172773

এমবিএ পাস সন্তানের গর্বিত পিতা এক হিজড়া

এক সময়ে উচ্চআয়ের চাকরে এই হিজড়া উপার্জনের জন্য বিয়ের আসর থেকে শুরু করে নববধূর বরণ এবং সন্তান জন্মের বোধনে নাচ-গান করতে শুরু করেন। কিন্তু কোথাও যেন নিজের পরিবারকে ফেলে আসার যন্ত্রণা, স্ত্রীকে অনিশ্চিত ভাগ্যের হাতে ছেড়ে দেওয়াটা তাকে আত্মগ্লানিতে শেষ করত।

নিজের সত্তা খুঁজে পেতে একদিন ঘর ছেড়ে বেরিয়ে পড়েছিলেন। গিয়ে ভিড়ে ছিলেন হিজড়া সমাজে। ছেড়ে এসেছিলেন স্ত্রীকে। কিন্তু বাবা-মার আদর্শ ছেলে হতে না পারা থেকে শুরু করে যোগ্য স্বামী হয়ে উঠতে না পারা তাকে সবসময় কুরে কুরে খেত। সময়ের আবর্তে ফেলে আসা সেই স্ত্রীকে একদিন ফিরে পেয়েছেন তিনি। তিনি সন্তানের পিতাও হয়েছেন। আজ সেই সন্তান এমবিএ পাস করে চাকরি করছে। বিয়েও দিয়েছেন ছেলের।

এক হিজড়ার এই কাহিনী এখন ভাইরাল হয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। ‘হিউম্যান আমদাবাদ’-নামে এক ফেসবুক পেজে প্রকাশিত হয়েছে সেই হিজড়ার এই কাহিনী।

নাম প্রকাশ না করা এই হিজড়া জানিয়েছেন, তার জন্ম হয়েছিল এক ধর্মভীরু পরিবারে। সন্তানের জন্ম হতেই তার বিয়ে ঠিক করে দেওয়াটাই এই পরিবারের রেওয়াজ। তেমনভাবে ছোট্ট বয়সেই তারও বিয়ে ঠিক হয়ে যায়। কিন্তু একটু বড় হতেই বুঝতে পারেন, শরীরটা ছেলেদের মতো হলেও তার ভিতরে রয়েছে নারীসত্তা। এই অবস্থাতে একদিন বিয়েও হয়ে যায়। থাকতে না পেরে একদিন বাবা-মা এবং স্ত্রীর সামনে নিজের আসল পরিচয় দিয়ে ঘর ছেড়ে বেরিয়ে পড়েছিলেন তিনি।

শূন্যহাতে বেরিয়ে গিয়ে ভিড়েছিলেন হিজড়া সমাজে। শিখেছিলেন হিজড়াদের মতো আচার-ব্যবহার। অভ্যস্ত করে তুলেছিলেন তাদের মতো পোশাক-আশাক। এক সময়ে উচ্চআয়ের চাকরে এই হিজড়া উপার্জনের জন্য বিয়ের আসর থেকে শুরু করে নববধূর বরণ এবং সন্তান জন্মের বোধনে নাচ-গান করতে শুরু করেন।

কিন্তু, কোথাও যেন নিজের পরিবারকে ফেলে আসার যন্ত্রণা, স্ত্রীকে অনিশ্চিত ভাগ্যের হাতে ছেড়ে দেওয়াটা তাকে আত্মগ্লানিতে শেষ করত। ইচ্ছে করত সন্তানের পিতা হতে। কিন্তু তার কোনো উপায় ছিল না।

একদিন আচমকাই ঘরের দরজায় কড়া নাড়ার শব্দে দরজা খুলে অবাক তিনি। দেখেন তার স্ত্রী একটি বাচ্চা ছেলের হাত ধরে দাঁড়িয়ে আছেন। স্ত্রী দ্বিতীয়বার যাকে বিয়ে করেছিলেন এই বাচ্চা ছেলে তারই সন্তান। কিন্তু দ্বিতীয় স্বামী মদ্যপ এবং নারীসঙ্গেই মজে থাকতেন। সংসারে নজর নেই বলে স্ত্রীর কাছ থেকে জানতে পারেন।

এরপর এক নয়া যুদ্ধ। স্ত্রী এবং তার দ্বিতীয় বিবাহে জন্ম নেওয়া সন্তানকে নিজের কাছেই রেখে দেন ওই হিজড়া। তাদের আলাদা বাড়িতে তোলেন। নতুন করে বিয়ে করেন স্ত্রীকে। স্ত্রীর সন্তানকে পিতার স্নেহে লালন-পালন করেন। সেই ছেলে এমবিএ পাস করে এখন উচ্চ প্রতিষ্ঠিত।

ছেলেকে তার পছন্দের মেয়ের সঙ্গে বিয়ে দিয়েছেন। মা-ছেলে এবং নতুন বধূকে আলাদা ফ্ল্যাটও কিনে দিয়েছেন ওই হিজড়া। আর আত্মকথন জানানো এই হিজড়া ফের ফিরে গিয়েছেন তার সমাজে। কিন্তু তাকে একটি জিনিসই তৃপ্তি দেয় যে, তিনি বাবা-মার আদর্শ ছেলে হতে পারেননি, স্ত্রীর যোগ্য স্বামী হতে পারেননি, কিন্তু তিনি সন্তানের গর্বিত পিতা হতে পেরেছেন।

ad

পাঠকের মতামত