172548

হিলারির জয়ের সম্ভাবনা এখনো শেষ হয়ে যায়নি!

নিউজ ডেস্ক: হিলারিকে হারিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হয়েছেন তীব্র বিতর্কিত ও সমালোচিত রিপাবলিকান প্রর্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প, এটা সম্ভবত এখনো কেউ কেউ মানতে পারছে না। তাই সব আনুষ্ঠানিকতা শেষ হওয়ার পরও এ নির্বাচনের ফলাফল নিয়ে পুঙ্খানুপুঙ্খ বিশ্লেষণ ও গবেষণা করছেন অনেকে। আর এমন এক গবেষণাতেই বেরিয়ে এলো বিষ্ময়কর তথ্য। তিনটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গরাজ্যের ভোটের ফলাফলে কারচুপির অভিযোগ এনে এসব রাজ্যে ভোট পুনর্গণনার আবেদন জানিয়েছেন দেশটির কম্পিউটার বিজ্ঞানী ও আইনজীবীদের একটি দল।

ভোট পুনর্গণনা হলে কারচুপির অভিযোগ ওঠা উইসকনসিন, পেনসিলভানিয়া ও মিশিগানের ইলেকটোরাল কলেজ যদি হিলারির পক্ষে চলে আসে, তাহলেই সব হিসাব উল্টে যেতে পারে। এ তিনটি রাজ্যে মোট ইলেকটোরাল কলেজ আছে ৪৬টি। সবগুলো ইলেকটোরাল কলেজ যদি হিলারির পক্ষে আসে, তাহলে হিলারিই হবেন পরবর্তী মার্কিন প্রেসিডেন্ট, ডোনাল্ড ট্রাম্প নয়।

গার্ডিয়ানের এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।

কম্পিউটার বিজ্ঞানী ও আইনজীবীদের এ দলটি দাবি করছে, বিদেশি হ্যাকাররা এ তিনটি গুরুত্বপূর্ণ রাজ্যের ভোটিং মেশিন হ্যাক করে ভোটের ফলাফলে প্রভাব ফেলেছেন। তাই পুনরায় ভোট গণনার দাবি জানিয়েছেন তারা। পুনরায় ভোট গণনা হলে হিলারি জিতবেন বলে তীব্র আশাবাদী এ দলটি। দাবির পক্ষে পর্যাপ্ত যুক্তিপ্রমাণও দেখিয়েছেন তারা। হিলারির নির্বাচনী ক্যাম্পকেও তাদের পক্ষে সরব হওয়ার আহবান জানিয়েছে এ দলটি।

এ তিনটি রাজ্যের মধ্যে মিশিগানের ফলাফল এখনো নিষ্পত্তি হয়নি। কারণ এ রাজ্যে দুই প্রার্থীর মধ্যে ভোটের ব্যাবধান এক শতাংশেরও কম। তাই এ রাজ্যের ইলেকটোরাল কলেজগুলো কার ভাগে যাবে, তাও এখনো নির্ধারিত হয়নি।

কীভাবে এ রাজ্যগুলোর ইলেকটোরাল কলেজগুলো জিতলে হিলারি প্রেসিডেন্ট হবেন, তার সমীকরণ দেখিয়েছে এ দলটি। নির্বাচনে পপুলার ভোটে ট্রাম্পের চেয়ে ২০ লাখ ভোট বেশি পেয়েছেন হিলারি। যেহেতু দেশটিতে নির্বাচনে জয় পরাজয় ইলেকটোরাল কলেজের ভিত্তিতে নির্ধারিত হয়, সে হিসেবে ট্রাম্প হিলারির চেয়ে বেশি ইলেকটোরাল কলেজে জিতে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন। মিশিগানের ইলেকটোরাল কলেজ যেহেতু এখনো নির্ধারিত হয়নি, তাই বাকি ইলেকটোরাল কলেজগুলোর মধ্যে ট্রাম্প পেয়েছেন ২৯০টি আর হিলারি পেয়েছেন ২৩২টি। কিন্তু এ তিনটি রাজ্যের মোট ৪৬টি ইলেকটোরাল কলেজ যদি হিলারির পক্ষে চলে আসে তাহলে হিলারির ইলেকটোরাল কলেজ হবে ২৭৮টি এবং ট্রাম্পের ইলেকটোরাল কলেজ কমে হবে ২৬০টি। সেক্ষেত্রে ট্রাম্পকে হারিয়ে নির্বাচনে জিতবেন হিলারি ক্লিনটন। কারণ প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হতে হলে কমপক্ষে ২৭০টি ইলেকটোরাল কলেজ জিততে হয়।

বিশ্বাসযোগ্য সূত্রের বরাত দিয়ে গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কম্পিউটার বিজ্ঞানী ও আইনজীবীদের এ দলটি ভোট কারচুপির যাবতীয় তথ্য প্রমাণসহ একটি প্রতিবেদন তৈরি করছে এখন। আগামী সপ্তাহে প্রতিবেদনটি ফেডারেল কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করা হবে।

এ তিনটি রাজ্যের ভোট পুনর্গণনা করতে হলে আজ শুক্রবার থেকে এ সপ্তাহের বুধবারের মধ্যে ডেমোক্রেটিক পার্টিকে আনুষ্ঠানিকভাবে আবেদন করতে হবে। তবে এ বিষয়ে এখনো কোনো মন্তব্য করেনি ডেমোক্রেটিক পার্টি।

ভোট পর্যালোচনার জন্য ‘ইউএস ইলেকশন অ্যাসিট্যান্ট’ নামে একটি স্বাধীন কমিশন আছে যুক্তরাষ্ট্র সরকারেরর।

এদিকে এ তিনটি রাজ্যের ভোট পুনর্গণনার জন্য আঁটসাঁট বেঁধেই মাঠে নেমেছেন গ্রীণ পার্টির নেতা জিল স্টেইন। ফলাফল চ্যালেঞ্জ করতে তিনি অনলাইনে যে তহবিল খুলেছেন, সেখানে ইতোমধ্যেই ২৫ লাখ ডলার জমা হয়েছে।

তবে এসব কিছুর বাইরেও হিলারির প্রেসিডেন্ট হওয়ার আরেকটি সূক্ষ্ণ সম্ভাবনা আছে। নির্বাচনে যে ৫৩৮ জন ইলেকটর নির্বাচিত হয়েছেন, তারা যদি তাদের প্রতিশ্রুতির বাইরে অন্য প্রার্থীকে ভোট দেন, তাহলেও হিলারি জিততে পারেন। অর্থাৎ ট্রাম্প যে ২৯০টি ইলেকটোরাল কলেজে জয়লাভ করেছেন, এ ২৯০ জন ইলেকটরের সবাই ট্রাম্পকে ভোট দেয়ার কথা। কিন্ত এদের মধ্যে যদি অন্তত ৩৮ জন ইলেকটর প্রতিশ্রুতির বাইরে গিয়ে হিলারিকে ভোট দেন, তাহলে হিলারি প্রেসিডেন্ট হয়ে যাবেন। সেক্ষেত্রে এ ইলেকটোরদের বলা হবে ‘ফেইথলেস ইলেকটোরাল’। ১৯ ডিসেম্বর এ ইলেকটোরাল কলেজ ভোট অনুষ্ঠিত হবে।

যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনের ইতিহাসে এখন পর্যন্ত ১৫৭ জন ‘ফেইথলেস ইলেকটর’ ভোটার দেখা গেছে। যদিও তাদের ভোট নির্বাচনের ফলাফলে কোনো প্রভাব ফেলতে পারেনি। তবে এবারের নির্বাচনে ইলেকটোরালদের প্রতিশ্রুতির বাইরে গিয়ে ভোট দেয়ার আহবানে প্রায় ৫০ লাখ মানুষ স্বাক্ষর করেছেন।

ad

পাঠকের মতামত