172761

এই অভিনয় জীবন দিয়ে কী হবে : শাবানা

সত্তর থেকে নব্বই দশকে জনপ্রিয়তার তুঙ্গে ছিলেন এ নায়িকা। পরিচালক এহতেশামই তার ‘রত্মা’ নাম বদলে শাবানা রাখেন। ক্যারিয়ারে ২৯৯ টি ছবিতে অভিনয় করেছেন তিনি। পাশাপাশি ২৫ টি ছবির প্রযোজকও তিনি।
অভিনয়ের জন্য ১১ বার পেয়েছেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার।

প্রবাস জীবন ফেলে ব্যক্তিগত কাজে বছরে দু-একবার দেশে এলেও চলচ্চিত্র শিল্পের সঙ্গে বর্তমানে কোনো যোগাযোগই নেই তার। তার অভিনীত সর্বশেষ চলচ্চিত্র ছিল ‘ঘরে ঘরে যুদ্ধ’।

সম্প্রতি দেশে এসেছিলেন তিনি। সাংবাদিকদের সাথে কথাও বলেছেন। অভিনয় ছেড়ে দেয়ার বিষয়ে শাবানা বলেন, সন্তানদের কথা ভেবেই তিনি অভিনয় ছেড়েছেন। তিনি বলেন, সন্তানদের ঠিকভাবে গড়ে তুলতে হবে। না হলে তার এই অভিনয় জীবন দিয়ে কী হবে!

তাই কষ্ট হলেও সিনেমা ছেড়ে সন্তানদের ব্যাপারে মনোযোগী হবার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। এ জন্যই যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি দেন।

শাবানার তিন সন্তানের মধ্যে দুই মেয়ে ও এক ছেলে। তিনি জানান, ‘সুমী ইকবাল এমবিএ ও সিপিএ করেছে। তবে এখন পুরোদস্তুর গৃহিণী। ছোট মেয়ে উর্মি সাদিক মাস হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি করেছে। ছেলে নাহিন সাদিক রটগার্স বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স করে এখন ব্লুমবার্গে চাকরি করছে।

তিনি জানান বাচ্চারা বিদেশে চলে যাবার পর তাকে খুব মিস করছিলো। তাই বাচ্চাদের জন্য তিনিও এক পর্যায়ে দেশ ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেন।

দীর্ঘ ১৭ বছর ধরে রূপালি পর্দা থেকে দূরে রয়েছেন তিনি। তাতে কী? সিনেমা প্রেমীরা কিন্তু তাকে একটু সময়ের জন্য হলেও ভুলে যাননি। দেশের টান, মনের টান, জন্ম, বেড়ে ওঠা, অভিনয় জীবন, মানুষের ভালোবাসায় শাবানা হয়ে ওঠা-সবই তো বাংলাদেশে।

১৯৭৩ সালে সরকারী কর্মকর্তা ওয়াহিদ সাদিকের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন শাবানা। তবে তিনি দেশের বাইরে থাকলেও মনটা তার দেশে পড়ে থাকে দেশে। তা শাবানার কথায় স্পষ্ট।

তিনি বলেন, ‘সত্যি কথা বলতে আমি দেশে না থাকলেও কারও কাছ থেকে দূরে নেই। প্রতিটা মুহূর্তে দেশ, দেশের মানুষ আর চলচ্চিত্রের খবর নেই। আমি সবাইকে খুব মিস করি। কিন্তু কী করব, যুক্তরাষ্ট্রে যখন স্থায়ী হয়েই গিয়েছি তখন চাইলেই যখন খুশি তখন চলে আসতে পারি না।’

২০০০ সালের পর চলচ্চিত্রাঙ্গন ছেড়ে সপরিবারে যুক্তরাস্ট্রে চলে যান; সে সময়ের বাংলা চলচ্চিত্রের তুমুল জনপ্রিয় নায়িকা শাবানা। চলচ্চিত্রকার আজিজুর রহমানের হাত ধরে সিনেমায় অভিষেক হয় শাবানার। ১৯৬৭ সালে এহতেশামের ‘চকোরী’ সিনেমায় অভিনয় করে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পান।

শাবানা জানান, তিনি এখন সিনেমায় অভিনয় না করলেও তার অভিনীত পুরোনো সিনেমাগুলো এখন টিভিতে যখন দেখায় তখন সুযোগ পেলেই দেখেন। দেশের এখনকার সিনেমা সম্পর্কে খোঁজখবর রাখেন। শাকিব খান, অপু বিশ্বাস ও মাহির সিনেমাও দেখেন। কারণ নিউজার্সিতে চ্যানেল আই, এনটিভি, এটিএন, বাংলাভিশন টিভি চ্যানেলগুলো দেখানো হয়।

বাংলাদেশের কিংবদন্তী এ চলচ্চিত্র অভিনেত্রী বলেন, ‘এসব চ্যানেলে আমার সিনেমা প্রায়ই দেখায়। যখন দেখি সত্যি ভালো লাগে। সিনেমাগুলো দেখার সময় শুটিংয়ের সময়ের স্মৃতিগুলো মনে পড়ে। আনন্দও হয়।’

এই সময়ের সিনেমা নিয়ে শাবানা নিজস্ব কোনো ভাবনা না থাকলেও তার স্বামী ওয়াহেদ সাদিক ছবি প্রযোজনা করতে পারেন বলে জানান তিনি। আর বলেন, ‘সাদিক সাহেব হয়তো সিনেমা প্রযোজনা করতে পারেন। আমাদের এসএস প্রোডাকশন থেকে অনেক সিনেমা হয়েছে। প্রচুর সুপারহিট সিনেমা আমরা উপহার দিতে পেরেছি।

সিনেমা করতে গেলে প্রচুর সময় দিতে হয়। এলাম আর গেলাম বললে তো হবে না। গল্প নিয়ে সবকিছু ভাবতে হয়। ও বলে সিনেমা বানাবে, জানি না করতেও পারে।’

শাবানা যানান, যাদের সঙ্গে কাজ করেছেন তাদের অনেকেই এখন আর বেঁচে নেই। এসব ভাবলেই শাবানার মন খারাপ হয়। এহতেশাম, মোস্তফা মেহমুদ, কামাল আহমেদ, দিলীপ বিশ্বাস, সুভাস দত্ত-তারা কেউ-ই নেই। পরিচালকদের মধ্যে আজিজুর রহমান ছাড়া আর কেউ বেঁচে নেই।

অনেক শিল্পীও নেই। জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে এবার আজীবন সম্মাননা পাচ্ছেন শাবানা। এটা তার জন্য অনেক আনন্দের ও গর্বের বলে জানিয়েছেন তিনি।

শাবানার পৈতৃক বাড়ি চট্টগ্রাম জেলার রাউজান উপজেলার ডাবুয়া গ্রামে। দীর্ঘ অভিনয়জীবনে শাবানা মোট ২৯৯ টি সিনেমায় অভিনয় করেছেন। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি সিনেমায় অভিনয় করেছেন আলমগীরের সঙ্গে। তার সঙ্গে জুটি হয়ে তিনি ১৩০টি সিনেমায় অভিনয় করেছেন। এরপরই যার সঙ্গে বেশি অভিনয় করেছেন, তিনি হলেন চিত্রনায়ক রাজ্জাক।

কয়েক বছর আগে খবর বেরিয়েছিল রাজনীতিতে যুক্ত হচ্ছেন শাবানা। তবে তিনি নয়। তার স্বামী ওয়াহিদ সাদিক হয়তো রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হতে পারেন। তাছাড়া যশোরের কেশবপুরে তার শ্বশুরবাড়ির লোকজন রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত আছেন অনেকদিন ধরে। ওয়াহিদও যুক্ত হতে পারেন।’

জীবনের ধাপে ধাপে কিছু সময় আসে, সে সময় সঠিক সিদ্ধান্ত নেয়া খুব দরকার। জীবনযাত্রায় দারুণ পরিবর্তন এনে শাবানাও ঠিক তেমনটিই করেছেন। শাবানার জীবন অনেকটা চলচ্চিত্রের গল্পকেও হার মানায়। যে শাবানাকে দর্শকরা স্থান দিয়েছে হৃদয়ে, দৃষ্টিসীমানার বাইরে গেলেই কি তাকে ভুলে থাকা যায়? শাবানা বিস্মৃত হননি, হবেনও না কোনোদিন

ad

পাঠকের মতামত