে নগদ টাকা আদায় করতো এবং শারীরিক সম্পর্কে লিপ্ত হতে বাধ্য করতো।
লে. কর্নেল মাসুদ বলেন, গ্রেপ্তারকৃত শাহাদাত হোসেন মধু ওই চক্রের মূল হোতা। তার আরো ৮-১০ জন সহযোগী আছে, যারা সবাই মোবাইল সার্ভিসিংয়ের কাজ করে। চক্রটি দোকানে যারা মোবাইল সার্ভিসিং করতে আসতো তাদের মোবাইল থেকে ব্যক্তিগত তথ্য কপি করে রাখতো। কৌশলে ইমো সফটওয়্যারে মিরর তৈরি করে দিত। পরে ওই অ্যাকাউন্ট থেকে কেউ ব্যক্তিগত আলাপ করলে তারা সেগুলো পেয়ে যেতো।
সাইবার অপরাধীদের সংখ্যা বাড়ছে উল্লখ করে তিনি বলেন, আমরা এ ধরনের অপরাধ নিয়ন্ত্রণে কাজ করে যাচ্ছি। কিন্তু সাধারণ মানুষকে চ্যাট সফটওয়্যার ব্যবহার ও ব্যক্তিগত ছবি শেয়ারে আরো সচেতন হতে হতে হবে।
র্যা বের এই কর্মকর্তা বলেন, এ ধরনের ভিকটিমরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে অভিযোগ করতে আসেন না। বেশ কয়েকজন বিশিষ্টজন এর শিকার হওয়ায় র্যা বের কাছে অভিযোগ করেন। পরে দেখা যায় অনেক নারী এর শিকার। তারা তাদের স্বামী বা পরিবারের কথা চিন্তা করে অভিযোগ করতে আসেন না।
তিন পদ্ধতিতে ব্যক্তিগত ছবি সংগ্রহ করতো প্রতারক চক্র
প্রতারক চক্রটি তিনটি পদ্ধতিতে ভুক্তভোগীদের ব্যক্তিগত ছবি ও তথ্য সংগ্রহ করতো এবং ব্ল্যাকমেইল করে অর্থ সংগ্রহ করতো। অনুসন্ধানে র্যা বের গোয়েন্দারা সে সব পদ্ধতি সম্পর্কে জানতে পেরেছেন।
প্রথম পদ্ধতি
মোবাইল সার্ভিসিংয়ের জন্য কোনো ব্যক্তি মোবাইল ফোন দোকানে দিলে প্রতারক চক্র তার সকল ব্যক্তিগত তথ্য ও গোপনীয় ছবি হাতিয়ে নিত। পরে সেগুলো ছড়িয়ে দেয়ার হুমকি দিয়ে টাকা আদায় করতো।
দ্বিতীয় পদ্ধতি
সার্ভিসিংয়ের জন্য দেয়া ভিকটিমের মোবাইলে ইমো অ্যাকাউন্ট থাকলে ভিকটিমের নাম্বার দিয়ে প্রতারক চক্রের নিজস্ব মোবাইলে নতুন ইমো অ্যাকাউন্টের রিকোয়েস্ট পাঠানো হতো। ওই রিকোয়েস্টের বিপরীতে ভিকটিমের মোবাইল ফোনে ইমোর যে ভেরিফিকেশন কোড আসতো তা প্রতারক চক্র নিজেদের মোবাইলে স্থাপন করতো এবং ভিকটিমের মোবাইল থেকে ভেরিফিকেশন কোডটি মুছে দিত।
এতে ভিকটিমের অ্যাকাউন্টের অনুরুপ আরেকটি ইমো অ্যাকাউন্ট প্রতারকের মোবাইলে তৈরি হতো। এর ফলে একই সময়ে একটি ইমো অ্যাকাউন্ট দুটি মোবাইলে চলমান থাকতো। পরে ভিকটিমের ইমোর সকল কার্যকলাপ ফলো করে একান্ত গোপনীয় আলাপচারিতা, ছবি গোপনে ডাউনলোড করতো চক্রটি। পরবর্তীতে এর বিনিময়ে টাকা আদায় করা হতো।
তৃতীয় পদ্ধতি
ভিকটিম অফলাইন থাকলে তার ইমো অ্যাকাউন্ট থেকে নিকটাত্মীয়, বন্ধু-বান্ধব বিশেষ করে প্রবাসীদের সঙ্গে আলাপচারিতা করে জরুরি প্রয়োজনের কথা বলে সুকৌশলে টাকা আদায় করতো এই প্রতারক চক্র। ভিকটিমের পরিচয় ব্যবহার করে তার বন্ধু-বান্ধবদের ইমো অ্যাকাউন্ট হ্যাক করা বা অন্য কোনো অ্যাপসে পাসওয়ার্ড হাতিয়ে নিয়ে তাদেরকেও প্রতারণার ফাঁদে ফেলতো চক্রটি।

ad

পাঠকের মতামত