172436

‘চোর হলেও সে আমার স্বামী, বেঈমানি ক্যামনে করি’ (ভিডিও)

নিউজ ডেস্ক: ব্যবসায়ী জেনে মো.নাছিরকে পালিয়ে বিয়ে করেছিলেন রোখসানা আক্তার (২৪)। মেনে নেননি বাবা-মা। বিয়ের পর রোখসানা জানতে পারেন, নাছির ব্যবসায়ী নয়, একজন মোটর সাইকেল চোর। প্রতিবাদ করেও কোন লাভ হয়নি, নিয়মিত মারধরের শিকার হতেন। চোরের ঘর করার খেসারত দিতে গিয়ে রোখসানাকে স্বামীর মজুদ করা অস্ত্রসহ গ্রেফতার হতে হয়েছে।cid-bg120160928133436

মঙ্গলবার (২৭ সেপ্টেম্বর) রাতে নগরীর বাকলিয়া থানার পূর্ব ‍বাকলিয়া আশরাফিয়া হাউজিং সোসাইটির বাসা থেকে অস্ত্র উদ্ধারের পর রোখসানাকে গ্রেফতার করে সিআইডি। তবে নাছিরকে পাওয়া যায়নি।

তাদের বাসা থেকে উদ্ধার করা অস্ত্রশস্ত্রের মধ্যে আছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি একটি ৭ দশমিক ৬৫ বোরের পিস্তল ও সাত রাউন্ড গুলি, একটি ম্যাগজিন, একটি কিরিচ ও চারটি ছোরা, একটি কাটার, হাতুড়ি, প্লাস ও তিনটি রেঞ্জ এবং একটি সিসিটিভি কন্ট্রোলার।

অস্ত্র উদ্ধার অভিযানে থাকা সিআইডির চট্টগ্রাম জোনের এস আই জাহাঙ্গীর আনাম জানান, ১৯ আগস্ট খুলশী আবাসিক এলাকার নাহার বিল্ডিংয়ের সামনে থেকে দুটি মোটর সাইকেল চুরি হয়। এর মধ্যে একটি মোটর সাইকেল সিআইডির কনস্টেবল আজিজুল ইসলামের, আরেকটি পল্লী বিদ্যুৎ অফিসের কর্মকর্তা পলাশ রায়ের। এই ঘটনায় খুলশি থানায় দায়ের হওয়া পৃথক দুটি মামলা তদন্ত শুরু করে সিআইডি।

নাহার বিল্ডিংয়ের সিসিটিভিতে সংরক্ষিত ফুটেজ পর্যালোচনা করে সিআইডি দেখতে পায়, নাছির নিজেই তালা কেটে মোটর সাইকেল চুরি করেছে। এরপর সিআইডি আরও তথ্য পায়, গত আগস্টে নাছির কর্ণফুলী সেতু এলাকায় একজনের পায়ে গুলি করে মোটর সাইকেল নিয়ে পালিয়ে যায়।

নাছিরের ঠিকানা সংগ্রহ করে মঙ্গলবার রাতে সিআইডি টিম তাকে গ্রেফতারে আশরাফিয়া হাউজিং সোসাইটির পাঁচতলা একটি ভবনের নিচতলায় বাসায় অভিযান চালায়।

অভিযানে থাকা সিআইডির আরেক এস আই জাহাঙ্গীর আলম বলেন, বাসায় নাছির ছিল না। আমাদের কাছে তথ্য ছিল স্টিলের আলমিরায় অস্ত্র এবং মোটর সাইকেল চুরির যন্ত্রাংশ আছে। কিন্তু রোখসানা কোনভাবেই আমাদের আলমিরা খুলতে দিচ্ছিল না। আধাঘণ্টা পর বাড়িওয়ালাসহ প্রতিবেশিদের ডেকে এনে তাদের সামনে আমরা আলমিরা খুলে সেখান থেকে পিস্তল-গুলিসহ অস্ত্রশস্ত্র উদ্ধার করি।

জাহাঙ্গীর জানান, নাছিরের বাসায় চারটি সিসি ক্যামেরা লাগানো আছে। বাসায় কন্ট্রোলার এবং সিসিটিভি মনিটরও আছে। আবার কন্ট্রোলারের সঙ্গে সংযোগ আছে নাছিরের মোবাইলের। বাসায় কারা আসছে, ‍কারা যাচ্ছে তা মোবাইলে নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করে নাছির। বাসার দরজায় লাগানো আছে শক্তিশালী দূরবীণ।

সিআইডি কার্যালয়ে কথা হয় রোখসানার সঙ্গে। তিনি জানান, নাছিরের বাড়ি আনোয়ারা উপজেলার বারশত ইউনিয়নের বোয়ালিয়া গ্রামে। আর রোখাসানাদের বাড়ি নগরীর হালিশহর এলাকায়। সাত বছর আগে নাছিরের হাত ধরে পালিয়ে যায় রোখসানা। হালিশহরে নাছিরের একটি মোটর গ্যারেজ আছে বলে জানত রোখসানা।

কান্নাজড়িত কন্ঠে রোখসানা বলেন, পালিয়ে আসার পর জানতে পারি, সে আগেও একটি বিয়ে করেছিল। সেটার সঙ্গে ডিভোর্স হয়েছে। তার এক ছেলে-এক মেয়ে আছে। বিয়ে পরই জানতে পারলাম, আসলে তার কোন গ্যারেজ ছিল না। সে একজন মোটর সাইকেল চোর।

রোখসানার ঘরে এক ছেলে আছে। তিন সন্তানকে লালনপালন করছে রোখসানাই।

অস্ত্রশস্ত্রের বিষয়ে জানত কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, সোমবার অস্ত্র আর গুলি এনে নাছির আলমারিতে রেখেছে। আমি জানতে চাওয়ার পর ঝগড়া শুরু করে সে। তারপর আমাকে সে মারধর করে।

সিআইডি টিমকে আলমারি খুলতে বাধা দিয়েছিল কেন জানতে চাইলে প্রথমে নিরুত্তর থাকেন রোখসানা।পরে কান্নাজড়িত কন্ঠে বলেন, নাছির আমার স্বামী। তার ভাত খাই। বেঈমানি ক্যামনে করি ?

রোখসানার বিরুদ্ধে বাকলিয়া থানায় অস্ত্র আইনে একটি মামলা দায়ের হয়েছে বলে জানিয়েছেন এস আই জাহাঙ্গীর আনাম।

ad

পাঠকের মতামত